বিডিআরের নির্দোষ সদস্যদের চাকরি পুর্নবহালের দাবি

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ১০:০৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৮, ২০২৪

২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের সময় জামালপুরের ৬ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের সদরদপ্তরে কোনো বিশৃঙ্খলা বা বিদ্রোহের ঘটনা না হলেও ৫২ জন সদস্যকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। চাকরির চিত্র বিডিআর এর সদস্যদেরকে চাকরিতে পুনর্বাহালের দাবি জানানো হয়েছে।

সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ওই দাবি জানিয়েছেন চাকরিচ্যূত সাবেক বিডিআর সদস্যরা।

চাকরিচ্যূত সদস্যদের পক্ষে হাবিলদার মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম লিখিত বক্তৃতায় জানান, ২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জামালপুরে ৬ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের সৈনিকরা অধিনায়কের নির্দেশ মোতাবেক অস্ত্রসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ডিউটিতে নিয়োজিত হয় এবং অধিনায়কের আদেশক্রমেই ডিউটি শেষে অস্ত্রাগারে অস্ত্র জমা করে।

জামালপুর ব্যাটালিয়ন সদরে কোনো প্রকার ফায়ারিং বা অনাকাঙ্খিত ঘটনা সংঘটিত হয়নি, যা তৎকালিন জামালপুর জেলার ডিসি ও এসপি মহোদয় পরিদর্শন ও প্রত্যক্ষ করেছেন।

পরদিন ২৭ ফেব্রুয়ারি সেনা সদরে হাজির হওয়ার নির্দেশ আসলে অধিনায়ক ও উপঅধিনায়কের বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সৈনিকদের মাঝে অধিনায়ক ও উপ-অধিনায়কসহ আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তৎকালিন জামালপুর জেলার ডিসি আব্দুল মাবুদ এবং জামালপুর জেলার পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন বক্তব্য দেন।

এছাড়া জামালপুর ব্যাটালিয়নের সৈনিকদের যাতে কোনো প্রকার হয়রানি না হতে হয় সে জন্য অধিনায়ক লে. কর্ণেল মিজানুর রহমান মহোদয় ৬ রাইফেল ব্যাটালিয়ন জামালপুরের কোনো প্রকার বিদ্রোহ বা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়নি মর্মে একটি প্রত্যয়নপত্র দেন, যা সবার মধ্যে বিতরণের জন্য নির্দেশ দেন। ওই ভিডিও সিডি এবং প্রত্যয়নপত্রের ফটোকপি আমাদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালের ১৭ মে মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জামালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক আ. মতিন জামালপুর সদর থানায় একটি মিথ্যা সি.আর মামলা করেন। ১৮ মে এ মামলায় জামালপুর ব্যাটালিয়ন সদর হতে ইউনিফরম পরা অবস্থায় ৪৪জন বিডিআর সদস্যকে গ্রেফতার করে জামালপুর জেলা কারাগারে পাঠান। মামলাটি পরবর্তীতে সরকারি আদেশে প্রত্যাহার করে নতুন করে স্পেশাল কোর্টের আদেশনামা স্পেশাল কোর্টের মামলা নং ০৫/২০১০।

২২ মাস পরে ২০১১ সালের ১৬ মার্চ  স্পেশাল কোর্ট ৫২ বিডিআর সদস্যদের বিভিন্ন মেয়াদের সাজা ও জরিমানা করেন। কিন্তু বিগত ২২ মাসের হাজতবাস কারাদণ্ডের সহিত অর্ন্তভুক্ত করা হয়নি বিধায় এতকিছু প্রমাণাদি থাকা সত্বেও নিজেদেরকে নির্দোষ প্রমাণ করা অসম্ভব ছিল, অথচ রাইফেলস অর্ডার ১৯৭২ মোতাবেক বিচারের পূর্বে কোনো বিডিআর সদস্যকে জেলহাজতে পাঠানোর কোনো বিধান নেই।

তিনি বলেন, বিশেষ আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবী নিয়োগ করা হলেও আদালত চলাকালিন কোনো কথা বলার অনুমতি ছিল না বিধায় প্রহসনের বিচারে নিজেদেরকে নির্দোষ প্রমাণ করা অসম্ভব ছিল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে কোনো আপিলের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে আমাদেরকে বিশেষ আদালত কর্তৃক প্রদত্ত সাজা সম্পূর্ন ভোগ করে মুক্ত হতে হয়েছে। আমাদের পরিবারগুলো অত্যন্ত গরিব যাহা সবারই জানা। চাকরির উপর নির্ভর করে আমাদের সংসার চালাতে হতো। চাকরি হারা হয়ে বর্তমানে আমাদের পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে।

জুলাই-আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়েছে। তাই নির্দলীয় নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমরা ৬ রাইফেলস ব্যাটালিয়ন জামালপুরের চাকরিচ্যুত নিরাপরাধ বিডিআর সদস্যরা নিম্নবর্ণিত দাবিগুলো উপস্থাপন করছি।

বিশেষ আদালত কর্তৃক প্রদত্ত রায় নির্বাহী আদেশে বাতিল, চাকরিচ্যুত ৬ রাইফেল ব্যাটালিয়নের সব সৈনিকদের বেতনভাতা ও পূর্ণ সুযোগ সুবিধাসহ চাকরিতে পূর্ণবহাল, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানা ঢাকায় পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের পূনরায় তদন্তপূর্বক দোষীদের বিচার যারা নির্দোষ তাদের মুক্তি দিয়ে চাকরিতে পূর্নর্বহাল, পিলখানার হত্যাকাণ্ডটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বিধায় তথাকথিত বিডিআর বিদ্রোহ কথাটি বাতিল করা ও বিশেষ আদালত কর্তৃক বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগকারী বিডিআর সদস্যরা যারা বিস্ফোরক মামলায় ১৬ বছর ধরে কারা অন্তরীন আছে, তাদেরকে অনতি বিলম্বে মামলা হতে অব্যাহতি পূর্বক মুক্তি দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান তারা।