এবার আর একতরফা নির্বাচন করতে দেব না: মির্জা ফখরুল

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৮:১১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২২

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ  আরেকটি পাতানো নির্বাচন করে ক্ষমতায় যাওয়ার পাঁয়তারা করছে। সে কারণে আবার তারা বিরোধী দলের ওপর চড়াও হতে শুরু করেছে। গুলি করছে, ভাঙচুর করছে এবং হত্যা করছে মানুষকে। কিন্তু এবার কি তা পারবে? জনগণ কি তাদের এভাবে একা নির্বাচন করতে দেবে? আমরা কি আমার ভাইদের হত্যার প্রতিশোধ নেব না? আমার ভাইদের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে, নির্যাতন করছে- তার প্রতিশোধ নেব না? এবার আর কোনোভাবেই একতরফা নির্বাচন করতে দেব না।

শনিবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

‘সারা দেশে সরকারদলীয় সন্ত্রাসী ও পুলিশের হামলা এবং নারায়ণগঞ্জে যুবদল নেতা শাওনকে পুলিশ কর্তৃক গুলি চালিয়ে পৈশাচিকভাবে হত্যার প্রতিবাদে’ এ সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) বিএনপি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ভোলায় দুজনসহ বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত তিনজনকে তারা হত্যা করেছে। মামলায় আসামির সংখ্যা এখন প্রায় ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এই মামলা দিয়ে, হামলা করে, আহত ও পঙ্গু করে আবারও তারা একই কায়দায় বিরোধী দলকে মাঠ থেকে সরিয়ে দিতে চায়।মাঠের ভেতরে একা থেকেই আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে চায়।এবার আর তা হবে না।

এ সময় বিএনপির আন্দোলন চলমান আছে, চলমান থাকবে জানিয়ে স্লোগান তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এখন এক দফা এক দাবি, ‘হাসিনা তুই কবে যাবি।’

নারায়ণগঞ্জে শাওন হত্যার প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, শুক্রবার নারায়ণগঞ্জে যুবদল নেতা শাওনের বাসায় গিয়েছিলাম। আমরা গিয়ে যখন তাদের ওখানে পৌঁছেছি, তখন দেখি যে তার মা শোকে পাথর হয়ে গেছেন। আমরা গিয়ে যখন তার হাত ধরলাম, তিনি শুধু বললেন, বাবা যে বইলা গেল, আমি ফিরা আইসা ভাত খামু। ফিরা আইসা আর ভাত খাইল না! এর কী জবাব আমরা দেব, বলতে পারি না। এই হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) জবাব দেবেন? সেই যুবক মাকে বলে গেছে এসে ভাত খাব এবং বিএনপির একটা অনুষ্ঠানে গেছে। সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠান। সেখানেই  তাকে হত্যা করা হলো। আজকে শেখ হাসিনাকে অবশ্যই জবাব দিতে হবে, এই যুবকের হত্যার জন্য দায়ী কে?

বন্দুক তাক করা একজন ডিবি পোশাকধারীর ছবি দেখিয়ে মির্জা ফখরুল  বলেন, এই সভা থেকে আমরা দাবি করছি, এই ছবির তদন্ত করা হোক। এই যে রাইফেল দিয়ে গুলি করেছে, তার তদন্ত করে তাকে আইনের আওতায় এনে সাজা দিতে হবে। যদি না দেন আমরা বসে থাকব না। বসে নেই। ভোলায় মামলা করেছি। নারায়ণগঞ্জেও মামলা করব। যতবার আপনারা বেআইনিভাবে আইনভঙ্গ করে আমার ভাইদের ওপর অত্যাচার করবেন ততবার মামলা হবে। ভাবছেন, ক্ষমতায় আছেন- মামলায় কী হবে। মামলায় হয়, খুবই হয়।

সরকারকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এখনো সময় আছে, জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন। সংসদ বাতিল করুন, সংসদ বাতিল করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তার মাধ্যমে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় এ দেশের জনগণ আপনাদের কোনো দিনই ক্ষমা করবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এই সরকার জানে, কোনো পরিস্থিতিতেই তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। সুতরাং হত্যা করো।কিন্তু আমাদের কর্মীরা মার খেতে শিখেছে, রক্ত দিতে শিখেছে। সুতরাং শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। কারণ এই সরকারকে হঠাতে যা করার দরকার আমরা তাই করব। আর আমাদের কর্মসূচি এবং কার্যক্রম আরও জোরদার হবে।

দুপুর ১টা থেকে সমাবেশে যোগ দিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাগম হতে শুরু করেন নেতাকর্মীরা। বিএনপিসহ এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী ব্যানারসহ খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে অংশ নেন। ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চে নেতারা বক্তব্য দেন।

এদিকে বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ এর আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কঠোর নিরাপত্তার বলায় গড়ে তুলতে দেখা গেছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে এবং উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জয়নুল আবেদিন ফারুক, রুহুল কবির রিজভী, আবদুস সালাম আজাদ, শামা ওবায়েদ, মীর সরাফত আলী সপু, নাজিম উদ্দিন আলম, ইশরাক হোসেন, যুবদল নেতা সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের নেত্রী আফরোজা আব্বাস প্রমুখ।