সারিয়াকান্দির চরাঞ্চলে মিষ্টি কুমড়া চাষে কৃষকের স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৩:৩৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৫

আবহাওয়া অনুকূল থাকায় বগুড়ার সারিয়াকান্দির চরাঞ্চলের পতিত জমিতে এই বছর ব্যাপক পরিবেশে মিষ্টি কুমড়ার ফলন হয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, একজন কৃষক ১৫ বিঘা জমিতে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ করে সেই জমিতে চাষ করেছেন মিষ্টি কুমড়া, এবং এখন পর্যন্ত বিক্রি করেছেন প্রায় ৮ লাখ টাকার সেটি। বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় তারা লাভের মুখ দেখছেন।

উপজেলার কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এখানে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়ে ছিল ১০০ হেক্টর জমিতে। এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ১০৫ হেক্টর, যা আগের থেকে অনেকটাই এগিয়ে। সম্প্রতি এসব জমিতে কুরির মাধ্যমে কুমড়া উত্তোলন শুরু হয়েছে। একটি হেক্টরের জমি থেকে বছরভর প্রায় ২০ থেকে ২২ টন কুমড়া সংগ্রহ হচ্ছে।

সারিয়াকান্দি উপজেলার নদীগুলোর মধ্যে যমুনা ও বাঙালি নদী প্রবাহিত হওয়ায় এখানকার চরাঞ্চলগুলো প্রায়ই পতিত বা অনাবাদি থাকত। তবে গত কয়েক বছর ধরেই এ পতিত জমিগুলোতে পানিসেচের মাধ্যমে কৃষকেরা নানা ধরনের ফসল ফলাতে শুরু করেছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো মিষ্টি কুমড়া, যা পতিত জমিতে সহজে বপন এবং ৯০ দিনের মধ্যেই ফলন সংগ্রহ সম্ভব।

এ বছরও কৃষকরা চরাঞ্চলের পতিত জমিতে হার না মানা মনোবল নিয়ে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছেন। আবহাওয়া উপযুক্ত থাকায় এই বছর ব্যাপক ফলন হয়েছে। এখন কৃষকরা তাদের জমি থেকে কুমড়া উত্তোলন শুরু করেছেন, যেখানে একটি কুমড়ার ওজন ২ কেজি থেকে শুরু করে ৮ কেজি পর্যন্ত হয়েছে। বাজারে তারা প্রতি কেজি দিচ্ছেন ২০ টাকা।

পাইকারি স্বার্থে বিভিন্ন প্রান্তে সরাসরি জমি চুক্তি করে কৃষকেরা তাদের চাষের ফলন বিক্রি করছেন, যেমন পঞ্চগড়, রংপুর, দিনাজপুর, ঢাকা এবং অন্যান্য শহরে এই কুমড়াগুলি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

কাজলা ইউনিয়নের কুঁড়িপাড়া চরের কৃষক রঞ্জু মিয়া বলেন, এই বছর তিনি ১৫ বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছেন। খরচ হয়েছে মোট ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তার এই জমির ফল সংগ্রহের পর বিক্রি করে পেয়েছেন প্রায় ৮ লাখ টাকা, যা তার জন্য অনেক স্বস্তির। তিনি জানিয়েছেন, প্রথম কিস্তির ফল বিক্রি শেষে এবার দ্বিতীয় কিস্তির ফল সংগ্রহের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

অন্যদিকে, শাইন মিয়া মাত্র ৩ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন, খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা, এবং বিক্রি করেছেন ১২০ হাজার টাকায়। একইভাবে, জিয়াউল ফকিরও ৩ বিঘা জমিতে আবাদ করে আরেকটি সফলতা অর্জন করেছেন, বিক্রি করেছেন দেড় লাখ টাকার কুমড়া।

রঞ্জু মিয়া বলেন, আগে এই চরাঞ্চলের জমিগুলো পতিতই থাকত। কিন্তু বর্তমানে কৃষকরা পানিসেচের মাধ্যমে ফলনগুলো উন্নত করতে পারছেন, যা তাদের জন্য স্বাবলম্বী হওয়ার মূল কারণ। এ বছর ফলন ভালো হওয়ায় তারা আশানুরূপ লাভবান হচ্ছেন। গত বছরের তুলনায় এবার ফলন কম থাকলেও, মোট ফলনের মান উন্নত হয়েছে এবং তারা ইতোমধ্যে জমি থেকে কুমড়া উত্তোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তার ১৫ বিঘার জমির ফল বিক্রি হয়েছে প্রায় ৮ লাখ টাকায়।

সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী কৃষকেরা চরাঞ্চলের পতিত জমিগুলোতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করে ভালো ফলন পাচ্ছেন। আবহাওয়া উন্নত হওয়ায় এই বছর ব্যাপক ফলন হয়েছে, এবং বাজারের మంచి দামের কারণেও কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে।