শীতের সবজিতে স্বস্তি, তবে অস্থিরতা লক্ষণীয় তেল-ডালের বাজারে Staff Staff Reporter প্রকাশিত: ৩:৩৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৫ রাজধানীর কাঁচাবাজারে সম্প্রতি সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় শীতকালীন সবজির দাম ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। এরই সঙ্গে স্বস্তি ফিরেছে পেঁয়াজের বাজারেও, যেখানে মাত্র দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে নতুন পেঁয়াজের দাম প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। ফলে মধ্য ও নিম্নবিত্ত ক্রেতাদের মাঝে কিছুটা আনন্দ ও স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে সবজি ও পেঁয়াজের দামে কিছুটা কমলেও তেল, ডাল, মাছ, মাংস ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে এখনও অস্থিরতা এবং দাম ওঠানামা অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর রায়সাহেব বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, শীতের সবজির সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় বাজারগুলোতে এখন অনেক ধরণের সবজি উপলব্ধ। নতুন আলু, শিম ও টমেটোর দাম গত সপ্তাহের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। বাজারে দেখা গেছে, নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, আর আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি এখন ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত দুই-তিন সপ্তাহে এর দাম প্রায় অর্ধেক কমে যায়, যা ক্রেতাদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি এনেছে। তবে বাজারে মুরগি, ডিম, মাছ ও অন্যান্য মুদিপণ্য এখনও আগের মতোই স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। মাছ, মাংস, ডিম ও নিত্যপ্রয়োজনীয় মসলার বাজারে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। রুই-কাতলার দাম এখনও ৪০০ টাকা, পাঙাশ ২০০ টাকা, পোলট্রি মুরগির কেজি ১৭০ টাকা, ডিমের দানা ১২০ টাকা, খাসি মাংস ১৩০০ টাকা, আর গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে পাকিস্তানি মুরগির দাম প্রতি কেজি এখন ২৮০ টাকা, যা প্রায় ২০-৩০ টাকা কমে গেছে, এর কারণ হিসেবে সরবরাহের পরিমাণ বৃদ্ধি উল্লেখ করছেন বিক্রেতারা। সবজির মধ্যে টমেটোর দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা কমে ১২০ থেকে ১০০ টাকা হয়েছে। লাউয়ের পিস ৫০ টাকা, শিম ৪০ টাকা, আলু ৩০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, ফুলকপি ৩০ টাকা, আর বাঁধাকপি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রায়সাহেব বাজারের বিক্রেতা জয়নাল জানান, কিছু সবজির দাম গত কয়েক সপ্তাহে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। বাজার পরিদর্শন করে জানা যায়, ঢাকায় এখন শীতের অনুভূতি বেশ অনুভূত হচ্ছে, ফলে ক্রেতাদের উপস্থিতি কিছুটা কম। তবে বিক্রেতারা বলছেন, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতার সংখ্যা বাড়বে। শীতের সবজির সরবরাহ বৃদ্ধি ও দামের কমে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে এসেছেন বেশ কিছু পণ্য। ফলে ক্রেতাদের মধ্যে স্বস্তি দেখা গেছে। প্রতিটি দোকানে এখন নতুন সবজির পসরা সাজানো, দাম ন্যায্য থাকায় ক্রেতারা প্রয়োজন অনুযায়ী কিনে যাচ্ছে। রায়সাহেব বাজারের ক্রেতা ছত্তার আলী বলেন, গত বছর পুরো সময় দাম বেশি ছিল। আজকে তিনি ৬০ টাকার কম কেজির সবজি কিনেছেন, যা অন্য সময় ১২ ও ১৩শ টাকায় কিনতে হয়। তিনি বলছেন, এখন ১০০ টাকার সবজি কিনলে দু-চার দিন চলে যাবে। শীতের শিমের দামও কমে এসেছে। নতুন আসা বিচিওয়ালা শিম এখন ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, অন্যান্য শিমের দাম ৩০-৪০ টাকার মধ্যে। একই সময়ে, দু-তিন সপ্তাহ আগে যেখানে প্রতিকেজি আলু ১০০-১২০ টাকা ছিল, এখন তা ২০-২৫ টাকায় নেমে এসেছে। মূলা কেজিতে ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাকা টমেটোর দাম এখনও কমেনি, তবে এখনো গ্রাহকদের নাগালের বাইরে। প্রতি কেজি পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকার মধ্যে। শাকের দামের ব্যাপারেও পরিবর্তন এসেছে; পালং শাক, লাল শাক ও মূলা শাকের আঁটি এখন ১০-১৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। রায়সাহেব বাজারের নিয়মিত ক্রেতা কাদের বলেন, কয়েকদিন যাবত কিছু পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, আজ আমি প্রয়োজনীয় সব কিছু ১০০০ টাকায় কিনেছি, যা আগে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা লাগত। তবে তিনি আরও মনে করেন, দাম আরও কমা উচিত। অপর একজন ক্রেতা, সজীব, বলেন, বাজারের দাম কিছুটা কমছে না, এটা বোঝা কঠিন। বাজারে অরাজকতার জন্য দাম ঠিকঠাক কমছে না। তবে, সরকার যদি আরও দাম কমানোর জন্য ব্যবস্থা নেয়, তবে সাধারণ জনগণের জন্য অনেক সুবিধা হবে। প্রায় সবজির দামে কিছুটা কমলেও এখনও নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদিপণ্য যেমন বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯৮ টাকা, খোলা তেল ১৯০ টাকা, কৌটাজাত ঘি ১৪৫০-১৫৫০ টাকা, খোলা ঘি ১২৫০ টাকা, চিনি ১১টি টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৩০ টাকা, আটা ১২০ টাকা, তেল ২১৯ টাকা ও অন্যান্য মসলা দামের ব্যাপারে বড় ধরণে প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। খুচরা বাজারে পোলাও চালের দাম ১৫৫ টাকা, সাধারণ চাল ৯০-১৩০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা, মৌমাছি ডাল ১৮০ টাকা, আর অন্যান্য ডাল পড়েছে ৯০-১৭০ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ, শীতের সবজির সরবরাহ বৃদ্ধি ও দাম কমে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে এসেছে অনেক পণ্য। বিশেষ করে পেঁয়াজ ও আলুর দাম দ্রুত হ্রাস পাওয়ায় নিম্নআয়ের মানুষের খরচ কিছুটা কমেছে। তবে ক্রেতাদের মন্তব্য, কেবল কয়েকটি পণ্যের দাম কমলেই পুরো বাজারে স্বস্তি আসবে না। তারা মনে করেন, বাজার মনিটরিং জোরদার করে চাল, ডাল, তেলসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আরও কমানো হলে সব শ্রেণির মানুষের জন্য সুফল বয়ে আনবে। SHARES সারাদেশ বিষয়: