উত্তর কোরিয়ার প্রথম পারমাণবিক সাবমেরিনের ছবি প্রকাশ

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৩:৪৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৬, ২০২৫

উত্তর কোরিয়া প্রথমবারের মতো একটি বড় ও শক্তিশালী পারমাণবিক সাবমেরিনের ছবি প্রকাশ করেছে, যা দেশটির সামরিক ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটা ধাপ। এটি তাদের নতুন অস্ত্র ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশটির সরকারি গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব ছবি দেখানো হয়, যেখানে প্রেসিডেন্ট কিম জং উন এক নজরে এই বিশাল জাহাজটিতে পরিদর্শন করছেন। ছবিগুলোতে দেখা গেছে, গাইডেড-মিসাইল চালিত এই সাবমেরিনটি এখনো পানির নিচে নয়, বরং একটি অভ্যন্তরীণ নির্মাণ কেন্দ্রে রাখা আছে। ধারণা করা হয়, এটি এখনো পানিতে নামানো হয়নি, তবে নির্মাণ কাজটি বেশ দ্রুত এগোচ্ছে। কিম জং উন ২০২১ সালে এই পরিকল্পনাটি ঘোষণা করেন, যার মাধ্যমে উত্তর কোরিয়া নিজের পারমাণবিক চালিত সাবমেরিন তৈরি করতে চায়। বিশ্লেষকরা বলেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় দক্ষিণ কোরিয়া নিজস্ব পারমাণবিক সাবমেরিন নির্মাণে এগিয়ে যাওয়ায় পিয়ংইয়ংয়ের এই প্রকল্পে নতুন গুরুত্ব এসেছে। পারমাণবিক চালিত সাবমেরিনের অন্য ধরনের সুবিধা হলো, এরা দীর্ঘ সময় পানির নিচে থাকতে পারে কারণ তাদের জন্য রসদ সংগ্রহের প্রক্রিয়া খুবই কম। একটির বেশি এই ধরনের জাহাজের অস্তিত্ব থাকায়, এগুলো সাধারণত দ্রুতগামী এবং খুবই নীরব, যা সামরিক দৃষ্টিকোণから বেশ সুবিধাজনক। বর্তমানে এই প্রযুক্তির অধিকারী চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রিটেন ও ভারত। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ছবিগুলোর মাধ্যমে বোঝা গেছে, নির্মাণ কাজ এখন অনেক অগ্রগতি লাভ করেছে। প্রথম এই সাবমেরিনের অস্তিত্বের খবর পাওয়া গিয়েছিল এই বছরের মার্চে। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, এই জাহাজের এটি ডিসপ্লেসমেন্ট ৮,৭০০ টন, যা বেশিরভাগ যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী পরিচালিত ভার্জিনিয়া-শ্রেণির পারমাণবিক আক্রমণমূলক সাবমেরিনের সমান। কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) জানিয়েছে, কিম জং উন আবারও এই ধরনের জাহাজের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছিলেন, ‘পিয়ংইয়ংয়ের প্রতিরক্ষা নীতি সম্পূর্ণরূপে সর্বশক্তিশালী আক্রমণাত্মক ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে তৈরি। আমরা নিজেদের বাহিনীকে অত্যাধুনিক ও শক্তিশালী করে তুলতে চাই যাতে দেশের নিরাপত্তা সুদৃঢ় হয়।’ এছাড়া, তিনি আরও বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে এই ধরনের প্রযুক্তি উন্নয়ন আমাদের জাতীয় নিরাপত্তাকে আরও শক্তিশালী করবে।’ তবে অন্যদিকে, সিউলের ইহওয়া উইমেন্স ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের একজন অধ্যাপক বলেন, ‘কোরিয়ার আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য মূল দায়িত্ব অবশ্যই পিয়ংইয়ংয়েরই। কারণ, এই অস্ত্রের সংখ্যা বাড়ছে, যা অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘কিমের এ সিদ্ধান্ত সত্যিই সমালোচনার যোগ্য, কারণ এই প্রতিযোগিতায় সব পক্ষের জন্য বিপদ বরাবরই বাড়ছে।’ জানুয়ারি ২০২১ সালে কঠোর পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে কিম জং উন দেশের সামরিক শক্তি ব্যাপকভাবে বাড়ানোর জন্য কাজ করছেন। এর মধ্যে রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে পৌঁছানোর সক্ষমতা সম্পন্ন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকল, যেগুলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে হামলা করতে পারে, এবং নৌবাহিনীর জন্য নতুন দুটি গাইডেড-মিসাইল ডেস্ট্রয়ার। এই বছর দ্বিতীয় ডেস্ট্রয়ারটি উদ্বোধনের সময় একটি দুর্ঘটনা ঘটে, যেখানে জাহাজটি উল্টে যায়, তবে পরে সেটি আবার ভাসানো হয় এবং মেরামত সম্পন্ন হয়। কিম জং উন বলেন, ‘নতুন এই পারমাণবিক সাবমেরিন এবং ডেস্ট্রয়ারের নির্মাণ আমাদের নৌবাহের যুদ্ধক্ষমতা জোরদার করবে এবং সামরিক শক্তিকে আরও সুসংগঠিত করবে। আসন্ন দিনগুলিতে এই অস্ত্রগুলো আমাদের প্রতিরক্ষা ও আক্রমণাত্মক সক্ষমতা বাড়াবে, যা দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।