বিশ্বব্যাংকের ১৫০.৭৫ মিলিয়ন ডলার ব্যক্তিমুখী কর্মসংস্থান প্রজেক্টের জন্য

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৩:৩৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৫, ২০২৫

স্বল্প আয়ের তরুণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারণে বাংলাদেশকে ১৫০.৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এই অর্থের মাধ্যমে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে নারী এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে।

রিকভারি অ্যান্ড অ্যাডভান্সমেন্ট অব ইনফরমাল সেক্টর এমপ্লয়মেন্ট (রেইজ) প্রকল্পের আওতায় এই অতিরিক্ত অর্থায়নের মাধ্যমে সারাদেশে প্রায় ১৭৬,০০০ যুবকের জন্য কর্মসংস্থান ও আয় বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হবে। এর আগে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২৩০,০০০ জন উপকার পেয়েছেন।

বিশ্বব্যাংকের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এই প্রকল্পে অংশগ্রহণকারীরা দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, শিক্ষানবিশতা, উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও ক্ষুদ্রঋণের সুযোগসহ একত্রিত সেবা প্যাকেজ পাবেন। এর ফলে যুবক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ব্যবসা চালানোর পথে আসা বাধাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

প্রকল্পের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে, যার মধ্যে মানসম্পন্ন শিশুর যত্ন সেবার অন্তর্ভুক্তি রয়েছে। পাশাপাশি জলবায়ু-সহনশীল জীবনচর্চার জন্য nuevas প্রকল্প চালু হবে, যাতে জনগণ জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবিলা করতে পারে।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটান বিভাগীয় প্রধান গেইল মার্টিন উল্লেখ করেন, ‘একটি ভালো চাকরি একটি জীবন, একটি পরিবার এবং সমাজকে বদলে দিতে পারে। কিন্তু প্রতিদিন হাজার হাজার তরুণ কাজের সুযোগ না পেয়ে অক্ষম থাকেন। দেশীয় অক্ষমতা, দক্ষতার ঘাটতি ও পেশাগত অমিলের কারণে অনেক সময়ই তারা পিছিয়ে পড়েন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই অতিরিক্ত অর্থায়ন অর্ধেক বা তার কম আয়ের পরিবারসহ নারীরা, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর জন্য বাজারভিত্তিক দক্ষতা, সম্পদ ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করবে, যার ফলে তারা ভালো কর্মসংস্থান ও জীবিকা অর্জন করতে পারবেন।’

এছাড়া এই অর্থায়নের মাধ্যমে প্রকল্পের কার্যক্রম শহর থেকে গ্রামীণ এলাকায়ও বিস্তৃত হবে, যাতে দেশের প্রতিটি প্রান্তের যুবক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার জন্য সহায়তা পৌঁছে যায়।

নারীদের জন্য মানসম্পন্ন ও সাশ্রয়ী ঘরভিত্তিক শিশুর যত্ন সেবা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। নারীদের এই সেবা পেতে প্রশিক্ষণ ও প্রারম্ভিক অনুদান দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে নারীর কর্মক্ষমতা ও শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ বাড়বে, পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে যত্নশীল খাতে। শিশুর স্বাস্থ্য ও বিকাশেও এটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

নারীদের আত্মবিশ্বাস ও ক্ষমতায়ন বাড়াতে জীবনদক্ষতা প্রশিক্ষণও চালু হবে। চাকরি সংক্রান্ত কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে চাকরি মেলা, নিয়োগদাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং বিপণন ও চুক্তি বিষয়ক সহায়তা।

বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র সামাজিক সুরক্ষা অর্থনীতিবিদ ও প্রকল্পের টিম লিডার আনিকা রহমান বলেন, ‘রেইজ প্রকল্প প্রমাণ করেছে যে, লক্ষ্যভিত্তিক সহায়তা তরুণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জীবনে বাস্তব পরিবর্তন আনতে পারে।’

তিনি আরও জোড় দিয়ে বলেন, ‘নতুন এই অর্থায়ন কার্যকর উদ্যোগগুলোর বিস্তৃতি, ক্ষুদ্রঋণের সুযোগ বৃদ্ধি এবং মানসম্পন্ন শিশুর যত্নের মতো উদ্ভাবনী প্রকল্প চালু করবে, যাতে আরও অনেক তরুণ ও নারীরা তাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এক বেশীবোধের ভবিষ্যৎ গড়তে পারেন।’

প্রকল্পটি ইতোমধ্যেই উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে। প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া শিক্ষানবিশদের ৮০ শতাংশের বেশি তিন মাসের মধ্যেই কর্মসংস্থান পেয়েছেন। তরুণ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের আয়ের বৃদ্ধি এবং ব্যবসায়িক সাফল্যও বেশ উল্লেখযোগ্য।

২০২১ সালে যাত্রা শুরু করার পরে, রেইজ প্রকল্প কোভিড-১৯-এর প্রভাবের মাঝেও ৫০,০০০-এর বেশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার জন্য পুনরুদ্ধার ঋণ ও প্রশিক্ষণসহ নানা সহায়তা প্রদান করেছে। পাশাপাশি ২,৫০,০০০-এর বেশি প্রবাসী প্রত্যাবর্তনকারীর পুনঃএকত্রীকরণ ও ১,২২,০০০-এর বেশি উপকারভোগীকে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিমূলক সেবা দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ নারী রয়েছেন।

এই অতিরিক্ত অর্থায়নের ফলে, রেইজ প্রকল্পের মোট সহায়তার পরিমাণ দাঁড়ালো ৩৫০.৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।