বার্লিনে ট্রাম্পের দাবি, ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধানে অগ্রগতি, খুব শিগগির চুক্তি হতে পারে

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৩:৪৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৭, ২০২৫

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য সম্ভাব্য চুক্তি এখন আগের থেকে অনেক বেশি কাছাকাছি। তিনি এই মন্তব্য করেন সোমবার (১৫ ডিসেম্বর), জার্মানির বার্লিনে মার্কিন ও ইউরোপীয় নেতাদের উচ্চ পর্যায়ের আলোচনার পরে। ট্রাম্পের বিশ্বাস, আলোচনায় বেশ কিছু অগ্রগতি হয়েছে এবং এখন পরিস্থিতি চুক্তির খুব কাছাকাছি। তবে কিছু কর্মকর্তার মতে, আঞ্চলিক ইস্যুতে এখনও কিছু গুরুত্বপূর্ণ মতপার্থক্য রয়ে গেছে।

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ট্রাম্প বলেছিলেন, সোমবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের সময় তিনি জেলেনস্কি, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্যসহ ন্যাটো নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ ও ফলপ্রসূ আলোচনা করেছেন। ট্রাম্পের ভাষ্য, ইউরোপীয় নেতারা এখন তার মত সমর্থন দিয়ে দিয়েছেন এবং তারা যুদ্ধের অবসান করতে চান।

অপরদিকে, তিনি আরও জানান, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও তার একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। ট্রাম্পের মতে, এখন চুক্তির পথে অগ্রগতি অনেক বেশি হয়েছে এবং একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তিনি বলেছিলেন, দেখা যাবে কী করা যায়।

এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছিলেন, মার্কিন ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা কঠিন হলেও লাভজনক। বার্লিনে দুই দিন ধরে চলা এই বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। এই আলোচনায় অংশ নেন ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার, জেলেনস্কি সহ অন্যান্য ইউরোপীয় নেতারা।

আলোচনার মূল লক্ষ্য ছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এক নজিরবিহীন এই সংঘাতের সমাধানে সামরিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া। বিশেষ করে, কিয়েভের উপর রাশিয়ার চাপ কমানোর জন্য পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে নানা প্রস্তাব আসতে থাকে।

শেষে, এক যৌথ বিবৃতি অনুযায়ী, ইউরোপীয় নেতারা প্রতিশ্রুতি দেন যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একযোগে ইউক্রেনের জন্য ‘শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা’ দেবেন। এর মধ্যে রয়েছে এমন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যেখানে একটি বহুজাতিক বাহিনী ইউক্রেনের ভেতরে কাজ করবে, ইউক্রেনীয় সেনা পুনর্গঠন, আকাশসীমা সুরক্ষা ও নিরাপদ জাহাজ চলাচলের ব্যবস্থা থাকবে।ইউক্রেনীয় বাহিনীর জনবল ৮ লাখে রাখা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আরেকটি মহৎ প্রস্তাব হলো, এই নিরাপত্তা নিশ্চয়তার জন্য ন্যাটোর অঙ্গীকারের সমতুল্য শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের কাছে দুই মার্কিন কর্মকর্তার বক্তব্য অনুযায়ী, এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ন্যাটো অঙ্গীকারের মতোই শক্তিশালী।

প্রথমে ইউক্রেন ধারনা দিয়েছিল, পশ্চিমাদের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিনিময়ে তারা ন্যাটোতে যোগদান থেকে বিরত থাকতে পারে। তবে, জেলেনস্কি জানান, কোনও চুক্তির আগে, কিয়েভে নিশ্চিত থাকতে হবে যে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে স্পষ্ট ও কার্যকর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, যুদ্ধবিরতি মানেই হতে হবে কার্যকর এবং স্বচ্ছভাবে মান্য।

উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়া বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ ও সংস্থার বহু প্রতিশ্রুতিই শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার আক্রমণে ব্যর্থ হয়েছে।

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস জানান, বার্লিনের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র উল্লেখযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, জেলেনস্কির সঙ্গেআলোচনাসভায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর।

অবশেষে, তিনি স্পষ্ট করেছেন যে আঞ্চলিক ইস্যু এখনো শান্তি প্রক্রিয়ার কেন্দ্রীয় বিষয়। তার মতে, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্পূর্ণ অধিকার সবসময়ই কিয়েভের, এবং এর জন্য কোন শর্ত বা ব্যতিক্রম মানা হবে না।