বিশ্বব্যাপী অস্ত্র ব্যবসায় মুনাফা ৬৭৯ বিলিয়ন ডলার

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৩:৪৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩, ২০২৫

বৈশ্বিক উত্তেজনা, আঞ্চলিক সংঘাত এবং সামরিক ব্যয়ের ধারাবাহিক বৃদ্ধি পরিস্থিতিতে বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো ব্যাপক পরিমাণে লাভ করছে। ২০২৪ সালে, শীর্ষ ১০০ অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের আয় রেকর্ড করে ৬৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই তথ্য প্রকাশ করেছে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই)।

তালিকা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গাজা ও ইউক্রেনের যুদ্ধসহ বিশ্বব্যাপী সংঘাত ও আঞ্চলিক সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বৃদ্ধির কারণে অস্ত্র বিক্রি আগের চেয়ে ৫.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মূলত, মার্কিন ও ইউরোপনির্ভর কোম্পানিগুলোর বিক্রিতে বড় ধরনের বৃদ্ধি দেখা গেছে। আর এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলে যাবতীয় বিক্রিতে কিছুটা কমতি এসেছে, প্রধান কারণ চীনা অস্ত্রের বিক্রির সংকট।

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ৩৯ কোম্পানির মধ্যে ৩০টির বিক্রির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে লকহিড মার্টিন, নর্থরপ গ্রুম্যান ও জেনারেল ডায়নামিকস। ২০২৪ সালে মার্কিন কোম্পানিগুলোর মোট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৩.৮ শতাংশ বেশি। নতুনভাবে শীর্ষ অস্ত্র প্রস্তুতকারকদের তালিকায় স্থান পেয়েছে স্পেসএক্স। বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্কের সংস্থার সামরিক হার বিক্রি দ্বিগুণ বেড়ে ১.৮ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

ইউরোপে, রাশিয়া ছাড়া ২৬টি কোম্পানি এই তালিকায় স্থান পেয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২৩টির বিক্রিতে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। ইউরোপের মোট অস্ত্র বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি। চেক প্রজাতন্ত্রের ইউক্রেনের জন্য নতুন অটিলারি শেল উত্পাদন ও বিক্রি ১৯৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার দাম ৩.৬ বিলিয়ন ডলার। ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান জেএসসি ইউক্রেনিয়ান ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রির বিক্রির পরিমাণ ৪১ শতাংশ বাড়ে, যা ৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।

রাশিয়ায় শীর্ষ অস্ত্র বিক্রেতা হিসেবে রয়েছে রোস্তেক ও ইউনাইটেড শিপবিল্ডিং করপোরেশন, যারা মোট ৩১.২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে। এই পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেড়েছে।

গাজা সংকটের মাঝেই, ইসরায়েলি অস্ত্র কোম্পানিগুলোর বিক্রিও রেকর্ডের কাছাকাছি রয়েছে। ২০২৪ সালে তাদের বিক্রি হয়েছে ৩১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। বিশেষ করে ইসরায়েলি ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ও কন্ট্রোল প্রযুক্তির চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ইসরায়েলের বিভিন্ন হামলার পর আরও ত্বরিত হয়ে উঠেছে।

অপরদিকে, এশিয়া–ওশেনিয়া অঞ্চলের মোট অস্ত্র বিক্রি কিছুটা কমে গেছে। এর কারিগর হচ্ছে চীনা কোম্পানিগুলোর বিক্রির সংকোচ, যেখানে তাদের সম্মিলিত বিক্রয় ১০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং নোরিনকো কোম্পানির বিক্রিও ৩১ শতাংশ কমেছে। এর বড় কারণ, চীনের দুর্নীতির অভিযোগ এবং সামরিক আধুনিকীকরণে অনিশ্চয়তা।

আরও দেখা গেছে, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর অস্ত্র ব্যবসা বেড়েছে। জাপানের ৫ কোম্পানির বিক্রি ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৩.৩ বিলিয়ন ডলার, আর দক্ষিণ কোরিয়ার ৪ কোম্পানির বিক্রি ৩১ শতাংশ বেড়ে ১৪.১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়ার হানওয়াহ গ্রুপ একাই ৪২ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে।

তুরস্কের শীর্ষ ৫টি কোম্পানির মোট আয় সাধারণত ১০.১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পাশাপাশি, ইউকে, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, ভারত, তাইওয়ান, নরওয়ে, কানাডা, স্পেন, পোল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার কোম্পানিগুলোও তালিকায় রয়েছে। সব মিলিয়ে, অস্ত্র বাণিজ্যে এক নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে এই শিল্পের অগ্রগতিতে।