শীতের আগে গোমতী নদীতে পানির সংকটের কারণে কৃষির অনিশ্চয়তা

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৩:৪০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২, ২০২৫

শীত মৌসুম শুরুর আগে থেকেই কুমিল্লার গোমতী নদীর পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে যেতে শুরু করেছে। এর ফলে কৃষকেরা মুখোমুখি হচ্ছেন বড় ধরনের ঝুঁকির। হাজারো কৃষকরা এই নদীর দুই পাড় ও চরাঞ্চলের উর্বর জমিতে শীতকালীন সবজি, ভুট্টা, আখ ও ধানের চাষ করে আসছেন, কিন্তু পর্যাপ্ত সেচের জোগান না থাকায় তাদের জন্য সমস্যা দেখা দিয়েছে।

গোমতীর দুই পাড়ের চরজমিগুলো দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে, স্থানীয়ভাবে বালুচর হিসেবে একসময় পরিচিত এই জমিগুলো এখন নিঃসঙ্গ শূন্যতার দৃষ্টান্ত। যেখানে শীতের সময় কৃষকের মুখে হাসি ফুটতো, সেই জমিগুলিই এখন উদ্বিগ্নতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষকেরা মনে করছেন, স্বাভাবিকভাবে প্রতি বছর আবারও পানির স্তর কমতে থাকলেও এবার এটি অস্বাভাবিকভাবেই আগেভাগে নিচে নেমে যাচ্ছে। যদি এভাবে পানি শুকিয়ে যায়, তাহলে সেচযন্ত্র চালানো অসম্ভব হয়ে পড়বে, আর এর ফলে বহু আবাদি জমি অব্যবহার্য হয়ে পড়বে।

সত্যতা যাচাই করতে গেলে দেখা যায়, চরাঞ্চলের জমিতে এ বছর ফলন বেশ ভালো হলেও নদীর পানির এই সংকট কৃষকদের জন্য নতুন অভিশাপের মতো। বিগত বছরগুলোতে এই সময় গোমতীতে পানি ছিলো প্রচুর, কিন্তু এখন নদীর বুক খালিপূর্ণ খরা ও চরভূমির উত্থানের কারণে পানির উপস্থিতি কমে গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের উজান বাঁধ ও স্লুইচগেট বন্ধ করে দেয়ার কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, অনিয়মিত বৃষ্টি এবং নদী প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়া এ সংকটের মূল কারণ। নদীর নাব্যতা কমে গেলে দীর্ঘ সময় নদী পানি ধারণে অক্ষম হয়ে পড়ে, ফলে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি ক্ষেত্রে বড় ধরনের উদ্বেগ বেড়েছে।

গোমতী নদীর উপর অনেকটাই নির্ভর করে কুমিল্লার কৃষি ও সেচব্যবস্থা, তাই পানির এই সংকট ফলন কমিয়ে দিতে পারে এবং রবি মৌসুমের পুরো ফসলের চক্রে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। প্রয়োজন হলে বিকল্প সেচের ব্যবস্থা নিতে পারলেও তার জন্য সরকারের দিকনির্দেশনা জরুরি।

স্থানীয় কৃষকদের কথা জানার জন্য যখন কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার আমতলী এলাকার কৃষক মো. শাহআলমের কাছে যাই, তিনি বলেন, আমি দুইশত শতক জমিতে সবজি চাষ করছি। কিন্তু এবার পানি আগেভাগেই অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। আমতলী চরসহ অন্যান্য কয়েকটি জমিতেও এই পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যেখানে নদীর পানি না থাকলে চাষ সম্ভব নয়। তিনি সরকারের হস্তক্ষেপের আশায় আছেন।

অন্যদিকে, বুড়িচং উপজেলার বাবুবাজার শিমাইশখাড়া গ্রামের কৃষক মফিজুল ইসলাম বলেন, তিনি চরে টমেটো ও ফুলকপি চাষ করছেন। পানির অভাবে এসব ফসলের ভবিষ্যত ক্ষুণ্ণ হবে বলে আশঙ্কা করছেন।

সুবর্ণপুর এলাকার কৃষক আবু সাঈদ জানান, গোমতীর পানির بغیر শাকসবজি ও অন্যান্য ফসলের উৎপাদন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, নদীতে পানি রাখার সরকারের উদ্যোগ না থাকলে কৃষির আভিধানিক ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে ধাবিত হবে। তিনি আরও বলেন, ভারতে বর্ষায় পানি ছেড়ে দেয়, অথচ শুকনো মৌসুমে আটকে রাখে—এটি ন্যায়সঙ্গত নয়।

পাঁচথুবী ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হাসান বলেন, এ বছর নদীতে পানি অনেক কম। তাই গোমতী নদীর পানি ছাড়া শীতে কৃষি কাজ চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, পেরিয়ে গেছে ৯৭ কিলোমিটার পথ, যেখানে গোমতী নদী কুমিল্লার সাতটি উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেঘনায় মিশছে। তিনি বলেন, শীতকালে নদীর পানির পরিমাণ স্বাভাবিক হতে পারে, কিন্তু এ বার পরিস্থিতি বেশি মারাত্মক। বিকল্প হিসেবে টিউবওয়েল থাকলেও ভারতের পানি নিশ্চয়তা বিষয়ে আলোচনা অপরিহার্য।

কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, ডাম্বুর বাঁধ বন্ধ থাকার কারণে পানির স্তর কমে গেছে। অনেক কৃষক নিজের উদ্যোগে সেচের ব্যবস্থা নিলেও, সরকারি পর্যায়ে বিকল্প পদ্ধতির জন্য পরামর্শ দেওয়া দরকার।

শীতের আগে গোমতী নদীর এই পানি সংকটের কারণে কুমিল্লার কৃষির ভবিষ্যৎ গভীর অনিশ্চয়তার মুখোমুখি। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে সেচের অভাবে ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা স্পষ্ট, যা দেশের অর্থনীতির জন্য দুর্ভাবনার কারণ তৈরি করবে। কৃষি, পরিবেশ ও পানি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি দ্রুত হয়নি এসব সমস্যার সমাধান, তবে ভবিষ্যতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে।