দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় বন্যা ও ভূমিধসে মৃত্যু ৫০০ ছাড়াল

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৩:৪৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১, ২০২৫

মুষলধারে বর্ষণের কারণে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার তিনটি দেশে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে কমপক্ষে ৫০০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে লাখ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে রীতিমতো বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছেন। দেশের জরুরি পরিষেবা কর্মীরা ত্রাণ পৌঁছে দিতে তৎপর হলেও বিভিন্ন এলাকাতে পৌঁছানো এখনো অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

বিশেষ করে মালাক্কা প্রণালীতে সৃষ্টি হওয়া বিরল এক ঝড়ের কারণে সপ্তাহের পর সপ্তাহ বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার প্রভাবে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এ পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইন্দোনেশিয়ায় ৪৩৫ জন, থাইল্যান্ডে ১৭০ জন এবং মালয়েশিয়ায় তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

বন্যা পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এই দুর্যোগের কারণে দক্ষিণ থাইল্যান্ডের প্রায় ৩০ লাখ মানুষ এবং পশ্চিম ইন্দোনেশিয়ার ১১ লাখের বেশি বাসিন্দা চরম বিপদে পড়েছেন। ইন্দোনেশিয়াতে, ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের জন্য ত্রাণ ও উদ্ধারকার্য পরিচালনায় হেলিকপ্টার ব্যবহার হচ্ছে কারণ পশ্চিমের সুমাত্রা দ্বীপে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বৃষ্টির কারণে সৃষ্টি হওয়া প্লাবন ও ভূমিধসের কারণে সুমাত্রার তিনটি দ্বীপের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বিশাল এলাকাজুড়ে বন্যার পানিতে ডুবে আছে শত শত ঘরবাড়ি। পশ্চিম সুমাত্রার পালেমবায়ান শহর থেকে রয়টার্সের আলোকচিত্রী দেখেছেন, হেলিকপ্টার থেকে বিশাল এলাকা ও ঘরবাড়ি জলযাত্রার মধ্যে পড়ে রয়েছে। এই দৃশ্যের পাশাপাশি স্থানীয়রা খাবারের জন্য আশায় বসে আছে।

অপর দিকে, বেশ কিছু এলাকা থেকে ত্রাণ সংগ্রহে মরিয়া হয়ে লুটপাটের খবরও পাওয়া গেছে। পশ্চিম সুমাত্রার পাদাং শহরে এক স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, ‘পানি হঠাৎ করে বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়লে আমরা ভয় পেয়ে চলে গিয়েছিলাম। শুক্রবার ফিরে দেখলাম, আমাদের ঘরদোর সব ধ্বংস হয়ে গেছে।’ এখন তিনি ছোট একটি তাঁবুতে পরিবারের অন্য ৮ সদস্যের সঙ্গে থাকছেন।

উদ্ধারকারীরা জানাচ্ছেন, এখনও দেশটিতে প্রায় ২৮৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন এবং ২ লাখ ১৩ হাজারের বেশি মানুষ ঘর-বাড়ি ছেড়ে নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় কেন্দ্র খুঁজে নিয়েছেন।

অন্যদিকে, থাইল্যান্ডে বন্যার কারণে ১৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন ১০২ জন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সংখলা প্রদেশে, যেখানে এক দিনে রেকর্ড ৩৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়, যা গত ৩০০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। পড়শি মালয়েশিয়ায়, এখনো প্রায় ২৪,৫০০ মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানাচ্ছে, গত সপ্তাহে ব্যাপক বৃষ্টি ও ঝড়ের পাথরোড় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়।

এদিকে, মালয়েশিয়া জানিয়েছে, গ্রীষ্মকালীন ঝড় ও ভারী বৃষ্টির কারণে তারা অনেকতম মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে। সদ্যই ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম সুমাত্রায় থাকা বাংলাদেশিদের জন্য একটি সতর্কবার্তা জারি করেছে দেশটির দুর্যোগ কর্তৃপক্ষ, যেখানে এক মালয়েশীয় নাগরিক ভূমিধসে নিখোঁজ।

শ্রীলঙ্কায়, ভয়াবহ বন্যার কারণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৫৯ জনে পৌঁছেছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও দুই শতাধিক মানুষ। দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র বলছে, এই বিপর্যয়ের কারণে এক লাখ ৮ হাজারের বেশি মানুষ সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।

বিপর্যয় আরও ভয়াবহ রূপ নেয়া এই বন্যায় বিভিন্ন অঞ্চলে দুই লাখের বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে তিরিশ হাজারের বেশি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ সংযোগ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ায় এক তৃতীয়াংশ এলাকা এখন বিদ্যুৎবিহীন।

কেলানি নদীর পানি স্তর দ্রুত rising করায় বেশ কিছু এলাকা খালি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে বিপর্যস্ত হলো কেন্দ্রীয় জেলা কান্দি ও বাদুল্লা। এখানকার অনেক গ্রাম এখনো বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।

বাদুল্লার মাসপান্না গ্রামের বাসিন্দা সামান কুমারা বলেন, ‘আমাদের গ্রামে দুজন মারা গেছে। অন্যরা আশ্রয় নিয়েছে মন্দিরে বা সেখানে যেখানে অক্ষত রয়েছে। আমরা কোথাও যেতে পারছি না, কেউ আসতেও পারছে না। পাহাড়ধসের কারণে সব রাস্তা বন্ধ। খাবার আর পানি শেষ হয়ে যাচ্ছে।’

অন্যদিকে, উত্তর-মধ্যাঞ্চলীয় কুরুণাগালা জেলায় এক বৃদ্ধাশ্রম পানিতে ভেড়ানোর কারণে কমপক্ষে ১১ জন মারা গেছেন। অন্য এক খবরে জানানো হয়, আনুরাধাপুরায় একটি বাসে পানি ঢুকে যায় এবং সেখানে থাকা ৬৪ জন যাত্রীকে উদ্ধার করে নৌবাহিনী।

সরকার এই দুর্যোগে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহায়তা দাবি করেছে। দেশের বাইরে থাকা শ্রীলঙ্কানরা অর্থ সহায়তা পাঠানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এই ভয়াবহ আবহাওয়ার ঘটনা খুবই বিরল ও দুঃখজনক, কারণ এটি ২০০৩ সালের জুনে আন্তর্জাতিক মহলে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।