শিল্প খাতে জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ বড় চ্যালেঞ্জ: ডিসিসিআই সভাপতির মত Staff Staff Reporter প্রকাশিত: ৩:৩৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১, ২০২৫ ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ গতকাল শনিবার বলেছেন, জ্বালানি নিরাপত্তা শিল্প খাতের দীর্ঘমেয়াদী এবং টেকসই উন্নয়নের অন্যতম মূল সূচক। তিনি তুলে ধরেন, বাংলাদেশের শিল্পোৎপাদন ও বিনিয়োগের অগ্রগতি অর্জনে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা এখন এক বড় চ্যালেঞ্জে রূপ নিয়েছে, যা উৎপাদন, বিনিয়োগ এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। তাসকীন আহমেদ আরও উল্লেখ করেন, দেশের শিল্প ও অর্থনীতিকে স্থায়ীভাবে টিকিয়ে রাখতে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর আমাদের নির্ভরতা কমিয়ে আনতে হবে। পরিবর্তে, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো, টেকসই জ্বালানি কাঠামো গড়ে তোলা এবং অপচয় রোধ করা অপরিহার্য। তিনি বলছেন, জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা শিল্পে শুধু একটি নীতিগত অগ্রাধিকার নয়, এটি টেকসই শিল্পায়নের জন্য একটি অপরিহার্য শর্ত। ঢাকার মতিঝিলে ডিসিসিআই মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের শিল্প খাতে জ্বালানি সক্ষমতা নীতিমালা, টেকসই উন্নয়নের পথ-নির্দেশনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ২০৩০ সালের পর দেশীয় গ্যাসের মজুত হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রথমত, অফশোর-অনশোর এলাকায় গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম খুবই কম, যার ফলে আমরা এখন অপ্রতুল স্বদেশি গ্যাস ব্যবহার করতে পারছি না এবং আমদানির ওপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, জ্বালানি খাতে সরকারের ভর্তুকি অব্যাহত রয়েছে, কারণ এই Sectorটি দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে জ্বালানির দক্ষতা মাত্র ৩০ শতাংশের কাছাকাছি, যা আরও উন্নয়ন করতে পারলে বিদ্যুৎ ঘাটতি কমে আসবে। তিনি পরামর্শ দেন, তৈরি পোশাক খাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার আরও বাড়ানো হলে দ্রুত পরিবর্তন আসবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেম তারেক নির্বাহী ড. সেলিম রায়হান জানান, বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে মাস্টারপ্ল্যান থাকলেও সহায়ক নীতিমালার অভাবে শিল্প sectors-এ সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তিনি বলেন, তৈরি পোশাক, সিমেন্ট, স্টিল এবং বাণিজ্যিক খাতের উদ্যোক্তা ও সংশ্লিষ্ট সরকারের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ফোকাস গ্রুপ আলোচনায় জ্বালানি সংক্রান্ত নানা বিষয়ে মতামত নেওয়া হয়েছে। তারা জোর দিয়েছেন, এনার্জি অডিট, গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ বৃদ্ধি, জ্বালানি সাশ্রয়, গ্রিড আধুনিকীকরণ, অর্থায়ন ও প্রণোদনাসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণের ওপর। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার রিসার্চ কাউন্সিলের (বিইপিআরসি) ড. মো. রফিকুল ইসলাম, পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসির ড. এম. রেজওয়ান খান, আর্মি গ্রুপের চেয়ারম্যান মোনায়ার হোসেন, বাংলাদেশ সিমেন্ট মেনুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আমিরুল হক, বাংলাদেশ সাস্টেইনেবল ও রিনিউএবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আল মাহমুদ, এবং ইঞ্জিনিয়ার মো. সিরাজুল মাওলা। বক্তারা জাতীয় নিরাপত্তা ও খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি জ্বালানি নিরাপত্তা কত গুরুত্বপূর্ণ, তা উল্লেখ করেন এবং এই খাতে সরকারের সহযোগিতা ও সদিচ্ছার ওপর গুরুত্ব দেন। তারা আরও বলেন, বিদ্যমান শুল্ক কাঠামো বদলানো না হলে সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। বিশেষ করে, পিক ও অফ-পিক সময়ে বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক। এলপিজির ক্ষেত্রে তারা বলেন, এই খাতে শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুললে শিল্পের জ্বালানি সমস্যা অনেকটাই দূর হবে। আরও বলেন, দেশের প্রায় ২,৩০০টি এলপিজি অটোগ্যাস ফিলিং স্টেশন রয়েছে, যেখানে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার আরও প্রসারিত করলে প্রায় ৭০০-৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব, এর জন্য এক কার্যকর নীতিমালা অপরিহার্য। সবশেষে বক্তারা বলেন, যথাযথ নীতিনির্ধারণ, সুষ্ঠু সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা সম্ভব। SHARES অর্থনীতি বিষয়: