গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতায় এক লাখের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত Staff Staff Reporter প্রকাশিত: ৩:৪৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৬, ২০২৫ ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বর্বর ও দমনমূলক হামলা চলার দুই বছর পেরিয়ে গেছে। এই সময়ে অগাধ জনহানির ঘটনা ঘটেছে, যেখানে নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে এক লাখের বেশি। জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যান্ক ইনস্টিটিউটের নতুন এক গবেষণায় এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটি শুধুমাত্র সরকারি পরিসংখ্যানের বাইরে থাকা প্রাণহানির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গাজায় চলমান সংঘর্ষের মধ্যে মৃতের সংখ্যা নিয়ে নানা সন্দেহ ও আলোচনা থাকলেও, এই গবেষণার দ্বারা স্পষ্ট হয় যে বাস্তব পরিস্থিতি আরও গুরুতর। সোমবার জার্মানির সাপ্তাহিক জাইট পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গবেষকরা বলছেন, দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধের কারণে অন্তত এক লাখ মানুষ মারা গেছেন বা নিহত হয়েছেন। গবেষণার সহকারী কো-লিডার ইরিনা চেনে বলেন, ‘সঠিক মৃতের সংখ্যা জানা সম্ভব নয়, তবে আমরা যতটা সম্ভব নিখুঁতভাবে এর একটি প্রাক্কলন করতে চেষ্টা করছি।’ তারা বলছেন, প্রথম দুই বছরে গাজায় ৯৯,৯৯৭ থেকে ১,২৫,৯১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা। গড় হিসেবে এই সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার। গবেষকরা বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই পরিসংখ্যানগত চিত্র তৈরি করেছেন। এতে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য, স্বজনদের দেওয়া মৃত্যুসংবাদ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের রেকর্ড এবং অন্যান্য স্বাধীন সমীক্ষাগুলোর ফলাফল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তথ্য বলছে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রথম দুটি বছরে মোট ৬৭,১৭৩ জনের মৃত্যুর হিসাব দিয়েছে, তবে তদন্তে দেখা গেছে এই সংখ্যা রীতিমত কম। এই ব্যাপারে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে যে, সরকারি দিক থেকে মৃত্যুর সংখ্যা মূলত রক্ষণশীলভাবে বিবেচিত হয়েছে। এর অর্থ, বাস্তবে মৃত্যুর সংখ্যা চোখের সামনে অনেক বেশি হতে পারে। প্রথমত, গাজায় নিহতের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশের ক্ষেত্রে অনেক মৃত্যু রেকর্ডে ধরা পড়েনা, বিশেষ করে সামরিক আগ্রাসনের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া বা আনুষ্ঠানিক হাসপাতালে রেকর্ড না হওয়া মৃতদেহগুলো। গবেষকদের ভাষ্য, মৃত্যুর প্রকৃত হার বিশ্লেষণে লিঙ্গ ও বয়সভেদে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। নারীদের মৃত্যুর অনুপাত পুরুষের তুলনায় কম হলেও, ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের মৃত্যুর সংখ্যা অনেক ক্ষেত্রে সরকারি তালিকায় ধরা পড়ে না। এর পাশাপাশি, শিশু (১৫ বছরের নিচে) মোট মৃত্যুর প্রায় ২৭ শতাংশ এবং মহিলাদের প্রায় ২৪ শতাংশ। এছাড়া, যুদ্ধের কারণে গাজা বাসীর জীবনযাত্রা ব্যাপকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে। ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, বর্তমানে গাজার ৯০ শতাংশ মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগছেন। অনেকে ঠিক দিনেই একবার করে খাবার পান, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক পরিস্থিতি। গাজায় চলমান ধ্বংসযজ্ঞের কারণে হাসপাতাল, স্কুল, আবাসিক ভবন সব ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। বিভিন্ন অবকাঠামো ব্যাপকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আঞ্চলিকভাবে ধ্বংসস্তূপের পরিমাণ প্রায় পাঁচ কোটি টন। এই ধ্বংসের নিচে এখনো অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মৃতদেহ উদ্ধার সম্ভব হয়নি। বিরতির পরে আবারও হামলা শুরু হয়েছে। যুদ্ধবিরতি পালন করতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনারা নিরর্থক অভিযানের প্রমাণ দিয়েছে। গাজার সরকারি সূত্র বলছে, গত ৪৪ দিনে ইসরায়েল শত শত বার হামলা চালিয়েছে। সেই সব রক্তক্ষয়কাণ্ডের মধ্যে ৩৪২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। সোমবারের পরিসংখ্যান বলছে, ২৯ অক্টোবর দিনটিই ছিল সবচেয়ে ভয়াল, যেখানে ১০৯ জন ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৫২ জন শিশু। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার গাজা শহরের জেইতুন পাড়ার একটি ভবনে হামলা চালিয়ে ৩২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন, যাদের মধ্যে এক পুরো পরিবারের সবাই ছিল। SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: