বাগেরহাটে সুপারির ব্যাপক ফলন, অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার প্রত্যাশা

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৩:৩৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৬, ২০২৫

চলতি মৌসুমে বাগেরহাট জেলায় সুপারির ফলন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দশ বছরে এ বছরসুপারির সর্বোচ্চ ফলনের আশা করছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলায় মোট ৩,৯৬০ হেক্টর জমিতে সুপারির আবাদ হয়েছে, যার মাধ্যমে এবছর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮,৯৯০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৬৫ শতাংশ সুপারির সংগ্রহ সম্পন্ন হয়েছে। আশাবাদী কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এই পরিমাণ ছাড়িয়ে যেতে পারে আরও বেশি ফলন।

সূত্র অনুসারে, সিডর পরবর্তীকালে দীর্ঘ সময় ধরে সুপারির ফলন কমতে শুরু করে। বিশেষ করে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পায় মাটিতে, ফলে শত শত সুপারির বাগান মালিক তাঁর সংসারের খরচ যোগাতে কষ্টে পড়েন। তবে, এ বছর ব্যাপক ফলনের ফলে বাগানের মালিক ও তাঁদের পরিবারের মুখে হাসি ফিরে এসেছে। বাজারে সুপারির দাম ভাল থাকায় চাষিরাও খুব খুশি।

বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলার মধ্যে এই বছর সবচেয়ে বেশি ভূমি ব্যবহার হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে বাগেরহাট সদর উপজেলায়, যেখানে ১,২০০ হেক্টর জমিতে সুপারির চাষ হয়েছে। এরপর কচুয়াতে ১,১৫৩ হেক্টর, মোরেলগঞ্জে ৭৫০ হেক্টর, শরণখোলায় ৩০০ হেক্টর, ফকিরহাটে ২৫০ হেক্টর, চিতলমারীতে ১২২ হেক্টর, রামপালে ১২২ হেক্টর, মোল্লাহাটে ৬০ হেক্টর এবং মোংলায় ৩ হেক্টর জমিতে সুপারির চাষ হয়।

গত বছর জেলায় মোট সুপারির উৎপাদন হয়েছিল ২৬,৮০০ মেট্রিক টন। কৃষি বিভাগের মতে, এ বছর বর্ষার সময় বেশি বৃষ্টিপাত এবং লবণাক্ততার কম থাকায়, গত দশ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ফলনের সম্ভবনা দেখা দিয়েছে।

সুপারির ফলন নির্ভর করে সময়ের উপর। সাধারণত চারা রোপণের পর ফলন পাওয়ার জন্য প্রায় ৫ বছর সময় লাগে। এরপর ধীরে ধীরে ফলন বাড়তে থাকে, এবং বছরজুড়ে কিছু না কিছু ফল পাওয়া যায়। বাগেরহাটের সুপারিটি দেশের বিভিন্ন বিভাগে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনি সহ অন্যান্য অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়।

সুপারি একটি অর্থকরী পামজাত ফসল, যার চাহিদা বাড়ছে বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকা বাগেরহাটে। এখানের বাগানের মালিকরা গাছ থেকে সুপারির ফল তুলে বিক্রি করে তাদের জীবনযাত্রা নির্বাহ করেন। সুপারির জনপ্রিয়তা রয়েছে পান-পাতার সঙ্গে খাওয়া, পানের খিলি ও সামাজিক অনুষ্ঠানে। পর্যটক ও আত্মীয়স্বজনরা এখানে এসে সুপারির স্বাদ নিতে পছন্দ করেন, যার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উপকারিতা বাড়ছে।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা মনে করেন, সুপারির ব্যাপক ফলন এই জেলা থেকে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার খুলতে পারে। কৃষকদের জন্য এটি একটি লাভজনক ফসল হয়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে যদি তাঁরা ভাল দাম পান।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তপন কুমার মজুমদার বলেন, ‘বাগেরহাটে সুপারির চাষ ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ইতোমধ্যে ৬৫ শতাংশ ফলন সংগ্রহ হয়ে গেছে। যদি আবহাওয়া অনুকূল থাকে, তাহলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখানকার সুপারির চাহিদা ব্যাপক।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোতাহার হোসেন জানান, ‘বাংলাদেশের নারকেল গবেষণা কেন্দ্রে উন্নত জাতের সুপারি উদ্ভাবিত হয়েছে। তবে, ২০০৭ সালের সিডর পর লবণাক্ততা এবং বর্ষা কমে যাওয়ার কারণে সুপারি উৎপাদনে কিছু বাধা আসে। এখন পরিবেশ অনুকূল থাকায় ফলন আবার বাড়ছে।’