প্রধা উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন যেন শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর ও আনন্দময় পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়, তার জন্য সেনাবাহিনীর সহায়তা অত্যন্ত জরুরি। গতকাল বুধবার মিরপুর সেনানিবাসে ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) কোর্স–২০২৫-এর গ্র্যাজুয়েশন সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২৪টি দেশের তরুণ সামরিক কর্মকর্তাদের হাতে সনদ তুলে দেন ড. ইউনূস। এই বছর চীন, ভারত, পাকিস্তান, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশের ৩১১ জন কর্মকর্তা এই প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, ‘দেশবাসীর দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত এই নির্বাচন সত্যিকার অর্থে শান্তিপূর্ণ উৎসব ও আনন্দমুখর পরিবেশে সম্পন্ন করতে হলে আমাদের সেনাবাহিনীর সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।’ তিনি জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে সেনাবাহিনীর ভূমিকা প্রশংসা করে বলেন, ‘সেনাবাহিনী সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যা দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি তাদের ভূমিকা জানিয়ে গভীর প্রশংসা করি।’

প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী অফিসাররা ভবিষ্যতে অর্জিত জ্ঞান ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন সংকটময় পরিস্থিতিতে আরও দক্ষতার সাথে কাজ করবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। এক বাংলাদেশি অংশগ্রহণকারী বলেন, ‘ডিএসসিএসিতে এই কোর্সে আমরা নেতৃত্ব, কৌশল ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সম্পর্কে যা শিখেছি, তা আমাদের দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও কাজ আসবে। বিশেষ করে যেকোনো জাতীয় সংকটে এই জ্ঞান প্রয়োগের জন্য আমরা প্রস্তুত।’

চীন থেকে অংশ নেওয়া এক অফিসার বলেন, ‘বাংলাদেশের এই সামরিক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মানের। অন্য ভাষাগুলোতে অভিজ্ঞতা বিনিময় করে আমরা দেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করেছি। ভবিষ্যতে এই জ্ঞান দেশের সুরক্ষা ও নিরাপত্তায় কাজে লাগবে।’

বাংলাদেশি একজন অফিসার প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পক্ষে বক্তব্য দিয়ে বলেন, ‘আমরা আশা করি, এই কোর্স সম্পন্ন করে আমরা দেশের রক্ষা ও গুরুত্বপূর্ণ কাজে যথাসাধ্য সহায়তা করতে প্রস্তুত থাকব। বিশেষ করে সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আমাদের সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালন করব।’

অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি গ্র্যাজুয়েশন সনদ বিতরণ করেন এবং প্রশিক্ষণের সফল সমাপ্তিতে অংশগ্রহণকারীদের সম্মাননা দেন।

এই বছর ডিএসসিএসসি কোর্স-২০২৫-এ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে ১৭০, নৌবাহিনী থেকে ৯০ এবং বিমানবাহিনী থেকে ৩৬ জনসহ মোট ৩১১ জন কর্মকর্তা প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশের ৩ জন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন দেশের মোট ৫৮ জন কর্মকর্তা এই প্রশিক্ষণে অংশ নেন। এর মধ্যে ১৪ জন মহিলা কর্মকর্তা, যা নারীর ক্ষমতায়ন ও অন্তর্ভুক্তির নির্দেশ দেয়।

প্রসঙ্গত, অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিন বাহিনীর প্রধান, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।