বিএনপি প্রধান উপদেষ্টা আহ্বান জানালে আলোচনায় রাজি: সালাহউদ্দিন আহমদ

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৩:৩৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৯, ২০২৫

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, যদি প্রধান উপদেষ্টা নিজেদের প্রস্তাব পাঠান, তবে বিএনপি আলোচনা করতে প্রস্তুত। তবে তিনি জোর দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, অন্য কোনো রাজনৈতিক দলকে দিয়ে কেন তাদের আলোচনার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে, সেটি সরকারের উচিত নয়।

শনিবার রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ছাত্রদলের আয়োজিত ‘ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের ৫০ বছর’ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ওই সভার প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি সরকারকে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আহ্বান জানান।

অন্তর্বর্তী সরকারের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এই সরকারের এত শক্তি প্রদর্শন মোটেও মানায় না। কারণ, এরা কোনো নির্বাচিত সরকার নয়, এটি তাদের ভুল। তাদের এ ধরনের আচরণ চালিয়ে গেলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য ক্ষতিকর হবে।

শনিবারের এই অনুষ্ঠানে সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, আমি তোমাদের সমর্থন দিচ্ছি, সীমারেখার মধ্যে। কিন্তু যদি মনে করেন, অন্য একটি রাজনৈতিক দলকে দিয়ে আমার কাছে আলোচনার জন্য আসার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে, তাহলে সেটি ঠিক নয়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার যদি আমাদের কোনও বিষয়ের জন্য আহ্বান জানান, আমরা সব সময় আলোচনা করতে প্রস্তুত। তবে কেন অন্য রাজনৈতিক দল দিয়ে এই আহ্বান? এ বিষয়টি তারা স্পষ্ট করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করেও তিনি কিছু অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। দলটির এই নেতা বলেন, বিএনপি সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে—এনসিপি, জামায়াত বা অন্যান্য দল, সবাই সঙ্গে আলোচনা করে। কিন্তু কোনও রেফারি দলের মাধ্যমে অপ্রাসঙ্গিকভাবে আলোচনা আহ্বান করা উচিত নয়। এটি সঠিক নয় বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

সালাহউদ্দিন আহমদ বিশ্বাস করেন না যে, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়সূচি ঠিক করার এখতিয়ার রয়েছে। তিনি মন্তব্য করেন, সরকারের উচিত নিজেদের অধিকার বুঝে নেওয়া; কারণ, তারা কোনো সরকার নির্বাচিত নয়। আর এ ধরনের অযৌক্তিক শক্তি প্রদর্শন দেশের জন্য ক্ষতিকর।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রেফারির ভূমিকা পালন করবে, এবং আস্থার সাথে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে। কিন্তু এখন দেখলাম, তারা রেফারির বদলে মনে করছে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এ নিয়ে তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেন।

জামায়াতে ইসলামীর সম্পর্কে তিনি বলেন, যারা ১৯৭1 সালে দেশকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, ১৯৪৭ সালে বিভক্তির পেছনে ছিল, অথবা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে ছিল, তারা যদি আবার আওয়ামী লীগ ও সরকারকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়, তবে এর পরিণতি শুভ হবে না। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এমন পদক্ষেপ দেশকে অগণতান্ত্রিক শক্তির দিকে নিয়ে যাবে।”

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তায় সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তারা যদি ঘি খেতে চায়, তবে খাবে। তবে তিনি জানান, দেশের গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে রাজপথের আন্দোলন উত্তপ্ত ও অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলতে দেওয়া হবে না। তিনি উল্লেখ করেন, ১১ তারিখের আলটিমেটাম নিয়ে সরকার সহযোগিতা করছে, যা একপ্রকার অনুমোদন। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকেও ওই সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে বলছে।

তিনি বলেন, দেশে কোনো গণভোটের প্রয়োজন নেই। গণভোটের মাধ্যমে আইন ও সংবিধানে পরিবর্তন আনা সম্ভব, তবে এর জন্য সংসদ সদস্যদের নৈতিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। জনগণের ইচ্ছার ভিত্তিতেই এই সংস্কার আসবে। নির্বাচন ছাড়া গণভোটের বিকল্প নেই বলে তিনি দৃঢ়ভাবে দাবি করেন।

অন্তর্বর্তী সরকার ও আইন প্রতিষ্ঠা বিষয়ে তাঁর মত, ১৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু উদ্যাপন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ যে ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, সেটিও তিনি নোট করেন। তিনি বলেন, দেশের মানুষ জানে না কেন পাগলের মতো এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। গত এক বছরে কত অপ্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, আসল সত্য তারা জানে না। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, সরকার এবং তার পক্ষে থাকা শক্তিগুলোর হাতে দেশের বিচার ও গণতন্ত্রের জন্য একবার হলেও দাঁড়ানো প্রয়োজন। তিনি বলেন, আপনাদের যদি সাহস হয়, তবে আসুন এবং বিচারকৃতির মুখোমুখি হোন।

সভায় আলোচনা সভার সঞ্চালনা করেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের অন্যান্য নেতারা ও ছাত্রদলের বিভিন্ন শাখার প্রতিনিধিরা।