প্রধান বিচারপতি: সভ্যতার মূল শিকড় না বুঝে আইনের ধারনা সম্ভব নয়

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৩:৩০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৯, ২০২৫

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমед বলেছেন, ইতিহাসের গভীর বোঝাপড়া ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা সমাজ প্রজ্ঞাবাণ হতে পারেন না। তিনি আরও মন্তব্য করেন, কোনো বিচারক যদি তার সভ্যতার মূল ভিত্তি ও শিকড় না বুঝে থাকেন, তবে তিনি আইনের যথাযথ ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ করতে সক্ষম হবেন না। শনিবার ঢাবির ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠা ও পুনর্মিলনী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা।

প্রধান বিচারপতি তার প্রিয় মাতৃভাষা ও শিক্ষা জগতের দানধন্য এ বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, আমি তার জীবনকে চিরকাল উদাহরণ হিসেবে মনে রাখব। তিনি ছিলেন সেই বিরল প্রজন্মের একজন, যাদের মনোভাব ছিল উচ্চ মানবিক মূল্যবোধ, আদর্শ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির উন্নয়ন সমন্বিত। তার মতো ব্যক্তিত্বের মতো একজন মানুষ একজন নারীর একাডেমিক ক্ষমতায়ন এবং নৈতিক শিক্ষা দিয়ে বিশ্বকে কেমন করে সুন্দর সমাজ গড়ে তোলা যায়, তার স্পষ্ট ছবি দেখাতে পারতেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, আজকের এই মহামিলনের দিন আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বিভাগ ৭৫ বছর পুরো করেছে কেবল কোনও একাডেমিক সাফল্য না, বরং এটি দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনেরও এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তিনি বলেন, কোনও সংস্কারক বা বিচারক তার শিকড়গুলো না ধরেই সত্য ও ন্যায়ের পথ বুঝতে বা দেখাতে পারেন না। এখানে মূল বিষয় হলো – ইতিহাসের গভীর সমঝোতা ও বোঝাপড়া।

তিনি আরও বলেন, আইন জাতির নৈতিক ইতিহাসের অংশ, যা ন্যায়ের ভাষায় লিখিত। আর ইতিহাস আমাদের শেখায়, সমাজকে আরও ভালো এবং সুন্দর করে তোলার জন্য কোন দিকগুলো অনুসরণ বা পরিবর্তন করতে হবে।

প্রসঙ্গত, বিচার বিভাগীয় সংস্কার প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি জানান, বিচার বিভাগের উন্নয়নে কেবল ঐতিহ্য বজায় রাখা যথেষ্ট নয়। বরং একে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নত ও প্রাসঙ্গিক হতে হবে। তিনি বলেন, গত ১৫ মাসে আমরা বিচারব্যবস্থার স্বায়ত্তশাসন, দক্ষতা বৃদ্ধি ও সাধারণ মানুষকে দ্রুত ও সহজভাবে বিচার সমাধান পেতে সহায়তার জন্য নানা প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছি ও চলমান রাখতে বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করেছি।

তিনি বলেন, মূল উদ্দেশ্য হলো— প্রশাসনিক বা কর্তৃত্বের পরিবর্তে নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটি সত্যিকারের সেবা দেওয়া। যাতে বিচারকরা জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারেন। আর বিচার বিভাগ যেন মানুষের কাছে এক নৈতিক ও আস্থা স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়ে ওঠে।

প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতা উন্নয়নের বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, ব্রাজিল,D.S. আফ্রিকা, মিশর, ফিলিস্তিন ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্ব স্থাপনের মাধ্যমে আইনের পাশাপাশি ইতিহাস ও দর্শনের ওপর জ্ঞানচর্চাও বাড়ছে। এর মাধ্যমে আমাদের লক্ষ্য— বিশ্বজনীন মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা ও শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ মানব সমাজ গড়ে তোলা।

তিনি বললেন, আজকের এই হীরক জয়ন্তীর অনুষ্ঠান কেবল একাডেমিক উদযাপনই নয়, বরং এটি আমাদের প্রতিষ্ঠানের নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থানকে আরও দৃঢ় করে। ইতিহাস প্রতিষ্ঠানকে বলে দেয়, সফলতা শুধু অর্জনে নয়, প্রচেষ্টার সততা ও আন্তরিকতায়। এই বার্তা ভবিষ্যতের জন্য আমাদের শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।

অন্তত, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শ্রেষ্ঠ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও অবদান নিয়ে আলোচনা করেন। বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাবেক শিক্ষার্থীদের প্রতি শুভকামনা ও ভবিষ্যতের সাফল্যের জন্য দোয়া জানিয়ে তিনি এই অনুষ্ঠানের সমাপ্তি করেন।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান। সভাপতিত্ব করেন বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান বিশ্বাস। এতে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী ও বিশেষ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ।