বিদেশেও জনপ্রিয়তা ছড়িয়েছে বগুড়ার ‘কটকটি’

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৩:৪০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৭, ২০২৫

খাবার মধ্যে একটি বিশেষ শব্দের কারণে স্থানীয়রা এই মিষ্টান্নকে ‘কটকটি’ নামে ডাকা শুরু করেন। বগুড়ার শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী এই সুস্বাদু মিষ্টান্নটি মহাস্থানের পরিচিত একটি স্বাদের নাম। আন্তর্জাতিক বাজারে আজ এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপ, আমেরিকা সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। শুকনো এই মিষ্টি খাবারটি এখন বগুড়ার গৌরবের প্রতীক হিসেবে পরিচিত।

বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত মহাস্থানগড়ের প্রাচীন প্রস্তরবিজ্ঞান নিদর্শনের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত হলেও এখানকার সুস্বাদু কটকটির জন্য এ অঞ্চল আরও খ্যাতি অর্জন করেছে। এই মিষ্টির শ্রুতি এখনো শত বছরেরও বেশি সময় ধরে মহাস্থানগড়ে সাদা হয়ে আসছে।

উনিশ শতকের শুরুর দিকে স্থানীয় নারী ও পুরুষদের হাতে এই মিষ্টির উৎপাদন শুরু হয়। চালের বা গমের আটার সাথে গুড় মেশিয়ে তৈরি হতো এই শুকনো মিষ্টি। তখনকার দিনে কটকটি বেশ শক্ত ছিল এবং খেতে গুণগুণ শব্দ হওয়ায় এর নাম ‘কটকটি’ হয়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি নরম হয়ে সুস্বাদু আরও বেশি হয়ে উঠে।

স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা বলছেন, প্রায় দেড়শো বছর আগে বগুড়া সদর উপজেলার গোকুল ইউনিয়নের পলাশবাড়ী উত্তরপাড়ার জয়নাল আলী মণ্ডল, ভোলা মণ্ডল ও গেদা মণ্ডল প্রথম এই কটকটি তৈরি করেন। তখন গ্রামের মেলা এবং বিয়ের অনুষ্ঠানে এই খাবারটি পরিবেশিত হত। সহজলভ্য উপকরণ এবং মচমচে স্বাদের কারণে দ্রুত লোকের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে এর জনপ্রিয়তা।

মহাস্থানগড়ে বর্তমানে প্রায় শতাধিক কটকটির দোকান রয়েছে। প্রতিদিনই সেখানে শত শত কেজি এই কটকটি বিক্রি হয়। দাম ভিন্ন ভিন্ন হয় — ডালডা ভাজা কটকটি কেজিপ্রতি ১৮০ টাকা, গরুর ঘি স্প্রে করা ২২০ টাকা, আর পোলার চালের কটকটি ২৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

প্রতিবছর বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার, হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (রহঃ) এর বিজয় দিবসে, কটকটির ব্যবসায়ীরা ১ থেকে ২ হাজার মণ পর্যন্ত এই খাবার বিক্রি করেন। এছাড়া মহাস্থানগড়ে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা এই কটকটি বিভিন্ন সময় তবারক হিসেবে নিয়ে যান। বর্তমানে এটি দেশের বাইরে ছাড়াও শতাধিক দেশে পৌঁছে গেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বগুড়ার কটকটি এখন শুধু একটি খাবার নয়, এটি বগুড়ার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও গর্বের প্রতীক। স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০ কোটি টাকার লেনদেন হয় মহাস্থানগড় অঞ্চলজুড়ে এই কটকটির ব্যবসায়।

শাহ আলম, এক প্রবীণ ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমাদের পরিবার ছয় পুরুষ ধরে এই পেশায় রয়েছে। দেখছি, এখন আরও অনেকে এই পেশায় যুক্ত হচ্ছেন। মহাস্থান মাজারের পাশে সারাবছরই এই ব্যবসা চলে।’

কারিগর মজনু জানান, তারা ছোটবেলা থেকেই এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। কটকটি তৈরি করেই তারা জীবিকা নির্বাহ করেন।

নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের বগুড়ার কর্মকর্তা মো. রাসেল জানান, মহাস্থানগড়ের মাজার এলাকায় কটকটির প্রস্তুত এবং বিক্রয়ের দিকে নিয়মিত তদারকি করা হয়। যাতে কোনও ভেজাল রঙ বা স্যানেটরিযুক্ত উপাদান ব্যবহার না হয়, সেজন্য শহর পর্যায়েও সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। সকল দোকানি ও কারিগরদের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে এই মিষ্টি প্রস্তুত করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।