বাগেরহাটে সুপারির বাম্পার ফলন, তবে চাষির মন খারাপের কারণ দাম কমে যাওয়া Staff Staff Reporter প্রকাশিত: ৩:৪১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৬, ২০২৫ উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে গাছে গাছে পাকা সুপারি ঝুলে রয়েছে। এ বছর জেলায় সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে, ফলে চাষিরা আশার আলো দেখেছিলেন। কিন্তু বাজারে গিয়ে এই আশা হতাশায় পরিণত হচ্ছে। ফলন ভালো হলেও দামের পতন ঘটেছে, যেখানে কুড়ি সুপারি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা, যা গত বছরের তুলনায় অনেক কম। গত বছর একই কুড়ি সুপারির মূল্য ছিল ৮০০ টাকা, এখন তা কমে হয়েছে ৫০০ টাকার নিচে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় বড় মোকামগুলোতে চাহিদা কমে যাওয়ায় দরপতন ঘটেছে। তবে চাষিরা অভিযোগ করছেন, খরচ বাড়ছে কিন্তু দাম কমে যাচ্ছে, যার ফলে লাভের পরিবর্তে তারা এখন শঙ্কার মধ্যে জীবনযাপন করছেন। জেলার অন্যতম বৃহৎ সুপারির বাজার হলো কচুয়া উপজেলার বাধাল বাজার। প্রতিদিন রোববার ও বৃহস্পতিবার ভোরের আগে ক্রেতা-বিক্রেতাদের এক সঙ্গে ব্যস্ত হয়ে ওঠে এই বাজার। বিভিন্ন স্থান থেকে সুপারির ঝুড়ি, ব্যাগ ও বস্তা নিয়ে আসা বিনিময়ে চলছে দর-দাম নিধারণ। বাজারে এক দিনে বিক্রি হয় প্রায় এক থেকে দেড় কোটি টাকার সুপারির লেনদেন। পাইকাররা এই সুপারির সরবরাহ করেন চট্টগ্রাম, রংপুর, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বাধাল বাজারে প্রায় ৫ শতাধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তারা সুপারির বাছাই, গোনা, বস্তা ভরা, ট্রাকে ওঠানোসহ বিভিন্ন কাজ করে থাকেন এবং দিনে ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা উপার্জন করেন। কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর বাগেরহাটে ১০ হাজার একর জমিতে সুপারির আবাদ হয়েছে, যেখানে উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে প্রায় ২৭ হাজার মেট্রিক টন। তবে বেশি ফলন হলেও দামের কারনে চাষিরা ঝিমিয়ে পড়েছেন। প্রতি কুড়ি সুপারির মূল্য বর্তমানে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে, যা আগের মৌসুমে ছিল ৮০০ টাকা থেকে কম। বিক্রেতা মনিরুল বলেন, এ বছর ফলন খুব ভালো হয়েছে, গাছে সুপারির আধিক্য। কিন্তু দামের অবনমন লাঞ্ছনা দিচ্ছে। তিনি বলেন, গত বছর এক কুড়ি সুপারির দাম ছিল ৮০০ টাকা, এবার সেটা অর্ধেকেরও নিচে। সার, শ্রম, পরিবহন সব খরচ বর্ধিত হলেও লাভ খুব কম। বাজারের দাম বাড়লে চাষিরা উৎফুল্ল হতেন বলে উল্লেখ করেন। অপর এক বিক্রেতা রহিমা বেগম জানিয়েছেন, তার স্বামী-সন্তানসহ অনেক দিন থেকেই সুপারি চাষ করে থাকেন। এ বছর ফলন ভালো হলেও দামের অভাবে মন ভেঙে যাচ্ছে। সকালে বাজারে উপস্থিত থাকলেও ক্রেতারা আগের মতো দর দিতে রাজি নয়। তিনি অভিযোগ করেন, সরকার যদি বাস্তবসম্মত মূল্য নিশ্চিত করে, তাহলে চাষিরা আরও উৎসাহিত হবেন। চট্টগ্রাম থেকে আসা ক্রেতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ বছর সুপারির ফলন প্রচুর। বাজারেও সরবরাহ বেশি। তবে বড় মোকামগুলোতে চাহিদা কমে যাওয়ায় দাম কিছুটা নিচে নেমে এসেছে। এতে ক্রেতারা কিছু সুবিধা পেলেও, চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তিনি আশাবাদী, বাজার স্থিতিশীল হলে সবাই উপকৃত হবে। স্থানীয় খুচরা বিক্রেতা রুবেল মোল্লা জানান, তিনি বাধাল বাজার থেকেই সুপারির খুচরা বিক্রি করেন। গত বছর যেখানে এক কুড়ি সুপারির দাম ছিল, সেখানে এখন দুই কুড়ি সুপারির দাম উঠছে দেড়গুণ বেশি। তবে ক্রেতারা দাম কমে যাওয়ায় বেশি চয়নচিন্তাই করছেন। বাজারে জায়গা সংকট ও ভিড়ের কারণে লেনদেন কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। বাধাল বাজারের ইজারাদার খান শহীদুজ্জামান মিল্টন বলেন, চাষিদের ন্যায্য মূল্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাজারের নিয়ম অনুযায়ী ক্রয়-বিক্রয় সক্রিয় রয়েছে। শতবর্ষী এই বাজারে ক্রয়-বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য নতুন জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করছেন, যাতে বাজারের পরিধি আরও বিস্তৃত হয়। এ বিষয়ে বাগেরহাটের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোতাহার হোসেন বলেন, মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী হলেও কৃষকরা সঠিকভাবে গাছের যত্ন নিচ্ছেন না। নিয়মিত পরিচর্যার মাধ্যমে ফলন আরও বৃদ্ধি পাবে। এই জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান। SHARES সারাদেশ বিষয়: