বাংলাদেশে সমন্বিত ঋণ ব্যবস্থাপনা অফিস প্রতিষ্ঠার সুপারিশ

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৩:৩৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৬, ২০২৫

সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনা কাঠামোকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করে তোলার জন্য একটি সমন্বিত ঋণ ব্যবস্থাপনা অফিস (ডিএমও) প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ কারিগরি সহায়তা মিশন। এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হয় গত সোমবার অনুষ্ঠিত এক কর্মশালা উপলক্ষে, যা বাংলাদেশ সচিবালয়ের অর্থ বিভাগে বন্ষী। এই কর্মশালার আয়োজন করা হয় অর্থ বিভাগের ‘ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা শাখার সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্প’-এর অংশ হিসেবে; যার মূল লক্ষ্য হলো সার্বিক আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা ও সেবার মান উন্নয়ন।

মিশনটিতে দেখা গেছে যে বাংলাদেশে বর্তমানে ঋণ ব্যবস্থাপনার কাজগুলো বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে বিভক্ত। এর ফলে সমন্বয়ের অভাব—তথ্য অপ্রতুল, কৌশলগত পরিকল্পনায় অসঙ্গতি সৃষ্টি হয় এবং কার্যকর ঋণ ব্যবস্থাপনা ব্যাহত হয়। এছাড়া একটি কেন্দ্রীয় ও নিরীক্ষিত ঋণ ডাটাবেইসের অভাব ও নগদ প্রবাহের নির্দিষ্ট পূর্বাভাসের অনুপস্থিতিও উল্লেখযোগ্য সমস্যা হিসেবে উত্থাপিত হয়েছে। এগুলো সরেজমিনে দেখা দরকার যাতে সরকারের ঋণ গ্রহণ, ব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকি কমানোর জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন, পরিকল্পনা ও টিডিএম) মো. হাসানুল মতিন এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অন্যন্য অতিথিদের মধ্যে ছিলেন অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট-১), ড. জিয়াউল আবেদীন, ও অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (ম্যাক্রোইকনমিকস-১), হাসান খালেদ ফয়সাল। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ রাশেদুল আমিন।

আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের মিশনের নেতৃত্ব দেন সিনিয়র ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর এক্সপার্ট অরিন্দম রায়,সহ ছিলেন ড. জেন্স ক্লাউসেন, ফিলিপ আর. ডি. অ্যান্ডারসন ও পারজনসন। বিশেষজ্ঞ মতামত উপস্থাপন করেন অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব (ব্যয় ব্যবস্থাপনা) মো. মনজরুল হক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের যুগ্ম সচিব আবু দাইয়ান মোহাম্মদ আহসানউল্লাহ।

প্রেজেন্টেশনে বলা হয়, সরকারের ঋণ-সম্পর্কিত কার্যক্রম একীভূত করে একটি কেন্দ্রীয়, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক ঋণ ব্যবস্থাপনা অফিস (ডিএমও) তৈরি করা প্রয়োজন। এর প্রথম ধাপে, এই ডিএমও সম্পূর্ণ পেশাদারিত্বের সঙ্গে ঋণ ইস্যু তত্ত্বাবধান, বার্ষিক ঋণ পরিকল্পনা তৈরি, নিলাম ক্যালেন্ডার সমন্বয়, ঋণ পোর্টফোলিও ঝুঁকি মূল্যায়ন ও বিদ্যমান ডাটাবেসসমূহকে একত্রিত করে একটি সমন্বিত ব্যবস্থায় উন্নীত করা হবে।

এছাড়া, মিশনটি জোর দিয়ে বলেছে যে ঋণ গ্রহণের জন্য একটি স্পষ্ট আইনি কাঠামো প্রয়োজন, যাতে কর্তৃত্ব, জবাবদিহি, প্রতিবেদন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়। দক্ষ পেশাদারিন নিয়োগ ও টেকসই ক্যারিয়ার উন্নয়ন সুযোগ সৃষ্টি করে ডিএমও-কে আরও স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বায়ত্তশাসিত করা সম্ভব।

বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যতে এই সংস্থাটি আরও স্বায়ত্তশাসিত করে, এর কার্যকারিতা আরও বিস্তৃত করা যায়—যেমন, দায়বদ্ধতা তদারকি, বিনিয়োগকারী সম্পর্কের পরিচালনা। ১৯৮০ এর দশকের পর থেকে অনেক দেশে কেন্দ্রীভূত ডিএমও ব্যবস্থা চালু হয়েছে, যা ঋণের খরচ ও ঝুঁকি কমায়, রাজস্ব স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করে এবং ঋণ ও মুদ্রানীতির মধ্যেকার ব্যবধান কমায়।

প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সমর্থন, ধাপে ধাপে পুনর্গঠন, আধুনিক আইটি সিস্টেমে বিনিয়োগ এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে টেকসই সমন্বয়। সফলভাবে কার্যকর হলে, এটি বাজারে আস্থা বাড়িয়ে তুলবে, ঋণের খরচ ও ঝুঁকি হ্রাস করবে, এবং দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।