গভর্নর ঘোষণা: পাঁচ ব্যাংকের বোর্ড বাতিল হলেও ব্যাংকিং সেবা অব্যাহত থাকবে Staff Staff Reporter প্রকাশিত: ৩:৩৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৬, ২০২৫ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর স্পষ্ট করে বলেছেন, শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি বাতিল হলেও গ্রাহকদের ব্যাংকিং সেবা নিয়ে কোনো বিভ্রান্তির প্রয়োজন নেই। তিনি জানান, এসব ব্যাংকের পেমেন্ট, রেমিট্যান্স, এলসি এবং অন্যান্য সকল কার্যক্রম আগের মতোই সুচারুভাবে চলবে। বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন তিনি। ড. মনসুর বলেন, বোর্ড ভেঙে যাওয়া এই ব্যাংকগুলোতে দৈনন্দিন ব্যাংকিং লেনদেন বন্ধ হবে না। বিনিয়োগ এবং গ্রাহকদের সেবা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি, পেমেন্ট, রেমিট্যান্স, এলসি সহ সব কার্যক্রম নিয়মিত চালিয়ে যেতে সরকারি নির্দেশনা থাকছে। তিনি আরও জানান, প্রথম পর্যায়ে কাঠামোগত ও প্রযুক্তিগতভাবে ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার কাজ শুরু হয়েছে, যাতে অর্থনৈতিক সম্পদ ও সিস্টেমের সুরক্ষা নিশ্চিত হয়। গভর্নর উল্লেখ করেন, মোট ৭৫০টি শাখা রয়েছে এই পাঁচ ব্যাংকের, যেখানে প্রায় ৭৫ লাখ গ্রাহক তাঁদের আমানত রেখেছেন। এই ব্যাংকগুলোকে লিকুইডেশন এড়াতে এবং গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষা করতে ধাপে ধাপে সম্পদ ও আইটি সিস্টেমের একীভূতকরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নির্বাহী কর্মকর্তা আরও জানান, এই ব্যাংকগুলো ‘নন-ভায়েবল’ বা টেকসই নয় বলে বোর্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছে এবং প্রতিটি ব্যাংকে অস্থায়ী অ্যাডমিনিস্ট্রেটর নিয়োগ করা হয়েছে। সকালে ব্যাংকের কোম্পানি সেক্রেটারিকে ‘নন-ভায়েবিলিটি’ নোটিশ পাঠানো হয়েছে, যার মাধ্যমে বোর্ডের কার্যকারিতা বন্ধ হয়ে গেছে এবং তারা আর কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। গভর্নর আরও জানান, ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় অবস্থানে রয়েছে এই সংযুক্ত ব্যাংকটি, যা বাংলাদেশের সকল ব্যাংকের মধ্যে পুঁজির পরিমাণে অন্যতম। পেইড-আপ ক্যাপিটাল হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা, যা বর্তমানে দেশের অন্য কোনো ব্যাংকের তুলনায় বেশি। তিনি উল্লেখ করেন, এই ব্যাংকটি সরকারি মালিকানাধীন হলেও এটি পরিচালিত হবে বেসরকারি ব্যাংকের মতো। পেশাদার ব্যবস্থাপনা, বাজারভিত্তিক বেতন কাঠামো এবং এক্সিকিউটিভ বোর্ড গঠন করা হবে। তিনি বিশ্বাস করেন, ইসলামী ব্যাংকিংই ভবিষ্যতের বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ। শেয়ারহোল্ডারদের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে, গভর্নর জানান, শেয়ার মূল্যের মূল্য এখন নেগেটিভ। ফলে, শেয়ারগুলোর মূল্য শূন্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং কেউ ক্ষতিপূরণ পাবেন না। অন্যদিকে, তিনি আমানতকারীদের আশ্বস্ত করে বলেন, দুই লাখ টাকা পর্যন্ত সম্পূর্ণ নিরাপদে তুলতে পারবেন। বড় অঙ্কের আমানত থাকলেও তা ধাপে ধাপে উত্তোলনের ব্যবস্থা থাকবে, যা পরে গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে জানানো হবে। এছাড়া, জাতীয় নির্বাচন ও নতুন সরকারের পরিবর্তনের কারণে এ প্রক্রিয়ার ওপর কোনও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে কি না, প্রশ্ন করার ওপর গভর্নর বলেন, এটি দেশের স্বার্থে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এবং সরকার পরিবর্তন হলেও এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। প্রসঙ্গত, এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক এসব শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই কাজের তদারকি করবে বলে জানানো হয়। ভেঙে ফেলা ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামিক ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামিক ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামিক ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। উল্লেখ্য, এই ব্যাংকগুলোর মধ্যে চারটি ছিল এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন, আর একটি ছিল ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মজুমদারের আওতায়। অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘ বছর ধরে নানা অনিয়ম ও ঋণের মাধ্যমে এই ব্যাংকগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা গোপনভাবে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, যার ফলে ব্যাংকগুলো আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। SHARES অর্থনীতি বিষয়: