মার্কিন রপ্তানিকারকদের তুলা রপ্তানিতে জটিলতা নিরসনে সহযোগিতা চান বাংলাদেশি শিল্পীরা Staff Staff Reporter প্রকাশিত: ৩:৩৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৫, ২০২৫ বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিকল্প হিসেবে মার্কিন তুলা রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা ও প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন তুলা রপ্তানিকারকরা। এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সংগঠন বিজিএমইএ-র সহযোগিতা চেয়েছেন তারা। মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরার বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত এক জরুরি বৈঠকে মার্কিন এই রপ্তানিকারকরা এ বিষয়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরেন। এ অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের তুলা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সংগঠন কটন ইউএসএ-এর নেতৃত্বে আমেরিকান প্রতিনিধিদল অংশ নেন। বৈঠকে মার্কিন পক্ষের প্রতিনিধিরা তাদের উদ্বেগ ও দাবি তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ডকুমেন্টেশন প্রস্তুতিতে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা এবং জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তারা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় এই জটিলতাগুলোর দ্রুত সমাধান চেয়েছেন। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে সভাপতি মাহমুদ হাসান খান তাদের লিখিত প্রস্তাব পাঠানোর আহ্বান জানান এবং বলেন, তিনি এই বিষয়ে বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তুলে ধরবেন, যেন দ্রুত সমাধান হয়ে যায়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কটন ইউএসএ-এর লি ইন, কারগিল-এর ক্রিস্টা রিকম্যান, এলডিসি-এর ডিয়েগো লোজাদা, ওলাম এগ্রি-র ওয়েসলি রেন্টজ, ক্যারোলিনা কটন গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর ওয়েন বোসম্যান, স্ট্যাপলকটন কো-অপারেটিভ-এর ক্রিস জোন্স, কটন কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনালের উইল বেটেনডর্ফ ও আলী আরসালানসহ অন্যান্য প্রতিনিধিবৃন্দ। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, সাথে ছিলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি ইনামুল হক খান ও পরিচালক নাফিস-উদ-দৌলা। মূল আলোচ্য বিষয় ছিল দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব, মার্কিন তুলার ব্যবহারে সম্প্রসারণ এবং বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে নতুন শুল্ক সুবিধা কার্যকর করতে করণীয়। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে মার্কিন তুলার সরবরাহের গুরুত্ব উল্লেখ করে আলোচনা হয়, যেখানে সম্প্রতি ঘোষিত মার্কিন নির্বাহী আদেশের নতুন সুবিধা ব্যাখ্যা করা হয়। এতে বলা হয়, যদি পোশাক উৎপাদনে ন্যূনতম ২০% মার্কিন কাঁচামাল ব্যবহার হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে দেয়া নতুন অতিরিক্ত শুল্ক থেকে ছাড় পাওয়া যাবে। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, এই শুল্ক ছাড়ের সুযোগ আমাদের শিল্পের জন্য এক বিশাল সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে, যা আমাদের পণ্যগুলোকে আন্তর্জাতিক বাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে। তিনি আরও জানান, এই সুবিধা লাভের জন্য এখনো বিজিএমইএর কাছে স্পষ্ট নির্দেশনা আসেনি। তাই তিনি মার্কিন প্রতিনিধিদলকে অনুরোধ করেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য ও নির্দেশনা পাওয়ার জন্য। এতে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রস্তুতি নিতে পারবেন যেন দ্রুত শুল্ক সুবিধা গ্রহণ করতে পারে। মাহমুদ হাসান খান আরও উল্লেখ করেন, বর্তমানে আমদানিকৃত তুলার প্রায় ১০% আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে, যা ভবিষ্যতে দ্বিগুণ বা তিনগুণ বৃদ্ধি করার সম্ভাবনা আছে। তবে এজন্য প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, সঠিক কৌশল ও পরিকল্পনা। তিনি বিশ্বাস করেন, মার্কিন তুলার উচ্চ গুণমান ও অধিক সুবিধা নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করলে স্পিনার ও কারখানাগুলো তাদের আমদানি বৃদ্ধির জন্য উৎসাহিত হবে। অতঃপর মার্কিন প্রতিনিধিদল বিজিএমইএ সভাপতির এই প্রস্তাব এবং অনুরোধের বেশ প্রশংসা করে এবং যৌথভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। বৈঠকে কটন কাউন্সিলের প্রতিনিধি রা বলেন, বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্প বিশ্ববাজারে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। অন্যদিকে, মার্কিন তুলা তার টেকসই গুণাবলী, নির্ভরযোগ্যতা এবং উচ্চ মানের জন্য পরিচিত। তারা বিশ্বাস করেন, মার্কিন তুলা ব্যবহারে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা তাদের পণ্য মান আরও উন্নত করবে এবং মার্কিন বাজারে শুল্ক সুবিধা কাজে লাগিয়ে ব্যবসা আরও সম্প্রসারিত করতে পারবে। বৈঠকে তুলা আমদানি সুবিধা আরও দ্রুত সম্পন্ন করতে লজিস্টিক ও অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা দ্রুত আনার জন্য একটি ওয়্যারহাউজ বা ভাণ্ডার স্থাপনের বিষয়ে মত বিনিময় হয়, যা বাস্তবায়িত হলে শিল্পের লিড টাইম কমে যাবে। উভয় পক্ষই নতুন শুল্কনীতি ও কাঁচামাল ব্যবহারের স্বচ্ছতা ও ট্রেসেবিলিটি নিশ্চিত করতে একসাথে কাজ করতে সম্মত হয়। বিজিএমইএর তরফ থেকে দেশীয় শিল্পের দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মার্কিন তুলা রপ্তানিকারকদের কাছে প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং গবেষণার জন্য সহযোগিতা চাওয়া হয়। এ জন্য বিজিএমইএ ইনোভেশন সেন্টারে মিলগুলোতে উৎপাদন বৃদ্ধি ও অপচয় হ্রাসের জন্য কারিগরি সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাবও জানান। উভয় দেশ ভবিষ্যতেও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব ও পারস্পরিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। SHARES অর্থনীতি বিষয়: