সেন্টমার্টিন পর্যটকদের জন্য ১ নভেম্বর থেকে উন্মুক্ত হচ্ছে

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৩:৩২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩০, ২০২৫

সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যটকদের জন্য ১ নভেম্বর থেকে আবারও খুলে দেওয়া হচ্ছে। দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপটি এখন থেকে দেশের সীমানার মধ্যে পর্যটকদের জন্য সুসজ্জিত ও প্রস্তুত। এবারও প্রবাল দ্বীপে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের সরকার নির্দেশনা মানতে হবে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে। গত বছরের মতো এবারও দ্বীপটির বিশুদ্ধ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে সরকার ১২টি কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিদুল আলম জানান, আগামী ১ নভেম্বর থেকে সেন্টমার্টিন আবার পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। এতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য, সিকিউরিটি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে মানা হবে। এছাড়া, আগের মতো ভ্রমণের জন্য পর্যটকরা কেবল কক্সবাজার শহর থেকে জাহাজে করে দ্বীপে যাবেন। নিরাপত্তার কারণে টেকনাফ থেকে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকবে।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উপপরিচালক মহিবুল ইসলাম জানিয়েছেন, পর্যটকদের অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। এই টিকিটে থাকবে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড, যা ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে। এসব বিষয় নিশ্চিত করতে পর্যটন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের মতো এবারও ডক থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করবে। তবে, উখিয়ার ইনানী থেকে দ্বীপে যাওয়ার সুযোগ থাকছে না। এর জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত দিয়েছে নৌপরিবহন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়। এই সিদ্ধান্তটি পৌঁছানো হয় এক প্রজ্ঞাপনে, যেখানে জানানো হয় যে, পরিবেশের সুরক্ষায় উখিয়ার ইনানী থেকে মোটরযান চলাচল বন্ধ থাকবে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় জানায়, গত কিছু সময় ধরে সামাজিক মাধ্যমে কিছু বিভ্রান্তিকর প্রচার চলে আসছিলো, যেখানে বলা হচ্ছিলো ইনানী থেকে সরাসরি জাহাজ চলবে। কিন্তু, বাস্তবতা হলো, সরকার সংকটময় পরিস্থিতি ও পরিবেশের স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্টমার্টিনের স্বাভাবিক পর্যটন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এভাবেই দায়িত্বশীল পর্যটন চালু থাকবে।

সেন্টমার্টিনে প্রবাল, শৈবাল, কাছিম, শামুক, ঝিনুক, সামুদ্রিক মাছ, পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী ও কাঁকড়াসহ মোট ১০০৭ প্রজাতির জীববৈচিত্র্য রয়েছে। অতীতের অনিয়ন্ত্রিত অবকাঠামো নির্মাণ, বেশি পর্যটক সমাগম ও পরিবেশ দূষণের কারণে দ্বীপটি সংকটের মুখে পড়েছিল। তবে, গত ৯ মাস পর্যটক আসা বন্ধ থাকায় দ্বীপের পরিবেশ ও প্রাকৃতিক জীবন অনেকটাই সুস্থ হয়েছে।

সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক বলেন, পর্যটকদের সংখ্যা সীমিত করা ও বন্ধের ফলে সেন্টমার্টিনের পরিবেশে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। এখন সৈকতজুড়ে লাল কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকের বেড়ো দেখা যাচ্ছে। পর্যটকের ভিড় কম থাকায় মাদের ও কাছিমের ডিম দেয়া সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

নতুন নীতিমালা অনুসারে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচল করতে পারবে না। পর্যটকদের অবশ্যই অনলাইনে টিকিট কাটতে হবে, যেখানে রয়েছে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড। কিউআর কোড ছাড়া যানবাহন বা টিকিট বৈধ হবে না।

পর্যটনের জন্য সময়সূচি ও উপস্থিতি এবার আরও বিধিনিষেধের মধ্যে থাকবে। নভেম্বর মাসে দিনবাপী ভ্রমণ করতে পারবে পর্যটকরা, রাতে অবস্থান করা যাবে না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে রাত্রিযাত্রা সুবিধা থাকবে। তবে, ফেব্রুয়ারিতে দ্বীপে প্রবেশের উপর সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। প্রতিদিন গড়ে অনুকূলে ২ হাজারের বেশি পর্যটক যেতে পারবেন না।

সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা নিশ্চিত করতে রাত্রীকালীন আলোচিত্র, শব্দ, বারবিকিউ পার্টি বন্ধ থাকবে। প্রবাল, কাছিম, শামুক, ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্য ক্ষয়কারী কার্যকলাপ প্রশাসনিকভাবেও নিষিদ্ধ। পাশাপাশি, সৈকতে মোটরসাইকেল বা অন্যান্য মোটরচালিত যান চলাচল বন্ধ থাকবে।

পালিথিন বহন ও একবার ব্যবহারের প্লাস্টিকের ব্যবহারও কঠোরভাবে হয়রানি করা হবে। পর্যটকদের নিজস্ব পানির বোতল সঙ্গে আনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সরকারের এই উদ্যোগে সেন্টমার্টিনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য আরও সুন্দরভাবে রক্ষা পাবে এবং দ্বীপটি দায়িত্বশীল পর্যটনের জন্য এক বিশিষ্ট উদাহরণ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠবে বলে প্রত্যাশা করছে।