বান্দরবানে সেতুর অভাবে লাখো মানুষের জীবন দুর্বিষহ Staff Staff Reporter প্রকাশিত: ৩:০৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২০, ২০২৫ বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে সেতুর অভাবে লাখো মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। এই সমস্যা সমাধানে কার্যকর কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় প্রতিদিনই মানুষ যেন চরম বিপদে পড়ছেন। শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নারকীয় ভোগান্তি এখন নিত্যদিনের অংশ হয়ে গেছে। স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, জেলার সদর, রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা-আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার গ্রামীণ এলাকাগুলোর মধ্যে সেতু বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি সমস্যা তৈরি হয়েছে। বান্দরবান পাহাড়ি জেলা হওয়ায় এগুলোতে ঝিরি ও ছোট ছোট খালের সংখ্যা অনেক। শুকনো মৌসুমে এসব এলাকার চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢল বা হরকা বানোর কারণে দুর্ভোগের মাত্রা আরও বাড়ে। কোথাও বাঁশের সাঁকো থাকলেও অধিকাংশ স্থানে তা নেই। বর্ষাকালে শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে ঝিরি পার হলে যায়, অনেকের পানিতে তলিয়ে মৃত্যুর মতো দুঃখজনক ঘটনা ঘটছে। অসহায় নিরীহ রোগী এবং প্রসূতি মায়েদের সময়মতো চিকিৎসা সেবা পাওয়া তো দূরের কথা, এ ব্যাপারেও বড় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কৃষকদের জন্যও এই অভাব মারাত্মক; তাদের অর্ধলক্ষ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্য বাজারে পৌঁছানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এর ফলে স্থানীয় অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ উপজেলার সচেতন মানুষদের। বারবার সেতু নির্মাণের জন্য আবেদন জানানো হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ এখনো দৃশ্যমান হয়নি। দ্রুত সময়ে স্থায়ী সেতু নির্মাণ করে এই দুর্ভোগ লাঘবের দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। সড়ক থেকেই দেখা যায়, বান্দরবান-লামা সড়ক দিয়ে তিনটি উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের জন্য এই সড়কটাই একমাত্র ভরসা। অতিবৃষ্টির কারণে কিছু কিছু স্থানে ভাঙন ধরলেও বিশেষ সমস্যা তৈরি হয়েছে ২২০০ মিটার দীর্ঘ চেইনেজ এলাকার। মঞ্জয় পাড়া-নাচালং, আলীকদমের ওবাইদুলহাকিম পাড়া, কলারঝিড়ি, লামার গাইন্ধ্যা-চিন্তাবা, ফাইতং চিউবতলী, নাইক্ষ্যংছড়ির সাপেরগাড়া, কম্বনিয়া, রোয়াংছড়ির ব্যাংছড়ি খাল, থানাচির বলিপাড়া, রুমার হানারাম ও গ্যালেংগা খালসহ বিভিন্ন স্পটে বহু স্থানে সেতু নেই। কিছু এলাকায় পুরোনো ভাঙা সেতু বা ছোট আকারের বাঁশের সাঁকো দিয়ে স্বাভাবিক চলাচল চালিয়ে নিতে হচ্ছে। বর্ষাকালে স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি পণ্য পরিবহন এবং শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সাপেরগাড়া এলাকার বাসিন্দা জেবুল হক ও জসীম উদ্দীন বলেন, এলাকাটিতে অন্তত ২৫-৩০ হাজার বাসিন্দা বাস করে। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এই অঞ্চলে বসবাস করলেও কোনও সেতু না থাকায় বর্ষাকালে স্কুলে যাওয়া, চিকিৎসা পাওয়া ও ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হয়। স্কুলে যেতে গিয়ে পানিতে তলিয়ে অনেক শিক্ষার্থীর মৃত্যুও হয়েছে। এ জন্য তারা দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবি জানাচ্ছেন। গজালিয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান বাথোয়াই চিং মারমা বলেন, চিন্তাবর, বাইশফারি, ঢেকিছড়া, তুলাতলি, বটতলি ও হামায় চর পাড়ায় প্রায় ৮-৯ হাজার মানুষ বাস করে। বমু খালের ওপর একটি সেতু না থাকায় সবাই সমস্যায় পড়েছেন। এই এলাকায় স্কুল-কলেজ থাকলেও বর্ষায় অনেক ছাত্র-ছাত্রী স্কুলে যেতে পারেন না, খালের পানিতে প্রবল স্রোত থাকায়। তাই দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবি তুলেছেন এলাকাবাসীরা। বান্দরবান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তাসাউর জানান, জেলার সাতটি উপজেলায় প্রয়োজনীয়তা ও চাহিদা অনুযায়ী ৪১টি অতি গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট আবেদন জানানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুত কাজে এগিয়ে যাওয়ার আশ্বাসও দেন তিনি। SHARES সারাদেশ বিষয়: