এনবিআর-এর সিদ্ধান্ত: এমপি কোটার ৩০টি বিলাসবহুল গাড়ি নিলামে না বিক্রি করে হস্তান্তর করা হবে

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ২:৩০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১০, ২০২৫

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এমপি কোটায় আনা ৩০টি বিলাসবহুল পাজেরো গাড়ি নিলামে বিক্রির পরিবর্তে সরকারি পরিবহন অধিদফতরে হস্তান্তর করা হবে। প্রতিটি গাড়ির মূল্য প্রায় ১২ কোটি টাকা হলেও, প্রথম নিলামে দর মাত্র ১ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকা উঠায় এনবিআর এই কঠোর এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। গাড়িগুলোর হস্তান্তর প্রক্রিয়া সহজতর করতে এনবিআর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে প্রয়োজনীয় চিঠি পাঠিয়েছে।

এনবিআরের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এখন আর কোনো জটিলতা রইল না, কারণ এই সুবিধা মূলত রাষ্ট্রের স্বার্থে ও শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা এসব গাড়ির বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল। জানা গেছে, এই গাড়িগুলো দ্বাদশ সংসদ সদস্যদের দ্বারা আমদানি করা, যারা ছাত্র আন্দোলনের সময় গাড়িগুলো অল্প দরেই বিক্রি বা চাপে পড়ে ছিল। তবে বন্দর থেকে ছাড় করার আগে সরকারের পতনের কারণে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। এখন এই বিষয়টি সমাধান করতে, এনবিআর নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের উপ-কমিশনার এইচ এম কবীর সংবাদমাধ্যমকে জানান, শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা এই গাড়িগুলো যানবাহন অধিদফতরে হস্তান্তরের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মোট ৩০টি গাড়ি রয়েছে, যেগুলোর আমদানি মূল্য প্রতিটি প্রায় দেড় কোটি টাকা। তবে বাংলাদেশে বাজারে এর মূল্য প্রায় ১২ কোটি টাকা, কারণ ৮০০ শতাংশ শুল্কের কারণে এর মূল্য অনেক বেশি। সংসদ সদস্য হিসেবে গাড়িগুলো শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা হলেও, প্রথম নিলামে দর খুবই কম উঠায় সরকারের রাজস্ব ক্ষতিসাধিত হচ্ছে।

এনবিআর এর পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, প্রথম নিলামে দর স্বল্প থাকার কারণে অনেক বিডারই গাড়িগুলো কিনতে পারেনি। গাড়িগুলোর দর কুলিয়ে উঠতে না পেরে তারা দ্বিতীয় নিলামের অপেক্ষায় ছিল, কিন্তু নতুন সিদ্ধান্তের কারণে সেই আশা অনেকটাই ক্ষুণ্ণ হয়েছে। ফলে সরকারের রাজস্ব আদায়ের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

অন্যদিকে, ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ শুল্কমুক্ত গাড়িগুলোর জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছিল, যেখানে পাঁচটি গাড়ির জন্য প্রায় ৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা মূল্য নির্ধারিত হয়েছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে, এই গাড়িগুলোর জন্য দর কৌশলে কম রাখা হয়, ফলে গাড়িগুলোর কেনাকাটা সম্ভব হয়নি। তবে গাড়িগুলো এক বছর ধরে শেডে নিরাপদে রাখা হয়, এবং এ বিষয়ে ফ্রেইট ও ওয়ারফেজ চার্জের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, এটি সরকারের সিদ্ধান্ত, কোনো আপত্তি নেই।

তবে, মাত্র এই ৩০টি গাড়ির ব্যাপারেই জটিলতা শেষ হয়নি। আরও কেনাকাটা আটকা পড়েছে ৩০০টির বেশি গাড়ি, যা ২০ বছরের বেশি সময় ধরে বন্দরে পড়ে রয়েছে। এই গাড়িগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি দাবি করছেন অনেকগুণ বিশেষজ্ঞ ও উদ্যোক্তা, কারণ দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় তাদের মূল্য কমে যায়, এবং বন্দরে আরও বেশি রাজস্ব আয় সম্ভব।

অবশেষে, এই পরিস্থিতির মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে, জুলাই মাসে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও ব্যারিস্টার সুমনসহ অন্তত ৭ জনের গাড়ি ছাড় করে নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, আটকা পড়া অনেক গাড়ি রয়েছে বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বের নামে, যেমন তারানা হালিম, জান্নাত আরা হেনরী, আবদুল ওয়াহেদ, আবুল কালাম আজাদ, এস আল মামুন, মুজিবুর রহমান ও আরও অনেকের। এসব বিষয় আগামী দিনগুলোতে সরকারের নিট সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করছে।