জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানাবে সরকারকে মতামত সমন্বয়ের ফলাফল

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ২:৩০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১০, ২০২৫

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর দেওয়া মতামত সুসংগঠিত ও সমন্বিত করে কমিশন আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে আলোচনা সম্পন্ন করে সরকারকে পরামর্শ দেবে। তিনি আরও জানান, যে প্রক্রিয়ায় Julho সনদ প্রণয়ন সম্ভব হয়েছে, তার ওপর একটি বিস্তারিত ও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। দ্রুতই এ প্রতিবেদন প্রকাশের পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট দল ও জোটগুলোকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করা হবে। এছাড়া, কমিশনের মেয়াদ শেষের আগে, অর্থাৎ ১৫ অক্টোবরের মধ্যে জুলাই সনদে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজনই মূল লক্ষ্য। বুধবার রাতে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে কমিশনের তৃতীয় পর্যায়ের বৈঠকের শেষে তিনি এই কথা বলেন। ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমাদের সময়সীমা মাত্র তিন দিন। এ সময়ের মধ্যে আমরা আগস্টকে জাতীয় সনদ, ২০২৫’-এর চূড়ান্ত সম্পন্ন করব। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ইতিমধ্যে সনদে স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত, এবং আমরা আশা করি, ১৫ অক্টোবরের মধ্যেই আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। তিনি আরও জানান, আগামী ১৮-১৯ অক্টোবরের মধ্যে সম্পূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে, যেখানে Julho সনদ প্রণয়নের পুরো প্রক্রিয়া এবং দলগুলোর জমা দেওয়া দলিলগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে। আলোচনায় জানানো হয়, ৫ অক্টোবরের বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, Julho জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের ব্যবস্থাও প্রনয়ণ করা হবে। এই ভোট কিভাবে এবং কখন অনুষ্ঠিত হবে, তা নির্ধারণের জন্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার বৈঠক ও আলোচনা হয়েছে। পরামর্শ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন একটি আদেশ জারি করে গণভোটের আয়োজন করবে, যেখানে দুটি অংশ থাকবে—বলা হবে বৃহত্তম ঐকমত্যের বিষয়গুলো এবং অন্য অংশে থাকবে ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্ট। এর মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন পরিষদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ গঠন করা হবে। গণভোটের ফলাফলে যদি অনুমোদন পাওয়া যায়, তবে সংশোধিত সংবিধানে আগস্ট সনদ অনুযায়ী সংশোধনগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ড. রীয়াজ জানিয়ে বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনের দিনেই নির্দিষ্ট গেজেটের মাধ্যমে গণভোটের প্রস্তাব দিয়েছে; আবার কিছু দল নির্বাচন আগে বা পরে এই ভোট আয়োজনের পক্ষে। তিনি উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক দলগুলো প্রায় সবাই ঐকমত্যে পৌঁছেছেন যে, ত্রয়োদশ সংসদকেই Julho জাতীয় সনদ, ২০২৫ বাস্তবায়নের জন্য সময় নির্ধারণ করতে হবে। দল ও জোটগুলো চাইছে, রাজনৈতিক ও পরামর্শদাতাদের মতামতের ভিত্তিতে কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের একজন সম্মানিত নেতা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, ড. আলী রীয়াজ বলেন, “আমরা সব কিছু পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত, আর সেই সঙ্গে যথাযথভাবে কার্যকর করার জন্য দীর্ঘ পথ অগ্রসর হয়েছি। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় প্রবর্তক হিসেবে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, তিনি সব সময় সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন, কাজের অগ্রগতি অনুধাবন করেছেন এবং প্রয়োজন হলে নির্দেশনাও দিয়েছেন। তাঁকে ধন্যবাদ জানাই এই জাতির অমূল্য সম্পদ হিসেবে।” তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা হচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ. আমাদের সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে, শুধু সনদ স্বাক্ষর করলেই হবে না, বরং এই চলমান প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে। গত বছর ফ্যাসিবাদের পতনের মাধ্যমে এক ঐক্যবদ্ধ শক্তি গড়ে উঠেছিল, যা এখনও অটুট রাখতে হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও ঐক্য বজায় রাখতে হবে—এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।” উল্লেখ্য, মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে শুরু হওয়া তৃতীয় পর্যায়ের বৈঠকে বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি, এবি পার্টিসহ প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এই বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। অংশগ্রহণ করেন আরও সদস্য: ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া। এছাড়া, আলোচনা প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার সহকারী মনির হায়দার।