গাজা যুদ্ধের অবসানে ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাব: মূল বিষয়গুলো

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ২:৪৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১, ২০২৫

ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান সংঘাত বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাবে ইতোমধ্যে নানা পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া Coming করে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। গত সোমবার হোয়াইট হাউস থেকে এ পরিকল্পনাটি প্রকাশ করা হয়েছে, যা দাবি করছে গাজায় ইসরায়েলি সেনা অভিযান অবিলম্বে বন্ধ করে দিতে পারে। যদি উভয় পক্ষ এই প্রস্তাব গ্রহণ করে, তবে যুদ্ধ দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। এর মধ্যে গাজায় বন্দি থাকা জীবিত ও মৃতের মরদেহ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ফেরত দেয়া হবে এবং ফিলিস্তিনিদের বন্দি মুক্তি নিশ্চিত করা হবে। এতে গাজা অঞ্চলটি অস্থায়ীভাবে একটি ফিলিস্তিনি সরকারের অধীনে চলবে, যেখানে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না। তবে ইসরায়েল গাজার উপর অধিকার হারাবে না। নেতানিয়াহু ট্রাম্পের প্রস্তাবের পক্ষে থাকলেও হামাস এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হামাসের কর্মকর্তা মাহমুদ মারদাউই জানান, তারা এই প্রস্তাবের লিখিত কপি এখনও পাননি।

ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাবের মূল বিষয়গুলো হলো:

১. গাজা উগ্রবাদ মুক্ত ও সন্ত্রাসবিহীন এলাকা হিসেবে গঠন, যা আশপাশের জন্য হুমকি হবে না।

২. গাজার জনগণের কাঙ্ক্ষিত কল্যাণে পুনর্গঠন, যারা দীর্ঘ সময় কষ্টে আছেন।

৩. উভয় পক্ষ প্রস্তাব মেনে নিলে যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ হবে। ইসরায়েলি বাহিনী সীমান্ত থেকে প্রত্যাহার করবে, সামরিক কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।

৪. ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সব ইসরায়েলি বন্দি, জীবিত বা মৃত, ফেরত পাঠাতে হবে।

৫. বন্দি মুক্তির পর, ইসরায়েল ২৫০ জন বন্দিসহ ১৭০০ গাজাবাসীকে মুক্তি দেবে। এতে যারা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পরে আটক হন, তাদেরও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

৬. বন্দি মুক্তির পরে, হামাসের যারা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করতে রাজি, তাদের ক্ষমা করে দেওয়া হবে। যারা গাজা ছাড়তে চায়, তাদের নিরাপদে অবস্থান ত্যাগের অনুমতি দেওয়া হবে।

৭. অবিলম্বে গাজায় বিশাল মানবিক সহায়তা পাঠানো হবে, যার মধ্যে পুনর্বাসন, হাসপাতাল ও রাস্তা নির্মাণের সরঞ্জাম অন্তর্ভুক্ত।

৮. মানবিক সহায়তা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হবে। রাফাহ ক্রসিং খোলা থাকবে, যেখানে চলতি বছরের জানুয়ারি চুক্তি অনুযায়ী সহায়তা আসবে।

৯. গাজা একটি প্রযুক্তিনির্ভর, অরাজনৈতিক ফিলিস্তিনি কমিটির অধীনে চলে, যেখানে যোগ্য বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। একত্রে নজরদারি করবেন ‘পিস বোর্ড’, যার নেতৃত্বে থাকবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

১০. গাজার পুনর্গঠনে একটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করা হবে।

১১. সেখানে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করা হবে এবং এতে শুল্ক, প্রবেশাধিকার বিষয়ে আলোচনা হবে।

১২. গাজা থেকে কাউকে জোরপূর্বক বের করা হবে না। যারা যেতে চান, যেতে ও ফিরে আসতে পারবেন নিজের ইচ্ছাতেই।

১৩. হামাস ও অন্যান্য গোষ্ঠী গাজার শাসনে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে অংশ নেবে না। সব সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করা হবে।

১৪. আঞ্চলিক দেশগুলো নিশ্চিত করবে যে, এই গোষ্ঠীগুলো প্রতিবেশী বা তাদের জনগণের জন্য হুমকি তৈরি করতে পারবে না।

১৫. যুক্তরাষ্ট্র ও আঞ্চলিক অংশীদাররা একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী (আইএসএফ) গঠন করবে। তারা গাজার নিরাপত্তা, পুলিশ প্রশিক্ষণ ও সীমান্তে কাজ করবে।

১৬. ইসরায়েল গাজাকে দখল বা অধিগ্রহণ করবে না। সেনারা ধাপে ধাপে সেনাবাহিনী এবং আইএসএফের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে।

১৭. হামাস প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে বা লম্বা সময় নিয়ে বিলম্ব করলে, তখনই আগের অনুযায়ী কার্যক্রম চালানো হবে।

১৮. শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংলাপ গড়ে তোলা হবে।

১৯. এই উদ্যোগগুলো ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্রের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পথ তৈরিতে ব্যবহার হবে।

২০. ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে বিভিন্ন দিক থেকে আলোচনা ও সংলাপের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বিশ্বের প্রভাবশালী মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় নেতারা এই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, হামাস এই প্রস্তাব মানলে তা সফল হবে; না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই পরিকল্পনায় হামাস গাজার শাসনে সম্পূর্ণভাবে থেকে যাবে না বলে বলা হলেও, ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা উল্লিখিত আছে। হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এটিকে ‘ঐতিহাসিক শান্তির দিন’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছেন, হামাস যদি এই প্রস্তাব মানে না, তবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ধ্বংস করার জন্য ইসরায়েলকে পূর্ণ সমর্থন দেবে।

নেতানিয়াহু বলছেন, প্রতিরোধশীল এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হলে লড়াই অব্যাহত থাকবে। তবে তিনি পরিষ্কার করেছেন, তিনি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিরোধী। যদিও পরিকল্পনায় গাজার থেকে ধাপে ধাপে সেনা প্রত্যাহারের কথা বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ এই উদ্যোগকে ‘আন্তরিক ও দৃঢ়’ পদক্ষেপ হিসেবে স্বীকার করেছে। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা যুদ্ধ বন্ধ, মানবিক সহায়তা পৌঁছানো ও বন্দি বিনিময়ে কাজ চালিয়ে যাবে। পাশাপাশি, সংযুক্ত আরব এবং অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোও এই প্রচেষ্টা স্বাগত জানিয়েছেন। তারা মনে করছে, এই চুক্তি দ্বিরাষ্ট্রের ভিত্তিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করবে। ইউরোপীয় নেতারা বিশ্বাস করেন, নেতানিয়াহুর ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া এই কাজে উৎসাহ যোগাবে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টার্মার বলেছেন, সব পক্ষকে একত্র হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করে এই চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে। হামাসের উচিত অস্ত্রস্তর অবসান করে সব জিম্মি মুক্তি দেওয়া।