বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ একদিনের জন্যও স্বচ্ছ ইতিহাস ধরে রাখতে পারেনি। তাদের ইতিহাস হলো লুটপাট, সন্ত্রাস এবং অর্থ পাচারের আদ্যপান্ত। এরা দেশের গণতন্ত্রকে রক্তাক্ত করে মৃত্যুচিহ্ন রেখে গেছে।

শনিবার বিকেলে কুমিল্লার টাউন হল মাঠে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ১৯৭১ সালে চব্বিশের আন্দোলনে আওয়ামী লীগ কমপক্ষে ১৪শ মানুষ হত্যা করেছে। এই আন্দোলনে দশ হাজারের বেশি মানুষ আহত ও পঙ্গু হয়েছেন। এত রক্তক্ষরণ, ত্যাগ এবং সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা আজ নিজস্বতা অর্জন করতে পেরেছি। আমাদের ইতিহাসের এই রক্তাক্ত দিকগুলো ভুলে গেলে হবে না।

তিনি আরও বলেন, বিএনপির ইতিহাস হলো সংস্থার ইতিহাস—সংস্কারের মাধ্যমে বাংলার মানুষকে সংগ্রাম ও মুক্তির পথে এগিয়ে নেওয়ার ইতিহাস। বিএনপি দেশের জন্য যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়ে আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে।

সালাহউদ্দিন আহমদ ধর্মের নামে রাজনৈতিক অপপ্রচার বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ইসলাম কোনও রাজনৈতিক বাক্স নয়। যারা ধর্মের নাম করে বিভাজনের চেষ্টা করে, তাদের অবশ্যই ভোটের মাধ্যমে মোকাবিলা করতে হবে। তিনি বলেন, একাত্তরের চেতনা ব্যবসায়ীরা এখন দিল্লিতে আশ্রয় নিয়েছে। চেতনার ব্যবসা, ধর্মের ব্যবসা বা নিরপেক্ষ নির্বাচনের গুজব—allই খারিজ করে দেন তিনি। জনগণ এখন সচেতন, কেউ চেতনা ব্যবসায়ীদের প্রশ্রয় দেবে না।

তিনি প্রশ্ন করেন, ‘কীভাবে কেউ কি জেনে যে, তারা জেন্নাতের টিকিট বিক্রি করতে পারে?’ এই সব অপপ্রচারকারীদের তিনি ধর্মের ব্যবসায়ী বলে আখ্যায়িত করেন।

সংস্কার প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, যারা সংস্কারের কথা বলে, তারা জানে না যে বর্তমানে আসল সংস্কারকারি তিনি—তারেক রহমান। তার ঘোষিত ৩১ দফাই এই দেশের প্রকৃত সংস্কার। আমরা ৩১ দফা যথেষ্ট মনে করে সেটাকে সম্পূর্ণ করি নাই; যদি অন্য কোনও যৌক্তিক সংস্থা আরও কিছু যুক্ত করে, তখন সেটা আলোচনার আওতায় আসবে। সংস্কার কোনও একক প্রক্রিয়া নয়; এটি চলমান এবং উন্নয়নের অঙ্গ। তিনি বলেন, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন—এই তিন বিষয় একসঙ্গে চলতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ এখন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, এবং একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে গণতন্ত্রের ধারা নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলHeld করেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকতে হবে, অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সত্য তুলে ধরতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে গুলিয়ে দেওয়া অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় সচেতন ও সক্রিয় থাকতে হবে।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা বিচার দাবি করছি—গণহত্যা, গুম ও খুনের সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। ট্রাইব্যুনাল জোরদার করে এই সুবিচার সম্পন্ন করতে হবে। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন এসব একসঙ্গে চলতে থাকবেন।

এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, কেন্দ্রীয় শিল্প বিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালাম, কুমিল্লা বিভাগের সহ-সংগঠনিক সম্পাদক মো. মোস্তাক মিয়া, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন এবং সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।