হাসিনা ও তার ঘনিষ্ঠদের বিচার সরকারে অগ্রাধিকারে Staff Staff Reporter প্রকাশিত: ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৫ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিচার সম্পন্ন করাকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একান্তই এর প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি এসব কথা জানান, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে গত বুধবার ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাবের সঙ্গে এক বৈঠকে। এই বৈঠকের মাধ্যমে তিনি দেশের স্বরাষ্ট্র পরিস্থিতি ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। অধ্যাপক ইউনূস আরও জানান, তিনি জাতিসংঘের সদর দপ্তরে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার তিনি নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কুফের সঙ্গে, এবং আগের দিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট স্টাব ও কসোভোর প্রেসিডেন্ট ভিওসা ওসমানির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকগুলোতে বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক পরিবর্তন, অন্তর্বর্তী সরকারের নানা সংস্কার পদক্ষেপ, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, রোহিঙ্গা সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আঞ্চলিক সহযোগিতা, এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিষয় উত্থাপিত হয়। বিশেষ করে, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় তিনি জানান, বিচার প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং যথাযথ নিয়মে পরিচালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘সত্ত্বেও কিছু উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার জন্য হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা প্রত্যর্পণের আবেদন করেছি। অন্য আলোচনা অংশে তিনি উল্লেখ করেন যে, অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে, যা দেশের রাজনৈতিক রূপান্তরে বেশ কার্যকরী হবে বলে বিশ্বাস। তিনি জানান, আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ ও অবাধ নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকার প্রস্তুত। গত ১৪ মাসে আন্তঃদেশীয় সমর্থন অপ্রতিরোধ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও তিনি জোর দিয়ে বলেন। প্রধান উপদেষ্টা আরও উল্লেখ করেন, ১৫ বছর ধরে দেশের জনগণ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে, আর এখন তারা এই অপেক্ষার অবসান দেখতে মুখিয়ে রয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, বড় ধরনের রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার সম্পন্ন হলে দেশের রাজনীতি আরও সুদৃঢ় হবে। অপরদিকে, পাকিস্তানে সম্প্রতি ভয়ানক বন্যার জন্য গভীর শোক প্রকাশ করেন ইউনূস, বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা ও তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি জানান, বাংলাদেশের আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং তিনি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারমূলক পরিকল্পনায় আশাবাদী, যা দেশের রাজনৈতিক রূপান্তরকে আরও সুদৃঢ় করবে। ব্যাপক আলোচনা হয়, যেখানে দুই নেতাই regional সহযোগিতা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন। ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে ইতালির বিনিয়োগ ও সম্পর্কের ভবিষ্যৎ বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়। তারা আলোচনা করেন ভাইরাস ও অভিবাসন চ্যালেঞ্জ, রোহিঙ্গা সমস্যা ও আগামী বছরের বাংলাদেশের সফর উপলক্ষে পরিকল্পনাসহ। অভিবাসন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মেলোনি ইঙ্গিত দেন, তারা ঢাকার সঙ্গে সহযোগিতার জন্য দৃঢ় আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং মানবপাচার বন্ধে শক্তিশালী ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোর দেন, যা ভূমধ্যসাগরে বহু মানুষের মৃত্যুর অন্যতম কারণ। ইউনূস জানান, বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সরকারের মানবপাচার বিরোধী কঠোর নীতি ও কার্যক্রম রয়েছে। তিনি আরও বলেন, “আন্তর্জাতিকভাবে মানবপাচার মোকাবেলায় আরও সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন।” সর্বশেষে, তিনি জানান যে, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন শেষে তিনি নিজ পরিবর্তনীয় ভূমিকায় ফিরে যাবেন। মেলোনি প্রধানমন্ত্রীও বাংলাদেশে একটি উন্নত নির্বাচন প্রক্রিয়া দেখতে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং ইতালি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম উন্নয়নশীল সহযোগী হিসেবে থাকবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও দুজন আলোচনা করেন। ইউনূস বাংলাদেশের মোট এক মিলিয়নের বেশি শরণার্থীর জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য ও সমর্থন বাড়ানোর আহ্বান জানান। এর পর, মেলোনি ঘোষণা করেন, তারা আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রতিনিধিদল পাঠাবে। SHARES জাতীয় বিষয়: