ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষণে জাতিসংঘকে ‘অকার্যকর’ ঘোষণা

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর বক্তৃতায় দৃঢ়ভাবে জাতিসংঘের সমালোচনা করেছেন। তিনি মনে করেন, শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ কার্যত অকার্যকর। এই অধিবেশনে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা অংশগ্রহণ করেন, যেখানে শুরু হয় বিতর্কের পর্ব। অধিবেশনের প্রথম ভাষণে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, এরপর ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা নিজের বক্তব্য দেন। এরপর ইউনিয়নের মূল অনুষ্ঠানে এসে ট্রাম্প বলেন, “জাতিসংঘের অসাধারণ সম্ভাবনা আছে, আমি সব সময়ই বলেছি—এটি অনেক সম্ভাবনাময়, কিন্তু সত্যিকার অর্থে এটি তার কাছাকাছিও পৌঁছাচ্ছে না।” ট্রাম্প নিজে নিজের প্রশংসা করে বলেন, তিনি বিশ্বজুড়ে বেশ কিছু সংঘাতে মধ্যস্থতা করে শুভ ফল অর্জন করেছেন। তিনি দাবি করেন, তিনি সাতটি যুদ্ধ বন্ধ করেছেন, যদিও এর মধ্যে কয়েকটিতে ওয়াশিংটনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে তিনি বলেন, “বিশ্বের শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ অকার্যকর। এই জন্য আমি মনে করি, এই কাজের জন্য আমাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া উচিত। খুব দুঃখের বিষয়, জাতিসংঘের পরিবর্তে আমার এই কাজগুলো করতে হয়েছে এবং আন্তর্জতিক সংস্থাগুলো সব সময়ই সাহায্য করার চেষ্টা করেনি।” ট্রাম্প আরও উল্লেখ করেন, জাতিসংঘের সদর দপ্তরে তিনি একটি ভাঙা লিফট পেয়েছেন এবং টেলিপ্রম্পটারে দেখাতে অসুবিধা হচ্ছে। তিনি একথা বলে হাস্যরস টানেন, “জাতিসংঘ থেকে আমি এই দুটি জিনিস পেয়েছি—একটি খারাপ এসক্যালেটর এবং একটি খারাপ টেলিপ্রম্পটার।” তিনি অভিযোগ করেন, ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে হামাসকে স্বীকৃতি দেওয়া বোঝানো হচ্ছে, হিংসা বাড়ানোর জন্য। তিনি বলেন, “জাতিসংঘের কিছু সদস্য একতরফাভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিচ্ছে, যা হামাসের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য বড় পুরস্কার হবে। ৭ অক্টোবরের ভয়াবহ নৃশংসতা এবং ঘটনার জন্য এটি বিশেষভাবে ক্ষতিকর।” একই সময়ে, অনেক দেশের সরকারপ্রধান গাজা যুদ্ধের পরে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলো, যা গাজা যুদ্ধের প্রায় দুই বছর পর একটি ঐতিহাসিক পরিবর্তনের সূচনা করল। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ জানিয়েছেন, ফ্রांस ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে, এবং বলছেন, ‘দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের জন্য আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করতে হবে।’ ইউরোপের অন্যান্য দেশ যেমন লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, মোনাকো ও বেলজিয়ামও ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি ঘোষণা করে। কানাডা, ব্রিটেন, পর্তুগাল ও অস্ট্রেলিয়াও একই পথে হাঁটছে। ট্রাম্প এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নিয়ে যে মন্তব্য করেন, তা হলো—এতে “ভুল বার্তা” পৌঁছাবে, যা সহিংসতা বাড়াতে এবং শান্তি প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তিনি বললেন, “রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রধান অর্থদাতা হলো ভারত ও চীন, কারণ তারা রাশিয়ার তেল ক্রয় অব্যাহত রেখেছে। পাশাপাশি, ন্যাটো দেশগুলি রাশিয়ার জ্বালানি এবং পণ্য আমদানি খুব একটা বন্ধ করেনি।” ট্রাম্পের ভাষায়, “এখনো যদি রাশিয়ার সাথে শান্তি চুক্তি করতে না চায়, তাহলে ওয়াশিংটনে কঠোর শুল্ক আরোপের জন্য প্রস্তুত থাকুন, এতে রক্তপাত খুব দ্রুত বন্ধ হবে। ইউরোপীয় দেশগুলোকেও এর সঙ্গে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।” তিনি বললেন, “এক বছর আগে, আমাদের দেশ গভীর সংকটে ছিল, এখন আমরা সবচেয়ে শক্তিশালী। আমাদের অর্থনীতি, সীমান্ত, সামরিক, বন্ধুত্ব এবং আবেগ সবকিছুতেই আমরা এগিয়ে এবং শক্তিশালী। আমাদের কর বর্জন চালু করা হয়েছে, শেয়ার বাজার শক্তিশালী, মজুরি বাড়ছে। অবৈধ অভিবাসীদের প্রবেশ নিবিড়ভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে—যদি কেউ অবৈধভাবে আসেন, তাকে জেলে যেতে হবে।” বিশ্বজুড়ে সংঘাতে তিনি উল্লেখ করেন, যে তিনি ক্ষমতায় ফিরেই সাতটি যুদ্ধ বন্ধ করেছেন। তিনি বললেন, “ইসরায়েল-ইরান, পাকিস্তান-ভারত, রুয়ান্ডা-গণতান্ত্রিক কঙ্গো, থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া, আর্মেনিয়া-আজারবাইজান, মিশর-ইথিওপিয়া ও সার্বিয়া-কসোভো—এই সমস্ত সংঘাতের মধ্যে অন্য কেউ এর কাছাকাছি কিছু করতে পারেননি।” এইরকম দৃশ্যমান অর্জনগুলো তার নেতৃত্বের প্রমাণ বলে মনে করেন ট্রাম্প, যা অন্য কাউকে পার না বলেও দাবি করেন।