বাংলাদেশের আর্থিক খাত ব্যাংক ঋণে অতিরিক্ত নির্ভরশীল: অর্থ উপদেষ্টা

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৯:৪৫ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন যে, বাংলাদেশের আর্থিক খাত বর্তমানে অত্যন্ত বেশি ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভরশীল হয়েছে। এটি দেখা যায় যে, বেসরকারি ও সরকারি উভয় খাতই বড় পরিমাণে ঋণ গ্রহণ করে থাকে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঋণ পরিশোধ না করেই পার পেয়ে যায়। এই বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ট্র্যাজেডি হিসেবে দেখা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) যৌথ উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের বন্ড ও সুকুক বাজার উন্মোচন: রাজস্ব স্থিতি, অবকাঠামো বাস্তবায়ন ও ইসলামী মানি মার্কেট উন্নয়ন’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন যে, ঝুঁকি ভাগাভাগির জন্য একটি সক্রিয় এবং কার্যকর পুঁজিবাজার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের বোঝার দরকার যে, বন্ড, ডিবেঞ্চার ও সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের সঙ্গে ঝুঁকি জড়িত। পুঁজিবাজার কোনো চিরস্থায়ী বা নিশ্চয়তা জোটানোর আয়ের উৎস নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরও বলেন, শেয়ারবাজারের ছোট বিনিয়োগকারীরা অনেক সময় মনে করে যে, বিনিয়োগ করলেই মুনাফা নিশ্চিত, কিন্তু আসলে তারা এই বাজারের ঝুঁকিগুলোকে মানতে চায় না। এজন্য ডিএসই ও বিএসইসিকে আরও উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে যাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এই বিষয়ে আরও সচেতন হয়।

সুকুক বিষয়ে তিনি উল্লেখ করেন, এই ইনস্ট্রুমেন্টটি ব্যাংকের ওপর চাপ কমাতে ব্যাপক সম্ভাবনা রাখে, যদি সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে দেশে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকার বেশি মূল্যের সুকুক আছে, যার বেশিরভাগই সরকারি প্রকল্পে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে তিনি মনে করেন, বেসরকারি খাতও এই টুলটি ব্যবহার করে অবকাঠামো উন্নয়ন ও ব্যবসায়িক উদ্যোগের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে পারে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দেশের আর্থিক খাতকে আরও গতিশীল এবং শক্তিশালী করতে হলে শুধুমাত্র ব্যাংক নয়, বরং পুঁজিবাজার, বিমা খাত এবং বিশেষ ধরনের ট্যাক্স ইনস্ট্রুমেন্টগুলোতেও গুরুত্ব দিতে হবে। জনগণ ও সরকারের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধির জন্য কাজ করতে হবে। মানুষ বুঝতে পারবে যে, তারা কর প্রদান করে চিরস্থায়ী সেবা ও সুবিধা পাচ্ছে, যা সরকারের কার্যকারিতা ও শাসনব্যবস্থার উপর মানুষের আস্থার প্রতীক।

তিনি কমতি জানান, দেশের একটি বড় সমস্যা হলো অর্থায়নের অভাব। সরকারি কর্মকর্তারা ধারণা করে সবকিছু ব্যাংকের মাধ্যমে করতে পারবে, কিন্তু বাস্তবে আমাদের পর্যাপ্ত অর্থের যোগান নেই। এজন্য তিনি পুঁজিবাজারের শক্তিকরণ ও সুকুক বন্ডের সম্প্রসারণের ওপর জোড়া দিয়েছেন, যেন সরকারি ও বেসরকারি প্রকল্পের অর্থায়নে ব্যাংকের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমানো যায়।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে অনেক কিছু করার আছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং বাংলাদেশ ব্যাংক যৌথভাবে কাজ করছে। তিনি জানান, এই ক্ষেত্রে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে, যা শিগগিরই সরকারকে উপস্থাপন করা হবে। সেখানে সরকারি ও করপোরেট বন্ডের চাহিদা বৃদ্ধির চাপানো ও কার্যকরী নীতিমালা বিষয়ে মতামত থাকবে। আমাদের লক্ষ্য, বাংলাদেশের ছোট বাজারকে বৃহৎ এবং শক্তিশালী বাজারে রূপান্তর করা।

অনার সাথে আরও বক্তব্য রাখেন পুঁজিবাজার উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী এবং আর্থিক বিভাগ সচিব নাজমা মোবারেক। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নিউ অর্লিন্সের অধ্যাপক এম. কবীর হাসান। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান খোন্দকার রাশেদ মাকসুদ।