ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিতে নতুন বার্তা

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ২:৩৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫

অসাধারণ সাহস ও নিষ্ঠার মাধ্যমে যে কেউ অসম্ভব কিছু করতে পারে, এই গল্পটি প্রতিটি শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণার উৎস। আমাদের মনে রাখতে হবে, লড়াই শুধু বিজয়ের জন্য নয়, বরং একটি সুন্দর ও উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য। মেধা, পরিশ্রম, এবং সততা ছাড়া সফলতা অর্জন অসম্ভব। এই মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটেছে আপামর ছাত্রের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে, যেখানে মেধা ও সততা গুরুত্ব পাচ্ছে সর্বোচ্চ সম্মান হিসেবে।

এটি এক অসাধারণ ও অভিস্মরণীয় বিজয়, যেখানে শিবিরের তিন প্রতিদ্বন্দ্বী—সাদিক কায়েম, এস এম ফরহাদ ও মহিউদ্দিন খান—প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেয়ে দ্বিগুণ বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। শিবিরের এই তিন যুব নেতা শীর্ষ পদে নির্বাচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছড়িয়েছে ব্যাপক আলোড়ন। ভিপি পদে সাদিক কায়েম পেয়েছেন ১৪ হাজার ৪২ ভোট, যা প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের নেতা আবিদের থেকে দ্বিগুণের বেশি। জিএস পদে এস এম ফরহাদ ১০,৭৯৪ ভোট পেয়ে সফল হন, যেখানে ছাত্রদলের হামিম পেয়েছেন কেবল ৫৬৫৮ ভোট। একইভাবে এজিএস পদে মহিউদ্দিন খান ৯৫০১ ভোটে জয়লাভ করেন, যেখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী মায়েদ পেয়েছেন ৪২৫৪ ভোট। এই বিপুল ব্যবধানই প্রমাণ করে, ছাত্র সমাজের ব্যাপক সমর্থন এই শিবির যুবনেতাদের পেয়েছেন।

মহিউদ্দিন খান, যিনি চোখে চশমা, নাচন পাঞ্জাবি ও ভদ্রতার চেহারায় স্পষ্ট একভদ্রতা ও মেধার ছাপ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ১৮-১৯ সেশনের এই শিক্ষার্থী থাকেন প্রথম শ্রেণীর সেরা স্থান অর্জনকারী। মাস্টার্সেও ৪.০০ সিজিপিএ পেয়ে থাকেন তিনি। ছাত্র জীবনেই তিনি হলের মধ্য দিয়ে ছাত্ররাজনীতির মূল ধারায় অবস্থান করে ছিলেন। তিনি ছাত্ররাজনীতিতে দাপটের সঙ্গে এক্সেন্ট্রিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত।

অপরদিকে, এস এম ফরহাদ একজন ডিবেটর এবং রাজনৈতিক সচেতনতা সম্পন্ন যুব নেতা। তিনি বাম রাজনীতি ও ছাত্রদলের ভুল ঠিক করতে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন, পাশাপাশি হঠাৎ করে তার রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশের পরেও ছাত্রসমাজের কাছ থেকে সমর্থন পান। তার এই নির্বাচন জয় প্রকট স্বচ্ছতা ও তার দায়িত্বরত দক্ষতার ফল। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী।

আর সাদিক কায়েম—যিনি এই নির্বাচনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাম—তাঁর মাধ্যমে পুরো ডাকসুর ভবিষ্যৎ পরিচালিত হবে। তিনি শিবিরের মূল স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত, প্রচার-প্রচারণায় সাধারণ হলেও তার জয় বেশ গুরুত্ববহ। তিনি বর্তমান ডাকসুর প্রথম এবং একমাত্র শিবিরের ভিপি। নামাজরত অবস্থায় তার একটি ভিডিও ভাইরাল হলে, তার দলের সুদৃঢ় বিশ্বাস ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তিনি ছাত্রাবাসের সমস্যাগুলি সমাধানে কাজ করতে চান, ছাত্রদের পার্টটাইম চাকরি, আধুনিক লাইব্রেরি, আবাসনের প্রসার, শিক্ষাক্রমের উন্নতি নিয়ে ভাবনা প্রকাশ করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র থেকে উঠে আসা একজন চাপের মধ্যেও নিজেকে উচ্চস্তরে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

বলা যায়, বড় কিছু অর্জনে কেবল মেধা নয়, দৃঢ় সংকল্প ও সততা অপরিহার্য। এই নির্বাচনের ফলপ্রসূতা দেখায় যে, মেধা ও সততার সমন্বয় থাকলে যেকোনো বাধা অতিক্রম করা সম্ভব। ছাত্র রাজনীতিকে কলঙ্কমুক্ত করে নতুন ইতিহাস রচনা করার এই সুযোগ এখন হাতের নাগালে। বিজয় কেবল একটি পদ নয়; এটি লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। এই পথচলা নতুন দিনের শুরু হিসেবে দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

সংক্ষিপ্ত জীবনী:
ডঃ তারনিমা ওয়ারদা আন্দালিব, বর্তমানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক এবং যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইমপ্যাক্ট গ্রুপে গ্লোবাল কনসালট্যান্ট ডিরেক্টর।
দাউদ ইব্রাহিম হাসান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট, ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত, এবং এআইডিএলসি ফাইনান্সের মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের সদস্য।