আগস্টে ৪৫১ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪২৮ জন

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ২:৩১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫

গত আগস্ট মাসে সারাদেশের বিভিন্ন সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে সমগ্র দেশে মোট ৪৫১টি দুর্ঘটনায় আরও নিহত ৪২৮ জন এবং আহত হয়েছেন ৭৯১ জন। এই দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা, যা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হতাহত ও প্রাণহানি ঘটিয়েছে।

সম্প্রতি পাঠানো রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের মাসিক প্রতিবেদন এই তথ্য বিস্তারিতভাবে জানিয়েছে। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানের পাঠানো প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৬৮ জন নারী এবং ৩৪ জন শিশু রয়েছে।

আগস্ট মাসে মোট ১৪৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৩২ জন নিহত হয়েছেন, যা মোট দুর্ঘটনার প্রায় ৩১.৯২ শতাংশ এবং নিহতদের প্রায় ৩০.৮৪ শতাংশ। এছাড়াও, পথচারী হিসেবে ৮৩ জন, অর্থাৎ ১৯.৩৯ শতাংশ মারা গেছেন, অন্যদিকে যানবাহনের চালক বা সহকারী হিসেবে ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা ১২.১৪ শতাংশ।

এ ছাড়াও, নৌদুর্ঘটনা ঘটেছে ১৯টি, যেখানে নিহতের সংখ্যা ২৩ জন, আহত ১৭ জন এবং নিখোঁজ রয়েছেন নয়জন। রেল দুর্ঘটনা ও ঘটেছে ৩৭টি, এতে নিহত হয়েছেন ৩১ জন, আহত হয়েছেন ১১ জন।

প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ। বাস দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩০ জন, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকাপে ২৭ জন, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্সে ২১ জন, তিনচাকার যানবাহনে ৯৭ জন, এছাড়াও সাবেকি যানবাহন যেমন নসিমন, ভটভটি, টমটম ও মাহিন্দ্রায় ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ, বাইসাইকেল আরোহী হিসেবে ৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটেছে মহাসড়কে, মোট ২১৪টি, এর পরে স্থান পেয়েছে আঞ্চলিক সড়কসহ অন্যান্য রাস্তাগুলো। দুর্ঘটনার ধরন অনুসারে দেখা গেছে, মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে ৯০টি, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘটেছে ২০৭টি, পথচারী চাপা দেওয়া হয়েছে ৮৫টি, পেছন থেকে আঘাত হয়েছে ৬২টি, আর অন্যান্য কারণে ৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে।

ঢাকা বিভাগে এ মাসে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে, যেখানে ১১৯টি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এবং ১১৭ জন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা হয়েছে, যেখানে মাত্র ১৮টি দুর্ঘটনায় ১৬ জন মারা গেছেন। রাজধানী ঢাকাতেও ঘটেছে ৩৭টি দুর্ঘটনা, এর মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৩২ জন, আহত হয়েছেন ৪৬ জন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে এককভাবে সবচেয়ে কম, যেখানে ছয়টি দুর্ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।

প্রধান কারণ হিসেবে জানানো হয়েছে— ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ও রাস্তাঘাট, বেপরোয়া গতি, অদক্ষ চালক, মানসিক বা শারীরিক অসুস্থতা, অপ্রতুল ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, তরুণদের মোটরসাইকেল চালানোর অসতর্কতা, ট্রাফিক আইন না মানা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি, এবং গিয়াসহ মাঠের চাঁদাবাজি।

সংস্থাটির সুপারিশগুলো হলো— দক্ষ চালক তৈরির প্রক্রিয়া জোরদার, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নিয়মিত নির্ধারণ, বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি, ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে কার্যকর করা, মহাসড়কে ধীরগতি যানবাহন বন্ধ ও সার্ভিস রোড নির্মাণ, প্রতিটি মহাসড়কে রোড ডিভাইডার স্থাপন, চাঁদাবাজি বন্ধ করা এবং ট্রেন ও নৌপথের উন্নয়ন যাতে সড়ক পরিবহন চাপ কমে। এ ছাড়াও, টেকসই পরিবহন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও কার্যকর করা এবং ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে সংস্থাটি।