গাজায় হতাহত দুই লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি Staff Staff Reporter প্রকাশিত: ২:৪২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫ গাজার চলমান সংকট ও যুদ্ধ পরিস্থিতির ব্যাপারে উন্নত ও বিস্তৃত তথ্য প্রকাশ করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাবেক চিফ অব স্টাফ হারজি হালেভি। তিনি সম্প্রতি এক স্বচ্ছ ও বিস্ফোরক মন্তব্যে জানিয়েছেন, গত কয়েক মাসে গাজায় দেড় লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত বা আহত হয়েছে। তাছাড়া, তিনি স্বীকার করেন যে, এই সেনা কর্মকর্তা ও তার অধীনে থাকা অন্যরা সামরিক অভিযানের জন্য কোনও ধরনের আইনি পরামর্শ নেননি বা ওই বিষয়কে গুরুত্ব দেননি। ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, এই যুদ্ধ শুরুর পরের ১৭ মাসে ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছেন হালেভি। সম্প্রতি এক দক্ষিণ ইসরায়েলি কমিউনিটি সভায় তিনি বলেছেন, গাজার ২২ লাখ বাসিন্দার মধ্যে অন্তত ১০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা প্রায় ২ লাখের বেশি মানুষ। এই পরিসংখ্যান গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপস্থাপিত তথ্যের সঙ্গে মিলে যায়, যা আগে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ হুমাসেরPROPAGANDA বলেও উপেক্ষা করেছিল। তবে আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো এই তথ্যগুলোকে এখন বেশ বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে মানছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সংঘাতের আরেকিসপ্তাহে, গাজায় নিহতের সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৪,৭১৮ জন। আহত হয়েছেন আরও ১৬৩,৮৫৯ জন। এছাড়া, বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। এর মধ্যে গত শুক্রবারের ইসরায়েলি আঘাতে আরও ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে, বিশেষ করে গাজা সিটির আশপাশে। বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দা সূত্র থেকে পাওয়া ফাঁস হওয়া তথ্য অনুযায়ী, মে মাস পর্যন্ত নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৮০ শতাংশই বেসামরিক নাগরিক ছিলেন। এর পাশাপাশি, ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলে হতাহত হয় প্রায় ১,২০০ জন, যাতে অতিরিক্ত ৮১৫ জন ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিক ছিল। অধিকাংশই সম্ভবত সামরিক সদস্য বা সাধারণ মানুষ। হারজি হালেভি এক সভায় বলেন, ‘এটি কোনও নরম যুদ্ধ নয়। আমরা প্রথম দিন থেকেই মুক্ত হাতে দায়িত্ব পালন করছি।’ তিনি দাবি করেন, ৭ অক্টোবরের আগেই ইসরায়েল আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল। যদিও তিনি জোর দিয়ে বলেন, আইডিএফ আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সীমারেখার মধ্যে কাজ করে, তবে স্বীকার করেন যে, তিনি এবং তার দল কখনোই আইনি পরামর্শের গুরুত্ব দেননি। তার ভাষায়, ‘কখনো কেউ আমাকে থামাতে আসেনি। কখনোই নয়। এমনকি অ্যাডভোকেট জেনারেল ইফাত তোমের-ইয়েরুশালমি পর্যন্ত, যিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি।’ তবে এই মন্তব্যের রেকর্ডিং প্রকাশ পাওয়ার পর, বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম ও বিশ্লেষক দেখেছে, হালেভির এই বক্তব্য প্রকৃতপক্ষে দেখায় যে, সামরিক আইনি উপদেষ্টারা মূলত আইডিএফের কার্যক্রমের বৈধতা প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করেন। দুঃখজনক বিষয় হলো, এই মন্তব্যের বিষয়ে দ্য গার্ডিয়ান এবং অন্যান্য সূত্র এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি। অন্যদিকে, ইসরায়েলি মানবাধিকার আইনজীবী মাইকেল সফার্দ মন্তব্য করেছেন, হালেভির এই বক্তব্য নিশ্চিত করে যে, সেনাবাহিনীর আইনী উপদেষ্টারা কার্যত শুধুই ‘রাবার স্ট্যাম্প’ হিসেবে কাজ করেন। অপরদিকে, হারেৎজের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, হালেভির উত্তরসূরি বর্তমান আইডিএফ চিফ অব স্টাফ ইয়াল জামিরও একইভাবে সামরিক অ্যাডভোকেটের পরামর্শ উপেক্ষা করেছেন। তিনি জানিয়েছিলেন, গাজায় প্রায় ১০ লাখ মানুষের জন্য দক্ষিণে নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা থাকলেও, সেই পদক্ষেপ নেওয়ার আগেই হামলা চালানো হয়। ফলে, বিস্তীর্ণ গাজা শহরে যারা আশ্রয় নিতে পারেনি বা ঘরবাড়ি ছাড়তে চাননি, তারা হয়তো সেসব মৃত্যুকেও অস্বীকার করতে পারেন। একই zamanda, জাতিসংঘে সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব পাস হয়েছে, যেখানে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে ব্যাপক সংখ্যক দেশ সম্মত হয়েছে। এই প্রস্তাবের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলা নিন্দনীয় এবং গাজার ওপর ইসরায়েলি অমানবিক ভূমিকা—অবরোধ, বোমাবর্ষণ ও মানবিক বিপর্যয়—একেবারেই দণ্ডনীয়। এছাড়া, এই প্রস্তাবে সময়সীমাসহ দ্রুত দ্বি-রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এদিকে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, ফিলিস্তিন কখনোই স্বাধীন রাষ্ট্র হবে না। এই ঘোষণা, পাশাপাশি জাতিসংঘের সিদ্ধান্তগুলোকেই তিনি অস্বীকার করেছেন। প্রস্তাবের পর, ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই প্রস্তাবের মাধ্যমে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি, যা তাদের জন্য একধরনের কঠোর বার্তা। তবে, হামাস এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে এবং এটিকে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে দেখছে। কয়েকটি দেশ এই সুপারিশে আনুষ্ঠানিকভাবে পক্ষে ভোট দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে, যা ভবিষ্যতেও ফিলিস্তিন স্বীকৃতি বাড়ানোর পথ সুগম করবে বলে আশা করছে বিশ্লেষকরা। SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: