ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলের মাধ্যমে নতুন বার্তার পথচলা

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ২:৩৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫

ডাকসু নির্বাচন ছাত্ররাজনীতির এক নতুন দিক নির্দেশনাতা হিসেবে দেখা যাচ্ছে। এই নির্বাচনটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে অস্থিরতা নয়, বরং সাহস, নিষ্ঠা এবং সততার গুরুত্বকে আবারো প্রকাশ করেছে। এটি স্পষ্ট করে দিয়েছে, শুধুমাত্র বিজয় অর্জনই নয়, শিক্ষাজীবনের সঠিক দিকনির্দেশনা ও ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্যও লড়াই করতে হয়। মেধা, পরিশ্রম এবং সততার সমন্বয়ে নির্মিত হয় নতুন ইতিহাস, আর এই ডাকসু নির্বাচন তারই প্রমাণ স্বরূপ। এখানে বিজয় মানে শুধু একটি পদের জন্য নয়, বরং জনমত ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থের জন্য এক বড়ো মাইলফলক।

অত্যন্ত চমকপ্রদ ফলাফল নিয়ে এসেছে এই নির্বাচন। শিবিরের প্রার্থীরা যেমন শিরোপা জিতেছেন, তেমনি তাদের জয়ের ব্যবধানটিও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শিবিরের তিন প্রার্থী—সাদিক কায়েম, এস এম ফরহাদ ও মহিউদ্দিন খান—অদ্ভুত জনপ্রিয়তা ও প্রভাবের সাক্ষর রেখেছেন। ভিপি পদে সাদিক কায়েম পেয়েছেন ১৪ হাজার ৪২ ভোট, যা প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে অনেক বেশি। ছাত্রদলের প্রার্থী বোকাসিং সাফল্যে হতবাক অনেকের মধ্যে, তার সংগ্রাম ও নেতৃত্বের গুণাবলী নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। জিএস পদে ফরহাদ পেয়েছেন ১০,৭৯৪ ভোট এবং ছাত্রদলের হামিম পেয়েছেন ৫,২৮৩ ভোট, যেখানে বিশাল ব্যবধানের জন্য সবাই তাকিয়ে ছিল। একইভাবে, এজিএস পদে মহিউদ্দিন খান অর্জন করেছেন ৯,৫০০১ ভোট; তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের মায়েদ পেয়েছেন ৪,২৫৪ ভোট। অর্থাৎ, ভোটের ব্যবধান স্পষ্টভাবেই শিবিরের শক্তির প্রাবল্য তুলে ধরেছে।

শিবিরের এই তিন প্রার্থীর পেছনের গল্প বেশ অনুপ্রেরণামূলক। মহিউদ্দিন খান, যিনি শিক্ষাজীবনে সেরা ফলাফলের পাশাপাশি ভদ্রতা ও মেধার প্রতিচ্ছবি হিসেবে পরিচিত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অসাধারণ একজন শিক্ষার্থী। তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম এবং মাস্টার্সেও অসাধারণ পারফরমেন্স করেছেন। তিনি ছাত্র জীবনে নানা সাফল্য ও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর এই নির্বাচনে জয় তারই স্বীকৃতি।

অন্যদিকে, এস এম ফরহাদের নামও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ছোটখাটো দেহের but একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। একজন দক্ষ ডিবেটর হিসেবে তার খ্যাতি তৈরি, ছাত্ররাজনীতিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তার পরিচয় অনেকের অজানা থাকতেই তাকে ভোট দিয়েছেন ছাত্রসমাজ। ২০০৪ সালে জানা গেল তার আসল পরিচয়, তখন তার বন্ধুরা অবাক হয়েছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে। তবে, তিনি নিজেকে সফল ও নিরপেক্ষ নেতার হিসেবে প্রমাণ করে গেছেন।

আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তিনি হলেন সাদিক কায়েম। যিনি শিবিরের অন্যতম মুখ হিসেবে পরিচিত, তার বিজয় অনেককে চমকে দিয়েছে। তিনি এই প্রথম শিবিরের প্রার্থী হিসেবে ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন। বিজয়ের পর তার নামাজরত অবস্থায় একটি ভিডিও প্রকাশিত হয় যেখানে তিনি বলছেন, “ডাকসুর কাজ নেতা তৈরি করা নয়, শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ”। তিনি এজিএস পদেও অপ্রতিরোধ্যভাবে এগিয়ে গেছেন। তার লক্ষ্য সমাজের নানা সমস্যা সমাধানে কাজ করা, বিশ্ববিদ্যালয়কে আধুনিক ও শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্বববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা। তিনি নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান, যিনি কঠোর পরিশ্রমে নিজের স্থান করে নিয়েছেন।

সর্বোপরি, এই নির্বাচনের ফলাফল প্রমাণ করে, মেধা, সততা ও দৃঢ় সংকল্পের পাশাপাশি নেতা হওয়ার জন্য প্রত্যেকে অপ্রতিরোধ্য। শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন অনুপ্রেরণার দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে এই নির্বাচন। এটি নিঃসন্দেহে বলে দেয়, বদলে যাওয়ার দীর্ঘ পথের এক নতুন সূচনা। ভবিষ্যতে ছাত্ররাজনীতির জন্য এটি একটি ইতিবাচক বার্তা, যেখানে কলঙ্কমুক্তি ও জনমুখী নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে। এই বিজয় কেবলমাত্র এক পদের নয়, এটি লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর প্রত্যাশা ও স্বপ্নের প্রতিরূপ। এক নতুন দিনের সূচনাসংবলিত এই পথচলা যেন অপ্রতিরোধ্য ও সফল হয়।