টুইন টাওয়ার হামলার প্রায় দুই দশক পেরিয়ে গেছে

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ২:৪৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৫

টুইন টাওয়ারে হামলার প্রায় দুই দশক হয়ে গেছে। প্রায় ২৪ বছর আগে, ২০০১ সালে, যুক্তরাষ্ট্রে চারটি যাত্রীবাহী প্লেন ছিনতাই করে সেগুলোর মাধ্যমে ভয়ঙ্কর হামলা চালানো হয় নিউইয়র্কের বিশ্ববিখ্যাত টুইন টাওয়ারে। এই হামলার কারণে হাজারও মানুষ প্রাণ হারান, এটি ছিল শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী আক্রমণগুলোর অন্যতম। এই ঘটনা শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেই নয়, গোটা বিশ্বকেই চমকে তুলেছিল ভয়াবহতার দিক থেকে।

এদিকে, মার্কিন সাংবাদিক টাকার কার্লসন দাবি করেছেন, ইসরায়েলি গোয়েন্দারা ৯/১১ হামলার আগেই এই ঘটনার বিষয়ে জানতেন। এক প্রামাণ্যচিত্র সিরিজে তিনি আরও জানান যে, দীর্ঘদিন ধরে চাপা রাখা বিভিন্ন তথ্য সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে, যা এই ষড়যন্ত্রের അസংগঠিত ধারণাগুলোর উন্মোচন করে।

গত মঙ্গলবার পিয়ার্স মরগানের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে কার্লসন এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলের নেতৃত্ব কখনোই ৯/১১ হামলার বিষয়ে লুকোতে চাননি। বরং, তাদের ধারণা ছিল এই হামলা যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার, ছিনতাইকারীরা দলবদ্ধ হয়ে চারটি প্লেন ছিনতাই করে। এরপর সেগুলোকে ব্যবহার করে নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন ডিসির গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ওপর আঘাত হানে। প্রথম প্লেনটি সকাল ৮:৪৬ মিনিটে উত্তর টাওয়ারে আঘাত করে, এরপর কয়েক মিনিট পর দ্বিতীয় প্লেনটি দক্ষিণ টাওয়ারে। এতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয়, ভবন দুটিতে থাকা মানুষ ঝটপট আতঙ্কে দৌড়াতে শুরু করে। এই ভবনগুলো ছিল ১১০ তলা বিশিষ্ট। মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে সংঘটিত এই ধ্বংসযজ্ঞে বহু মানুষ প্রাণ হারান।

পরে, সকাল ৯:৩৭ মিনিটে পেন্টাগনের পশ্চিম অংশে আঘাত করে তৃতীয় প্লেনটি। এরপর, সকাল ১০:০৩ মিনিটে চতুর্থ প্লেনটি একটি পেনসিলভেনিয়ার মাঠে পতিত হয়, যেখানে যাত্রীরাই ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য যুদ্ধ করেন। ধারণা করা হয়, এই প্লেনটি ক্যাপিটল ভবনে আঘাত হানার জন্য পরিকল্পিত ছিল।

এই গুরুতর হামলার পর ইসরায়েলে নেতৃত্বদানকারী নেতারা বলেছিলেন, এটি এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যা তাদের দীর্ঘদিনের অস্তিত্বের লড়াইয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, এটি একটি ‘ভালো ঘটনা’, কারণ এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বরাজনীতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

এই হামলার ফলে মোট মারা যান ২৯৭৭ জন মানুষ, এর মধ্যে ১৯জন ছিনতাইকারী অন্তর্ভুক্ত নয়। নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল নিউইয়র্কের সাধারণ মানুষ। চারটি প্লেনের যাত্রী ও ক্রু মোট ২৪৬ জন। টুইন টাওয়ারের দুটো ভবনে প্রাণ হারান ২৬০৬ জন, আর পেন্টাগনে নিহত হন ১২৫ জন।

সর্বকনিষ্ঠ মৃত্যুকালে ছিল মাত্র দুই বছর বয়সী ক্রিস্টিন লি হ্যানসন, যিনি এক প্লেনের যাত্রীর সন্তান। সর্ববয়সী ছিলেন রবার্ট নর্টন, ৮২ বছর বয়সী, যিনি অন্য একটি প্লেনে ছিলেন।

প্রথম প্লেন যখন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আঘাত করে, তখন সেখানে প্রায় ১৭ হাজার ৪০০ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে উত্তর টাওয়ারের উপরের তলায় থাকা কেউই জীবন রক্ষা করতে পারেননি। তবে, দক্ষিণ টাওয়ারে অভ্যন্তরে থাকা ১৮ জন প্রাণে বেঁচে যান। মৃতের মধ্যে বিভিন্ন দেশের মানুষ ছিলেন, যেমন ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ও অন্যান্য।

আহত অসংখ্য মানুষ নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার মুখোমুখি হন, বিশেষ করে উদ্ধার কাজের সময় বিষাক্ত ধূলিকণার কারণে অনেক অস্বাভাবিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা শুরু হয়।

এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী ছিল উগ্র ইসলামপন্থী সংগঠন আল-কায়েদা, যার নেতৃত্বে ছিলেন ওসামা বিন লাদেন। তারা আফগানিস্তান থেকে এই হামলার ষড়যন্ত্র করেছিল। ছিনতাইকারীরা মোট ১৯ জন, বিভিন্ন দলে বিভক্ত, যারা প্লেন ছিনতাই করে এত বড় আঘাত চালায়। এর মধ্যে, তিনটি দল পাঁচজন করে, আর পেনসিলভেনিয়ার প্লেনের ছিনতাইকারীর সংখ্যা চার।

তারা সবাই প্রশিক্ষিত পাইলট ছিল, নিজেদের পাইলট ট্রেনিং নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের স্কুল থেকে। ছিনতাইকারীদের মধ্যে ১৫ জন ছিলেন সৌদি নাগরিক, অন্যরা ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর ও লেবাননের।

এই হামলার পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া ছিল দ্রুত ও কঠোর। এক মাসের মধ্যে, তারা আল-কায়েদাকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য আফগানিস্তানে আক্রমণ চালায়। দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে, ২০১১ সালে মার্কিন সেনারা ওসামা বিন লাদেনকে পাকিস্তানে খুঁজে নিয়ে হত্যা করে।

অতীতে, ২০০৩ সালে পাকিস্তানে গ্রেপ্তার করা হয় খালিদ শেখ মোহাম্মদকে, যিনি এই পরিকল্পনার অন্যতম রূপকার। এরপর থেকে তাকে গুয়ান্তানামো বন্দিশিবিরে বন্দি রাখা হয়েছে।

আল-কায়েদা এখনো সক্রিয় রয়েছে। আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির দক্ষিণ অঞ্চল ও আফগানিস্তানে তারা এখনও প্রভাবশালী। এর প্রায় ২০ বছর পরে, 2021 সালে পশ্চিমারা আফগানিস্তান ত্যাগ করে; এরপর দেশটির ক্ষমতা ফিরে নেয় তালেবান গোষ্ঠী। এই ঘটনার ধারাবাহিকতায়, দীর্ঘ এই যাত্রাপথের শেষে, বিশ্বশক্তির জন্য বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা ও দুনিয়ার রাজনীতি নতুন করে পরিবর্তিত হয়েছে।