মৎস্য খাতে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের অবদান গর্বের বিষয়: মৎস্য উপদেষ্টা

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ২:৩০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৫

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, এই দেশের মৎস্য খাতে উন্নয়ন ও গবেষণায় বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের অবদান অত্যন্ত প্রশংসনীয় এবং গর্বের বিষয়। তিনি এ জন্য আরো বেশি গবেষণা ও উন্নয়ন কাজ চালানোর প্রয়োজনের ওপর জোর দিয়েছেন, যাতে মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও সুষ্ঠু পরিচালনায় আরও অগ্রগতি সম্ভব হয়। এই জন্য সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আরো বেশি বরাদ্দ ও সুযোগ দিতে হবে, যাতে গবেষণার মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তি ও পদ্ধতি উদ্ভাবন করা যায়।

শুক্রবার সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী তৃতীয় আন্তর্জাতিক কনফারেন্স ফর সাসটেইনেবল ফিশারিজের (আইসিএসএফ) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। উল্লেখ্য, এই মানসম্পন্ন সম্মেলনের উদ্দেশ্য হলো টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা ও গবেষণার উন্নয়ন, উদ্ভাবনী প্রযুক্তির প্রচার এবং সংশ্লিষ্ট অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সমন্বয় সূদৃঢ় করা।

উপদেষ্টা আরও বলেন, অতিরিক্ত মাছ শিকার, বিশেষ করে অবৈধ জাল, চায়না জাল ও ট্রল ডোর ব্যবহার করে মাছ শিকার অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ধরনের অব্যবস্থাপনা মাছের ক্ষতি করছে এবং ভবিষ্যতের জন্য বিপদ ডেকে আনছে, তাই এসব বন্ধ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, শীতকালে কৃষিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে বর্ষা মৌসুমে সেই বিষ পানিতে মিশে মাছের ক্ষতি করছে, যা আমাদের জন্য এক ধরনের বিপদ। এ জন্য কৃষি খাতে বালাইনাশকের ব্যবহার সংকুচিত করে উৎপাদন বৃদ্ধি ও মাছের সদৃশ্যতা রক্ষা করার জন্য ইতোমধ্যে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ইলিশের উৎপাদন কমে যাওয়ার বিষয়ে তিনি উল্লেখ করেন, চলতি বছর ইলিশ আহরণের পরিমাণ অনেক কমে গেছে, ফলে বাজারে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, সময়মতো বৃষ্টি না হওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ ও নদীর নাব্যতা হ্রাস ইত্যাদি কারণে এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশের মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রে মূল ভরসা হলো মিঠা পানির মাছচাষ। এই ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও মানসম্পন্ন মাছের উৎপাদন বাড়াতে হবে। যাতে করে দেশের মাছের বৈচিত্র্য রক্ষা পাওয়া যায় এবং হাওড়, নদী ও প্রজনন ক্ষেত্রগুলো সংরক্ষিত থাকে, সেজন্য যথাযথ প্রকল্প নেওয়ার প্রয়োজন।

হাওড়ের উন্নয়ন নিয়ে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যেখানে এখনো অপ্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ ও পরিকল্পনা ছাড়াই প্রকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, হাওড়ের সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার জন্য হাওড় গবেষণা ইনস্টিটিউট ও মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মধ্যে সমন্বয় করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষয় রোধ ও হাওড়ের ভারসাম্য রক্ষা সম্ভব হবে।

সম্মেলনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলাম। এতে সভাপতিত্ব করেন মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নির্মল চন্দ্র রায়। বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্র, পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এটিএম মাহবুব-ই-এলাহি ও কোয়ালিটি ফিডস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম। কায়সার রহমান।

সম্মেলনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল ওয়াহাব, যেখানে তিন দিনব্যাপী আয়োজিত ১১টি সেশনে প্রায় আড়াই শতাধিক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হবে।