চলতি বছরে প্রথম ছয় মাসে ধর্ষণের ঘটনা গত বছরের কাছাকাছি বা তারও বেশি

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ২:৩১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৭, ২০২৫

নারী ও শিশু নির্যাতনের বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সংখ্যাও গত বছর যেমন ছিল, এই বছর তার কাছাকাছি বা তারও বেশি হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে। বিশেষ করে চলতি বছরে প্রথম ছয় মাসে ধর্ষণের ঘটনা, যৌন নিপীড়ন, উত্ত্যক্তকরণ, বাল্যবিবাহ এবং যৌতুকের জন্য নির্যাতনের ঘটনা গড়ে গত বছরের তুলনায় সমান বা বেশি থাকছে।

বাংলাদেশ নারী পরিষদ আজ মঙ্গলবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানিয়েছে, যা তারা ১৪টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে তৈরি করে। সংস্থাটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আনোয়ারা বেগম মিলনায়তনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালে নারী ও শিশু নির্যাতনের মোট ঘটনা ছিল ২৯৩৭টি, যা ২০২৪ সালে কমে এখন ২৫২৫টি হয়েছে। তবে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫৫৫টি। এর মধ্যে ধর্ষণের ঘটনাই মূলত সবচেয়ে বেশি, যার মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সাবেক তথ্য অনুযায়ী ৩৬৪ জনের শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে ২২০ জন কন্যা এবং ১৪৪ জন নারী।

অন্য ধরনের নির্যাতনের মধ্যে রয়েছে দলবদ্ধ ধর্ষণ (১৪৮ জন), ধর্ষণের পরে হত্যা (১৩৪ জন কন্যা ও ৭৭ জন নারী), যৌন নিপীড়ন ও উত্ত্যক্তকরণ (২২৪ জন, যার মধ্যে ১২৫ জন কন্যা), বাল্যবিবাহ (২০ জন কন্যা), যৌতুকের শিকার (৬৬ জন নারী ও ২ কন্যাশিশু), গৃহকর্মী নির্যাতন (১৬ কন্যা ও ৮ নারী) এবং সাইবার অপরাধ (২৬ জন কন্যা ও ৩ নারী)।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ধর্ষণের অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বেশিরভাগই বয়সে ১১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এর মধ্যে ২১ থেকে ২৫ বছর বয়সীরা বেশি। সাইবার অপরাধের ১৪টি ঘটনায় অভিযুক্তরা ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী। এছাড়া, ২৪ শতাংশ শিক্ষক, এবং ৩১ শতাংশ মূলত নারী ও মেয়েশিশুতে উত্ত্যক্তকারী। অধিকাংশ দলবদ্ধ ধর্ষণ ভুক্তভোগীরা অপরিচিত।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, ঘটনা ঘটার পর মামলা করার প্রবণতাও বেড়েছে। ধর্ষণের বেশিরভাগ ঘটনা (৬২%) এটাই প্রমাণ করে, মামলা বর্তমানে দ্রুত হয়। তবে, গণমাধ্যমে সব নির্যাতনের তথ্য প্রকাশ পায় না, বিশেষ করে পারিবারিক সহিংসতার ঘটনাগুলো কম প্রকাশিত হয়। ভুক্তভোগী নারীর বয়স, পেশা এবং ঘটনার ফলোআপ সংক্রান্ত তথ্যও সবসময় পাওয়া যায় না।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেছেন, দেশের নারী ও মেয়েশিশু নির্যাতনের ব্যাপারটি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, কম বয়সীরাই বেশি নির্যাতনের শিকার হয়, এবং একই অপরাধী বারবার অপরাধ করে থাকেন। এর পেছনে রাজনৈতিক ও ক্ষমতাসীন দলের সংশ্লিষ্টতাও রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। সরকার ও সমাজের নীতির পরিবর্তন, সামাজিক আন্দোলন ও গণমাধ্যমের সক্রিয়তা প্রয়োজন বলে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন।

এছাড়াও, সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, নারী নির্যাতনের মামলায় দীর্ঘসূত্রতা কমানোর জন্য সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ঘরে-বাইরে শিশু ও নারীরা অনিরাপদ হয়ে উঠছেন।

এ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রশিক্ষণ ও গবেষণা বিভাগের পরিচালক শাহজাদী শামীমা আফজালী। আরও ছিলেন মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগারের সম্পাদক রীনা আহমেদ, লিগ্যাল এইড বিভাগের রেখা সাহা ও লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি ও লবি বিভাগের দীপ্তি শিকদার।