ড. মঞ্জুর হোসেনের ভাষণে দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল: রিজার্ভ, মূল্যস্ফীতির আপডেট

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ২:৩৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৬, ২০২৫

পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. মঞ্জুর হোসেন বলেছেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি কিছুটা হলেও স্থিতিশীল পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এই সুখবরের সাথে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, দেশের রিজার্ভ এখন ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা একটুকরো স্বস্তির নিদর্শন। তিনি পরিমাণগত উন্নতির পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির বেশ কিছু কমতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তবে চালের মূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এই সমস্যা যদি সমাধান করতে পারা যায়, তবে মূল্যস্ফীতির ওপর আরও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সম্ভব। এক প্রেসিডেন্ট সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মঞ্জুর হোসেন বলেন, মূল্যস্ফীতির ধার এই কমতির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে এসেছে, তবে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোন রকম হ্রাস যেন না হয়, সেই দিকে আরও মনোযোগ দিতে হবে। তিনি আরও জানান, অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমলেও, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়ানোর কোনো বিকল্প থাকছে না। সরকারের এলডিসি থেকে উত্তরণের পরিকল্পনাও ইতিবাচক হলেও, এর জন্য সমগ্র প্রস্তুতির ওপর নজর দেওয়া জরুরি বলে তিনি মনে করেন। পাশাপাশি, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো ও অর্থনীতিকে টেকসই রূপ দিতে সরকারের আরও উদ্যোগ নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, অর্থনীতি এখন খাদের কিনারা থেকে উঠতে পেরেছে, তাই বিনিয়োগে মনোযোগ, ব্যাংক খাতের সংস্কার এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। এছাড়া, বাজারে ঋণের সুদ হার বেশি থাকা ও বাণিজ্যিক পরিবেশের অসঙ্গতি কারণেও বিনিয়োগের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। সেমিনারে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা, ঋণ প্রবাহের দুর্বলতা, জ্বালানি সরবরাহের অনিশ্চয়তা এবং দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশি বেসরকারি খাতের অগ্রগতি আশানুরূপ নয়। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতির জন্য আরও কিছু সময় জরুরি। মূল প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, মুদ্রানীতি, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি খাতের চ্যালেঞ্জ ও সুযোগগুলো বিশ্লেষণে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, বৈশ্বিক শুল্ক আরোপ, প্রতিবন্ধকতা ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা চলমান থাকায় বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের জন্য প্রতিযোগিতা কমে আসছে এবং ২০২৫ সালে প্রবৃদ্ধির হার মাত্র ২.৩ শতাংশে নেমে আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে, তিনি সুপারিশ করেন, অন্তত তিন বছর এলডিসি উত্তরণের কার্যক্রম স্থগিত রাখা উচিত, যেন প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া ও নীতিমালা আধুনিকায়নের সময় পাওয়া যায়। ব্যাংকগুলোতে স্থিতিশীলতা আনা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও প্রশাসনিক জটিলতা কমানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। বলছেন, ভীষণ অস্থিরতার মধ্যেও, প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে আরও কিছু সময় দরকার এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা অপরিহার্য। সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছেন ড. মোস্তাফিজুর রহমান, ড. এ কে এনামুল হক, মাহমুদ সালাহউদ্দিন নাসের, নওশাদ মুস্তাফা ও মো. রাবিউল ইসলাম। তারা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তায় পোশাক, ইকোনোমি, অবকাঠামো এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর বিভিন্ন দিক আলোচনা করেন। ঢাকায় বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে এই অনুষ্ঠানে আধিকারিক ও ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন, যারা ভবিষ্যতের জন্য দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বপ্ন ও প্রচেষ্টাকে আরও সুদৃঢ় করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।