ইসরায়েল গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের পরিকল্পনা কার্যকর করছে

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ২:৩৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৮, ২০২৫

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা শহর থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ শুরু করেছে। রবিবার বিবিসি এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গত শনিবার ইসরায়েলি হামলায় একটি তাঁবুতে থাকা শিশু ও ত্রাণ প্রত্যাশীসহ কমপক্ষে ৪০ জন নিহত হয়েছেন। বিবিসি সূত্রে জানা গেছে, গাজা শহরের দক্ষিণ জেইতুন এলাকায় থেকে হাজার হাজার বাসিন্দা পালিয়ে গেছে। এই এলাকায় কয়েক দিন ধরে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে পরিস্থিতি ব্যাপক বিপর্যয়কর হয়ে উঠেছে বলে হামাসের নিয়ন্ত্রিত পৌরসভা গণমাধ্যমকে জানিয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা গাজা থেকে দেড় মিলিয়ন মানুষকে জোরপূর্বক দক্ষিণে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা করছে। এই লক্ষ্যে গাজার বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রবিবার থেকে তাদের তাঁবু ও অন্যান্য আশ্রয় সরঞ্জাম সরবরাহ শুরু হবে। গত সপ্তাহে ইসরায়েলের যুদ্ধ মন্ত্রিসভা গাজা দখল ও জনগণের স্থানচ্যুতি অনুমোদন দেয়, এরপর থেকে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গাজা পৌরসভার মুখপাত্র জানিয়েছেন, ছয় দিন ধরে চলমান বিমান হামলা, গোলাবর্ষণ ও ধ্বংসযজ্ঞের কারণে জেইতুনে ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি ঘটছে। একই সময়ে, গাজা উপত্যকায় দুর্ভিক্ষের কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও সাতজন মারা গেছেন, যার মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক উল্লেখ করেছেন, এই মৃত্যুর সঙ্গে মিলিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫৮ জনের বেশি, তাদের মধ্যে ১১০ জন শিশু। যুদ্ধ ও অবরুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে গাজায় ধ্বংস ও দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। অবিরাম বোমাবর্ষণে অঞ্চলটি ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয়েছে এবং খাদ্যের অভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত। গত মার্চ থেকে গাজার সব সীমান্ত কেটে দেওয়া হয়েছে, ফলে সেখানে জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এক হিসাবে, ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, দেড় লাখের বেশি আহত ও চাপা পড়ে আছেন ধ্বংসস্তূপের নিচে। চলতি বছরে যুদ্ধের অবসান না হওয়ায় ২৭ মে থেকে ইসরায়েল জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবিক সংস্থাকে উপেক্ষা করে গাজায় নিজস্ব ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছে, তবে এর বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে সমালোচনা চলমান। অন্যদিকে, খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে গুলি চালিয়ে শত শত ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হচ্ছে। গত বছর, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজার যুদ্ধাপরাধের জন্য নেতানিয়াহু ও তার প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে, যা আন্তর্জাতিক আদালতেও আলোচনা ও বিচারের মুখোমুখি হয়। যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিদের সমস্ত ভিসা স্থগিত করেছে, শনিবার এর ঘোষণা দেওয়া হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক্সে পোস্টে জানানো হয়, চিকিৎসা ও মানবিক কারণে কিছু অস্থায়ী ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত থাকবে যতক্ষণ না পর্যালোচনা শেষ হয়। কিছুদিন আগে, গাজায় আহত ফিলিস্তিনি শিশু ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার জন্য মার্কিন সংস্থা ‘হিল’ এর সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হলেও, এর বিরুদ্ধে কট্টরপন্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ লরা লুমের এক্সে পোস্টে লিখেছেন, ‘ইসলামিক অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রবেশে এই নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।’ এই পোস্টের পরে ট্রাম্পের সমর্থকেরা এই সিদ্ধান্তের পক্ষে ও বিপক্ষে মন্তব্য করেন, যদিও বেশ কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গাজার ফিলিস্তিনিদের ভিসা স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করে। এই পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী মানবিক ও রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে থাকবে, মর্যাদাপূর্ণ আলোচনাও চলবে।