ঘূর্ণিঝড় বুলবুল-এর ছোবলে দক্ষিণাঞ্চলে নিহত ৯, বিদ্যুৎ পানি টেলিযোগোযোগ শূণ্য দক্ষিণাঞ্চলে মানবিক বিপর্যয় Staff Staff Reporter প্রকাশিত: ৪:৩৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১১, ২০১৯ ঘূর্ণিঝড় বুলবুল-এর ছোবলে দক্ষিণাঞ্চলে নিহত হয়েছে ৯জন। বুলবুল-এর বয়ে আনা স্মরনকালের ভয়াবহ বর্ষনে সমগ্র দক্ষিণের জনপদ পানির তলায়। দক্ষিণাঞ্চলে প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমনের পুরো জমিও প্লাবিত হয়েছে। বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলেল প্রতিটি জেলা ও উপজেলা শহরও সয়লাব হয়ে যায়। রবিবার বুলবুল-এর বয়ে আনা স্মরনকালের ভয়াবহ বর্ষনে বিদ্যুৎ, পানি ও টেলিযোগাযোগ সহ সব ধরনের যোগাযোগ শূণ্য দক্ষিণাঞ্চলে চরম মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। কির্তনখোলা নদীর সাথে বরিশাল মহানগরীর প্রতিটি রাস্তা, খাল আর ড্রেন একাবার হয়ে যায়। রবিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত বরিশালে বৃষ্টি হয়েছে ২৬৩ মিলিমিটার। মাত্র ৯ ঘন্টায় এ ধরনের বর্ষন নজিরবিহীন বলে আবহাওয়াবীদ গন জানিয়েছেন। রবিবার বুলবুল-এর ছোবলে বরিশালের উজিরপুরে ১জন, বরগুনা ও গোপালগঞ্জে দুজন করে এবং পিরোজপুর,পটুয়াখালী,মাদারীপুর ও শরিয়তপুরে একজন করে নিহত হয়েছে। নিজহতদের প্রায় সকলেই ঘরচাপা ও গাচচাপা পড়ে মারা যায়। বুলবুল আঘাত হানার ২৪ঘন্টা পরে সোমবার দুপুরেও বরিশাল মহানগরী প্লাবনমূক্ত হয়নি। প্রায় ৩০ঘন্টা পরে জাতীয় গ্রীডে খুলনা-বাগেরহাট-বরিশাল ১৩২কেভি সঞ্চালন লাইনের একটি সার্কিট চালু করে দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌছান সম্ভব হলেও ভেড়ামাড়া-বরিশাল ডবল সার্কিট ১৩২ কেভি লাইন এখনো বন্ধ। তবে বিতরন ব্যবস্থার ত্রুটির কারনে বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ এলাকায় সোমবার সন্ধা পর্যন্ত বিদ্যুৎ পৌছেনি। টানা বিদ্যুৎ সংকটে বরিশাল মহানগরী সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের জেলা-উপজেলা সদরগুলোতে রবিবার সন্ধা পর্যন্ত পানি সরবারহ স্বাভাবিক হয়নি। বিদ্যুতের অভাবে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে সবগুলো মোবাইল অপারেটরের অন্তত সাড়ে ৩হাজার বিটিএস বন্ধ হয়ে যায় রবিবার সন্ধা থেকে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত ৭৫ লাখ গ্রাহকের সেল ফোন অকার্যকর ছিল। ইন্টারনেট সহ সব ধরনের টেলিযোগাযোগও বিপর্যস্ত হয়ে পরে। টানা বিদ্যুৎ সংকটে বিটিসিএল-এর বরিশাল মহানগরীর ৩টি সহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অন্তত ৫০টি টেলিফোন এক্সেঞ্জই বন্ধ হয়ে যায়। রবিবার ভোর ৪টার দিকে সুন্দরবনের বাংলাদেশ ভুখন্ডে বুলবুল প্রথম আঘাত হানার পরে তা ক্রমশ উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বাগেরহাটÑপিরোজপুর-ঝালকাঠী হয়ে বরিশালের ওপর আছড়ে পরে সকাল ১১টার দিকে। ৮০ কিলোমিটার বেগের প্রবল ঝড়ের সাথে দেশের সর্বাধীক বৃষ্টি ঝড়িয়ে দুপুর দেড়টার পরে বরিশাল ভুখন্ড থেকে মাদারীপুর শরিয়তপুর হয়ে বুলবুল চলে যায় আরো পূর্ব উত্তরে। তবে এ ঝড়ের প্রভাবে রবিবার ভোর রাত থেকেই সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল বিদ্যুৎ বিহীন ও টেলিযোগাযোগ শূণ্য হতে থাকে। রবিবার দপুর পৌনে ১টার দিকে জাতীয় গ্রীডের দক্ষিণাঞ্চলের ৩টি সার্কিটের সঞ্চালন লাইনের বিপর্যয়ের সাথে বরিশাল ও ভোলার ৪টি বড় মাপের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রও বন্ধ হয়ে যায়। রবিবারের ঝড়ে দক্ষিণাঞ্চলের মাঠে থাকা প্রায় সোয়া ৭লাখ হেক্টর জমির আমন ফসল সহ আরো লক্ষাধীক হেক্টরের আগাম শীতকালীন সবজি সহ বিভিন্ন ধরনের রবি ফসল পানির তলায় চলে গেছে। আগামী ২৪ঘন্টার মধ্যে আমনের জমি থেকে পানি সরে গেলে তা রক্ষা পাবার সম্ভবনা থাকলেও শীতকালীন সবজির পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে জানিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। এ ঝড়ে দক্ষিণাঞ্চলের ৮টি জেলায় লক্ষাধীক কাঁচা ও আধা পাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেলেও জেলা ও উপজেলা প্রশাসনগুলো ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত বিবরন সংগ্রহ করছে মাঠ পর্যায় থেকে। যা পেতে আরো অন্তত তিনদিন লাগবে বলে প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে। দুদিন বন্ধ থাকার পরে রাজধানী ঢাকা সহ দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরিন নৌ যোগাযোগ স্বভাবিক হয়েছে। ১৯৭০-এর ১২নভেম্বরের ভয়াল রাতের ঘূর্ণিঝড় ‘হেরিকেন’ আর ২০০৮-এর ১৫ নভেম্বর রাতের ‘সিডর’এর ভয়াবহতার তুলনায় ‘বুলবুল’ অনেকটা কম মাত্রার হলেও ভারি বর্ষন বয়ে আনা এ ঝড় গোটা দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবনকে সম্পূর্ণভাবেই বিপর্যস্ত করে দেয়। SHARES সারাদেশ বিষয়: