অলিখিত ফাইনালে বাংলাদেশের হারের ময়নাতদন্ত

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ১:৪১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১১, ২০১৯

এমন সুযোগ সহসা আসে না। হয়তো যুগে একবার আসে। ভারতকে প্রথমবার সিরিজ হারানোর হাতছানি ছিল বাংলাদেশের সামনে। হারাতে পারলে অনন্য রেকর্ডও হতো। বিশ্বের পঞ্চম দল হিসেবে তাদের মাটিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিততেন টাইগাররা। যে কীর্তিটা রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী দলের।

সুযোগ এসেছে বারবার। তবে সেগুলোর সদ্ব্যবহার করতে পারেননি মাহমুদউল্লাহরা। তিন ম্যাচ সিরিজে ১-১ সমতা ছিল। অঘোষিত ফাইনালে শুরুটা দুর্দান্তও করেন তারা। তবে শেষ অবধি সেই রেশটা ধরে রাখতে পারেননি। ফলে ভারতের কাছে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হেরে ফের স্বপ্নভঙ্গ লাল-সবুজ জার্সিধারীদের। এর আগে এশিয়া কাপ, নিদাহাস ট্রফিতে আশাভঙ্গ হয় ক্রিকেটের নবশক্তিদের। নেপথ্য কারণগুলো তুলে ধরা হলো-

* নাগপুরের উইকেট পেস সহায়ক। স্পিনাররা বাড়তি সুবিধা পাবেন। স্লো পেস প্রতিপক্ষের জন্য হতে পারে ভয়ংকর। সবাই সুইং ও টার্ন পাবেন। পরে বোলিং করা হবে আদর্শ। এসব কথা জেনেও টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ইতিহাস বলছে, এখানে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ গড়িয়েছে ১২টি। এর ৮টিতেই পরে বোলিং করা দল জিতেছে। স্বভাবতই ইতিহাস ছেড়ে কথা বলেনি। এর অমোঘ নিয়মেই টাইগারদের পরাজয় ঘটেছে।

* বিগ ম্যাচে প্রতিটি খেলোয়াড়ের ওপর চাপ থাকে বেশি। সেটা আর ১০টা ম্যাচের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। অনেক সময় বেশিও। তরুণরা সেটা শামাল দিতে পারেন না। হয়তো সেটাই হয়েছে আমিনুল ইসলামের ক্ষেত্রে। ক্রিজে এসেই শফিউল ইসলামের বলে ক্যাচ তুলে দেন শ্রেয়াস আইয়ার। তবে সেটা তালুবন্দি করতে পারেননি আমিনুল। শূন্য রানে জীবন পাওয়া সেই আইয়ার শেষ পর্যন্ত ফেরেন ৬০ প্লাস রান করে। এতেই রানের গতি বাড়ে ভারতের। ১৭৪ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর পায় তারা। শুধু আমিনুল না, অন্য ফিল্ডাররাও বেশ ফিল্ডিং মিস করেছেন। এর সুযোগটা নিয়ে সদ্ব্যবহার করেছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা।

* প্রথাগতভাবে বাংলাদেশ যেন হয়ে গেছে এককনির্ভর দল। প্রথম ম্যাচে দারুণ ব্যাটিং করেন মুশফিকুর রহিম। তাতেই ভারতের বিপক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি জয়ের স্বাদ পান টাইগাররা। পরের ম্যাচে কেউ জ্বলে উঠতে পারেননি। ফলে মুখ থুবড়ে পড়েন সফরকারীরা। ব্যাটে-বলে পারফরম্যান্স ছিল বিবর্ণ। ফলে একক আধিপত্য বিস্তার করে জিতে সমতায় ফেরে ভারত। আর সবশেষ ম্যাচে কেবল আলো ছড়িয়েছেন নাঈম শেখ। তিনি ছাড়া আর কেউ মাজা সোজা করে দাঁড়াতে পারেননি। ফলে ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। ৩০ রানে হেরে মাশুল গুনতে হয়েছে।

* এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ কোনো এক ডিপার্টমেন্টে (শুধু ব্যাটিং, বোলিং অথবা ফিল্ডিং) আহামরি ভালো করে জিততে পারেনি। তিন বিভাগে ভালো করেই জিততে হয় টাইগারদের। সেখানে শিরোপা নির্ণায়ক ম্যাচে ছন্নছাড়া যাচ্ছেতাই বোলিং করেন বোলাররা। পুরনো রূপে দেখা যায়নি দলের প্রধান স্ট্রাইক বোলার মোস্তাফিজুর রহমানকে। অন্যরাও চমক জাগানিয়া তেমন বোলিং করতে পারেননি। আফিফ তো ১ ওভারেই দিয়েছেন ২০ রান। সেই যাত্রায় যে আইয়ারের কাছে ৬ বলে ৬ ছক্কা খাননি, এটাই তার সৌভাগ্য।

* আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশ দলে নেই সাকিব আল হাসান। পারিবারিক কারণে নেই তামিম ইকবাল। ইনজুরিতে সফরে যেতে পারেননি তারকা পেস অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। এ ম্যাচে তাদের অভাব কেউ পূরণ করতে পারেননি।

* প্রথম ম্যাচে জয়ের নায়ক ছিলেন মুশফিকুর রহিম। এ ম্যাচে ব্যর্থ হন তিনি। তার ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতাই সফরকারীদের ডুবিয়েছে। অধিকন্তু অপর নির্ভরতার প্রতীক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। সিরিজে চরম মাত্রায় ব্যর্থ প্রতিশ্রুতিশীল ক্রিকেটার লিটন দাস। তার পাশাপাশি এদিন ঝড় তুলতে পারেননি সৌম্য সরকার।