নেতানিয়াহুর মার্কিন সফর: ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পকে কেন্দ্র করে ইঙ্গিতপূর্ণ আলোচনায় ঝড়

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৩:৪৪ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৫

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আজ যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকছেন একটি গুরুত্বপূর্ণ সফরে। ফ্লোরিডার মার-আ-লাগো রিসোর্টে তিনি পূর্বনির্ধারিত এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের সঙ্গে মিলিত হওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। একজন সরকারী সূত্র এএফপিকে জানিয়েছেন, নেতানিয়াহু রোববার যুক্তরাষ্ট্র পৌঁছাবেন এবং একদিন পর ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করবেন। তবে, এ বৈঠকের নির্দিষ্ট স্থান বা সময় এখনও জানানো হয়নি।

উল্লেখ্য, এই সফর এমন সময়ে হচ্ছে যখন গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা চলছে। ট্রাম্প প্রশাসন ও মধ্যস্থতাকারীরা এই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এই বৈঠকে নেতানিয়াহু একদিকে তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পকে কেন্দ্র করে মার্কিন নেতৃত্বের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইবেন। কারণ, এই সময়ে ইসরায়েলিরাও তাদের মার্কিন মিত্রদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছেন। অনেকের ধারণা, তাদের দাবি, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি অবিলম্বে মোকাবিলা করা উচিত। তবে, বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের সঙ্গে নতুন সংঘর্ষের সম্ভাবনা ডোনাল্ড ট্রাম্পের চলতি মার্কিন নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে।

প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসির সিনিয়র ফেলো সিনা তুসি মন্তব্য করেন, ট্রাম্প যেখানে ইসরায়েল ও আরব দেশগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা করছেন, সেখানে নেতানিয়াহু সামরিক প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য হলো অপ্রতিদ্বন্দ্বী আধিপত্য, প্রশ্নাতীত প্রভাব এবং সম্প্রসারণমূলক শক্তি প্রতিষ্ঠা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটা নেতানিয়াহুর মূল লক্ষ্যগুলোর একটি, এবং তিনি চাইছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এই পথেই সমর্থন আদায় করতে। তবে, তারা আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন যে, ট্রাম্পের স্বার্থ অন্যদিকে মোড় নেয়ার ফলে, এই অঞ্চলে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষের ঝুঁকি বাড়ছে।

অপ্রতিদ্বন্দ্বী বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে ট্রাম্প নিজেকে শান্তির দূত হিসেবে উপস্থাপন করলেও, বাস্তবে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েল বারবার এই চুক্তি লঙ্ঘন করছে। ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি মধ্যপ্রাচ্যে প্রথমবারের মতো তিন হাজার বছর পর শান্তি আনতে সক্ষম হয়েছেন।

অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে বলা হয়েছে, এই অঞ্চল এখন আর যুক্তরাষ্ট্রের মূল নিরাপত্তা অগ্রাধিকার নয়। ফলে, এ অঞ্চলে মার্কিন সামরিক ও কূটনৈতিক উপস্থিতি কমানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, ইসরায়েল আবার এমন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে যা আবার আন্তর্জাতিক সংঘাতে ঢেলে দিতে পারে।

অবশ্য, ইসরায়েলের অনেক কর্মকর্তা এবং মার্কিন মিত্ররাও ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি ধ্বংস করার তৎপরতা অবিলম্বে শুরু করতে হবে। তবে, বিশ্লেষকেরা সতর্ক করে বলছেন, নতুন সংঘর্ষের চাপানো সম্ভাবনা ট্রাম্পের সার্বভৌম নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

এখন দেখার বিষয়, ট্রাম্প নেতানিয়াহুর এ ফাঁদে পা দেবেন কি না। নেতানিয়াহু যতই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখান, ট্রাম্প জানান, গত জুনে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে মার্কিন হামলা দেশের পারমাণবিক কর্মকাণ্ডকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিয়েছে।