টিআইবির প্রতিবেদনে প্রকাশ, ১৫ বছরে সৌর প্রকল্পে ৩ হাজার কোটি টাকার অনিয়ম Staff Staff Reporter প্রকাশিত: ৩:৩৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৫, ২০২৫ গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের ছয়টি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে প্রায় ৩,০০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজ কার্যালয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এই তথ্য প্রকাশ করে। তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবির কর্মকর্তা নেওয়াজুল মওলা ও আশনা ইসলাম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) মাধ্যমে পরিচালিত সৌর প্রকল্পগুলোতে ব্যাপক অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে। সরকারি ও আইপিপি সংক্রান্ত ছয়টি খাতে প্রকল্পের ব্যয় যেখানে ধাপে ধাপে বাড়ানো হয়েছে, সেখানে প্রকল্পের প্রকৃত খরচ অনেক বেশি। পিডিবির হিসাব অনুযায়ী, প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড়ে ৮ কোটি টাকা হলেও এই ছয়টি প্রকল্পে গড়ে ১৩ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। এর ফলে, এই প্রকল্পগুলোতে প্রাক্কলিত খরচের চেয়েও ২,৯২৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বেশি ব্যয় হয়েছে। বিশ্লেষণ থেকে জানা গেছে, প্রকল্পের মোট প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যয় হয় ৪ হাজার ৪৩৫ কোটি ২০ লাখ টাকা, কিন্তু বাস্তবে সেটি পৌঁছায় ৬ হাজার ৯৭০ কোটি ৮ লাখ টাকায়। গবেষণায় আরও বলা হয়, সরকারি প্রকল্পগুলোতে জমি অধিগ্রহণ এবং ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে অনিয়মের মাধ্যমে এককভাবে ২৪৯ কোটি ১৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকার দুর্নীতি হয়েছে। অতিরিক্ত করে বলতে গেলে, দেশের ওই খাতে বিদেশি বিনিয়োগের মাত্র ৩.৩ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রক্রিয়াগত অস্পষ্টতার কারণে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য घोषিত লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) বাতিল করা হচ্ছে। পাশাপাশি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে কর প্রণোদনা, শুল্ক ও ভ্যাট ছাড়ের কম প্রচেষ্টা ও ঝুঁকি থাকায় বিনিয়োগ কমে আসছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ৩১টি প্রকল্পের এলওআই বাতিল করেছে, যার মধ্যে ইতোমধ্যে ১৫টির জমি কেনা ও বিনিয়োগের অর্ধেকের বেশি অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে চারটি প্রকল্পে বিদেশি কোম্পানির সরাসরি বিনিয়োগ রয়েছে, যেখানে দুটি প্রকল্পে শতভাগ মালিকানা বিদেশিদের। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকটে পড়েছেন তারা। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে নতুন দরপত্র আহ্বান করা হলেও, অনেক ক্ষেত্রে শুধুমাত্র এক বা কোনো দরপত্র পাওয়া যায়নি বা দরপত্রের সংখ্যা খুবই কম। সরকার পর্যাপ্ত গ্যারান্টি না দেওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রিন ফাইন্যান্সিং’ স্কিম থাকলেও জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়ার কারণে তা খুব বেশি কাজে আসছে না। এ ছাড়া, দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আয়তন ব্যবহার করে ৫০০ মোটর সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিকল্পনা থাকলেও, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও বিনিয়োগের অভাবে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। বিশ্বব্যাংক ও এডিবির মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর বিনিয়োগ মূলত বেসরকারি খাতে বেশি, যা সরকারি প্রকল্পের তুলনায় অনেক দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে, সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ না থাকায় এই খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের জন্য নির্ধারিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহের রূপরেখা তৈরির কোনও সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নেই। ২০৩০ পর্যন্ত বছরে প্রায় ৯৮০ মিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ ১১ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা এবং ২০৩১ থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত বছরে ১.৪৬ বিলিয়ন ডলার বা ১৭ হাজার ২৮০ কোটি টাকার বেশি অর্থের প্রয়োজন হবে; অথচ এ ব্যাপারে সরকারের কোনও সময়োচিত ব্যবস্থা বা পরিকল্পনা নেই। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে নীতিগত অসঙ্গতি ও দুর্নীতির কারণে দীর্ঘমেয়াদে নবায়নযোগ্য জ্বালানি আরও যথাযথভাবে বিকাশ Tubছে না। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এ অবস্থা দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বর্তমানে দেশের জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা প্রায় ৯৫ শতাংশ, যেখানে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অংশ মাত্র ৪ শতাংশের বেশি — যা দেখায় এই খাতটি খুবই অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়েছে। SHARES সারাদেশ বিষয়: