বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে: গভর্নর Staff Staff Reporter প্রকাশিত: ৩:৩৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২০, ২০২৫ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, দেশের ব্যাংকিং খাত একটি কঠিন সময় পার করে ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, সরকারি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরলস efforts нәтижায় আস্থা পুনরুদ্ধার হচ্ছে এবং অর্থনীতির বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দৃঢ়ভাবেই কাজ করে চলেছেন। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘ব্যাংকিং খাত সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। গভর্নর বলেন, ব্যাংকিং খাতে জনতার আস্থা ধরে রাখা, সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং খাতটির কাঠামোগত দুর্বলতা দূর করা এ সময়ের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। তিনি জানান, যদিও ব্যাংকিং খাতে পূর্ণ আস্থা ফিরিয়ে আনা এখনও সম্ভব হয়নি, তবে আস্থা অনেকটাই ফিরে এসেছে, যা বড় এক সফলতা। আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অর্থনীতি ভেঙে পড়বে বলে যে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে, তিনি সে সম্পর্কে পরিষ্কার বার্তা দেন এবং বলেন, এর কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই। অর্থনীতির ভিতিকে শক্তিশালী করতে বাংলাদেশের ব্যালান্স অব পেমেন্ট শক্তিশালী রয়েছে, বৈদেশিক লেনদেনে বড় অঙ্কের উদ্বৃত্ত রয়েছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ গত এক বছরেই উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারভিত্তিক ও স্বচ্ছভাবে ডলার ক্রয় করছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে কোনও চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে না। গভর্নর নির্দিষ্ট করেন যে, বছরের শেষ নাগাদ তার লক্ষ্য রিজার্ভ ৩৪ থেকে ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত বৃদ্ধি করা। এই লক্ষ্যে যেহেতু আইএমএফের অর্থসাহায্য আসুক বা না আসুক, সেটি গুরুত্ব পায় না। তিনি বলেন, “ব্যালেন্স অব পেমেন্ট স্থিতিশীল রাখতে আইএমএফের অর্থ জরুরি নয়।” সংস্কার প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, কিছু প্রধান চ্যালেঞ্জ রয়েছে— দুর্বল গভর্ন্যান্সের ব্যাংকগুলো, মূলধনের ঘাটতি, এবং উচ্চমাত্রার খেলাপি ঋণ (এনপিএল)। তিনি উল্লেখ করেন, প্রকৃত এনপিএল হার প্রায় ৩৬ শতাংশে পৌঁছেছে। তাই তথ্য গোপন না করে বাস্তব চিত্র প্রকাশ করাই প্রথম পদক্ষেপ। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ১৪টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে, এবং দুর্বল ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর হস্তক্ষেপ করবে। পাশাপাশি, যথাযথ সক্ষমতা দেখাতে সক্ষম ব্যাংকগুলোর উপর শর্ত শিথিল করা হচ্ছে। পাঁচটি ব্যাংকের একীভূতকরণের ব্যাপারে তিনি জানান, সব আইনি প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে এবং শীঘ্রই এই ব্যাংকগুলো কার্যক্রম শুরু করবে। অতিসত্বর আমানতকারীদের সুরক্ষার জন্য ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স স্কিমের আওতায় দ্রুত ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং খাতের স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা ফিরিয় আনতে, লভ্যাংশ ও বোনাস প্রদান কঠোর শর্তে নির্ধারণ করা হয়েছে, এবং বড় ঋণের যাচাই প্রক্রিয়া তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে করা হবে। যদি অপব্যবহার প্রমাণিত হয়, তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ব্যাংক রেজুলেশন আইন, ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স, ইনসলভেন্সি আইন, ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি গঠনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক খাতকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা নিয়েও আলোচনা করেন তিনি, বলেন, কার্যকর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য আইনি সংরক্ষণ ও নেতৃত্বের স্বাধীনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চাপের মুখে নতি স্বীকার না করে সিদ্ধান্ত নিলেই মূলত সফল সংস্কার সম্ভব। অর্থনীতিতে বিনিয়োগের বহির্বাসিতার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, কেবল ব্যাংকনির্ভর অর্থায়ন টেকসই নয়। করপোরেট বন্ড মার্কেট সম্প্রসারণের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের বিকল্প পথ খুঁজে বের করতে হবে। গভর্নর আরও বলেন, আমরা এখনও পুরোপুরি সংকটমুক্ত না হলেও, সঠিক সংস্কার ও জবাবদিহির মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতকে সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, যিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা ও শক্তিশালী করার জন্য সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতি রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক নেতাদের পরিষ্কার করতে হবে তারা কি আগের মতো ক্ষমতাশালী পুঁজিপতিদের হাতে ব্যাংকিং খাতকে দিয়ে দেবেন, নাকি জনগণের কল্যাণ, কর্মসংস্থান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের পুঁজি জোগানে এই খাতকে ব্যবহার করবেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালা এবং সম্পন্ন করেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম। SHARES অর্থনীতি বিষয়: