বাংলাদেশ ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতার পথে এগিয়ে যাচ্ছে: গভর্নর Staff Staff Reporter প্রকাশিত: ৩:৩৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৫ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, দেশের ব্যাংকিং খাত ধীরে ধীরে কঠিন সময় পার করে স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আস্থা বজায় রাখতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক একযোগে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে, যা একটি বড় অর্জন। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘ব্যাংকিং খাত সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। গভর্নর বলেন, ব্যাংকিং খাতে আস্থা পুরোপুরি ফেরানো সম্ভব না হলেও, অনেকাংশে তা ধরে রাখা হয়েছে। এই কঠিন সময়ে আস্থা রক্ষা করাটা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। তিনি আরও জানান, দেশের অর্থনীতিতে কোনো বড় ঝুঁকি নেই, বরং বৈদেশিক লেনদেনে বড় উদ্বৃত্ত এবং শক্তিশালী ব্যালান্স অব পেমেন্ট অবস্থা রয়েছে। রিজার্ভ গত এক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক স্বচ্ছ ও বাজারভিত্তিক পদ্ধতিতে ডলার ক্রয় করছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে না। বছরের শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ৩৪ থেকে ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা আইএমএফের অর্থ সাহায্য নিয়ে বা না নিয়েও অর্জন সম্ভব বলে তিনি উল্লেখ করেন। ব্যাংকিং খাতের সংস্কার এবং নানা চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তিনি বলেন, দুর্বল গভর্ন্যান্স, মূলধনের ঘাটতি এবং উচ্চ অঙ্কের খেলাপি ঋণের সমস্যা রয়েছে। প্রকৃত এনপিএল হার প্রায় ৩৬ শতাংশে পৌঁছেছে। এর জন্য তিনি আইনি ভিত্তিতে তথ্য গোপন না করে বাস্তব চিত্র প্রকাশের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ইতোমধ্যে ১৪টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে এবং দুর্বল ব্যাংকগুলোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। পাশাপাশি, সক্ষম ব্যাংকগুলো নিয়ম অনুসারে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং পাঁচটি ব্যাংকের একীভূতকরণ প্রক্রিয়াও শিগগিরই সম্পন্ন হবে। আমানতকারীদের সুবিধার জন্য ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স স্কিমের আওতায় সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকার দ্রুত পরিশোধের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যৎ দেখেভাবে ব্যাংক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যাবে তার জন্য রেগুলেশনের শক্তিশালী আইনি কাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা অপরিহার্য; একজন স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংকই কার্যকরী সংস্কার আনতে পারে। তিনি আরও জোর দেন, ব্যাংকিং খাতে কেবল ব্যাংকনির্ভর অর্থায়ন নয়, করপোরেট বন্ড মার্কেটের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের বিকল্প ব্যবস্থা বাড়ানো জরুরি। তিনি সতর্ক করে বলেন, এখনও পুরোপুরি সংকটমুক্ত নয় বাংলাদেশ, তবে সঠিক সংস্কার ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে ব্যাংকিংখাতকে সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। বিশেষ অতিথি হিসেবে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, আসন্ন নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা ও শক্তি বাড়ানোর জন্য স্পষ্ট পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতি করতে হবে। তিনি আরও বলেন, রাজনীতিবিদদের স্পষ্ট করতে হবে তারা কি আগে মতো ক্ষমতাশালী পুঁজিপতিদের হাতে ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রণ দিয়ে দেবেন, নাকি জনগণের কল্যাণ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য এই খাতকে ব্যবহার করবেন। অনুষ্ঠানে উপস্থাপকের পাশাপাশি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহمان বলেন, ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের দখলে ব্যাংকিংখাত ভঙ্গুর হয়ে পড়ে, যার কারণে খেলাপি ঋণের হার এখন ৩৬ শতাংশে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, বর্তমান সংস্কার অনেকটাই রাজনৈতিক দিক থেকে নির্ভরশীল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ এর সভাপতি দৌলত আক্তার মালা এবং সঞ্চালক ছিলেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম। SHARES অর্থনীতি বিষয়: