শহীদ মুনীর চৌধুরী: তার কলম ছিল শত্রুর বিরুদ্ধে একমাত্র অস্ত্র

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৩:৩০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৪, ২০২৫

আজ ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসররা নির্বিচারে হত্যা চালায়, যেখানে অন্যতম শিকার হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক ও নাট্যকার মুনীর চৌধুরী। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরুলেও বাবার স্মৃতি আজও বুকের মধ্যে অমলিনভাবে জ্বলজ্বল করছে। ছোট ছেলে আসিফ মুনীর তন্ময় তাঁর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিতে চোখ moist করে বলেন, বাবার আহতময় স্মৃতি তাঁর মনে এখনও অশ্রু ঝরিয়ে দেয়।

বাংলা নাট্যজগতের আধুনিকতার পথপ্রদর্শক মুনীর চৌধুরীর মূল অস্ত্র ছিল তাঁর কলম। লেখনী, নাটক ও সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়ের প্রতিবাদে সক্রিয় থাকেছিলেন। তন্ময় জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর যখন দেশ মুক্তির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল, তখন তিনি আশাবাদী ছিলেন। বিবিসি সংবাদ শুনে স্ত্রীকে বলেছিলেন, আর ভয় নেই, দেশ স্বাধীন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেই দিন দুপুর ১২টার সময় খাবার তৈরির সময় আল-বদর বাহিনীর একদল সদস্য সেন্ট্রাল রোডের বাড়িতে হানা দেয়। তারা বন্দুকের নল ঠেকিয়ে বাবাকে ধরে নিয়ে যায়, যা ছিল পরিবারের শেষ দেখার মুহূর্ত।

মুনীর চৌধুরী ১৯২৫ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কর্মজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ও বাংলা উভয় বিভাগে শিক্ষকতা করেছিলেন। ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় থাকার জন্য ১৯৫২ সালে তাকে কারাগারে যেতে হয়। এর আগে ১৯৪৮ সালে জিন্নাহর উর্দুকেই রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করার প্রতিবাদে ও ১৯৪৫ সালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের জন্য তিনি জেল খেটেছেন। রক্তাক্ত প্রান্তর ও কবরসহ তাঁর কালজয়ী সাহিত্যকর্মের কারণে তিনি তার প্রতিবাদী সত্তার জন্য পাকিস্তানি শাসকদের টার্গেটে পরিণত হন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা বুঝতে পেরে, ২৫ মার্চের কালরাত্রির পর তিনি পরিবারের নিরাপত্তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কোয়ার্টার ছেড়ে বাবার সেন্ট্রাল রোডের বাড়িতে আশ্রয় নেন, কিন্তু সেদিনও শেষ রক্ষা হয়নি। আসিফ মুনীর তন্ময় বলেন, সন্তান হিসেবে তারা বাবাকে পুরোপুরি চিনতে পারেননি, তবে হানাদাররা নিশ্চিতভাবে জানত যে মুনীর চৌধুরীর মতো বুদ্ধিজীবীরাই দেশের মূল শক্তি। তাদের মেধাশূণনী করতে, দেশের মুক্তির ঠিক আগ মুহূর্তে এই মহাতারাদের হত্যা করা হয়। এটি একদিকে শোকের, অন্যদিকে গৌরবের কালো অধ্যায়। তাই আজ আমরা স্মরণ করছি সেই শ্রেষ্ঠ বীরদের, যারা তাদের কলম ও জীবন দিয়ে বাংলার স্বাধীনতা ও মর্যাদার জন্য লড়াই করেছিলেন।