সংরক্ষণের মাধ্যমে রোকেয়ার স্মৃতিধন্য আঁতুড়ঘর ঘুরে দাঁড়ানোর পথ দেখাচ্ছে

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৩:৩১ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৯, ২০২৫

আজ বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্ম ও মৃত্যুর বার্ষিকী। এই মহীয়সী নারী বাংলাদেশের নারী মুক্তির অগ্রদূত, যার জন্ম ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে। তিনি মৃত্যুবরণ করেন ১৯৩২ সালের একই দিনে। নারীর অধিকার ও ভবিষ্যৎ নিয়ে তার আত্মোৎসর্গের এই পথিকৃৎকে শ্রদ্ধা জানাতে পায়রাবন্দে তার স্মৃতির স্পর্শে গেঁথে থাকা পৈতৃক ভিটায় আজ বিশেষ এক আয়োজনের আয়োজন করা হয়েছে।

এই দিনটি স্মরণে রাখতে সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবার দায়িত্ব নিয়েছে রোকেয়ার জন্মভিটা ও আঁতুড়ঘর সংরক্ষণের দায়িত্ব। মঙ্গলবার এখানে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যেখানে বাংলা একাডেমি এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে এই দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়। মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. শওকাত আলী বলেন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে রোকেয়ার আঁতুড়ঘরের সঠিক সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব হবে, যা রোকেয়ার জীবন ও কর্মের ওপর নতুন গবেষণার পথ খুলে দেবে। এতে দেশের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটক ও গবেষকরাও উপকৃত হবেন।

বেগম রোকেয়া নারী জাগরণের প্রথম দিকের পথপ্রদর্শক। তিনি তার ভাই ইব্রাহীমের সহায়তায় গভীর রাতে মোমের আলোয় অক্ষরজ্ঞান অর্জন করেন এবং সেই শিক্ষাই তাঁকে নারীর মুক্তির জন্য নিজেকে অপরাজেয় করে তুলেছিল। তার লেখা ‘সুলতানার স্বপ্ন’ আজও নারী স্বাধীনতার এক অসাধারণ দলিল হিসেবে পরিচিত। পায়রাবন্দের স্থানীয় গবেষক ও শিক্ষাবিদরা মনে করেন, এখান থেকেই নারী ক্ষমতায়নের সূচনা হয়েছিল এবং পায়রাবন্দকে নারী জাগরণের ‘আদর্শ গ্রাম’ হিসেবে ঘোষণা করা উচিত।

তবে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় মানুষরা রোকেয়ার জন্মস্থান অবহেলার শিকার বলে মনে করে থাকেন। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জীবনযাপন করেছেন রোকেয়া, কিন্তু আজও তার জন্মভিটা যথাযথভাবে সংরক্ষণের অভাবে লুকায়িত। এছাড়া রোকেয়ার দেহাবশেষ ভারতে থেকে ফিরে আনার দাবিও দীর্ঘদিনের। ১৯৩২ সালে কলকাতায় মৃত্যুর পরে তাকে কলকাতার সোদপুর পানিহাটিতে দাহ করা হয়। ২০০৯ সালে পায়রাবন্দের এক আলোচনা সভায় তার ভাইয়ের মেয়ের পক্ষ থেকে দেহাবশেষ ফিরিয়ে আনার দাবি উঠে, তবে এখন পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হয়নি। রোকেয়ার অনুরাগীদের ক্ষোভ, তার বাবার সম্পদ ও কবর থাকলেও তিনি নিজে এখন ভিনদেশে শোয়াচ্ছেন।

বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে রংপুর জেলা প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে, আজ সকালে রোকেয়ার আঁতুড়ঘরে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়াও চার দিনের ‘রোকেয়া মেলা’ আয়োজন করা হয়েছে। শীতের কুয়াশা ভেদ করে পায়রাবন্দে প্রতিবারের মতো আজ উড়ে উঠে রোকেয়ার স্মৃতির আলো, যা আগামী প্রজন্মের বাংলা দেশের স্বপ্ন ও স্বাভাবিক উন্নতির প্রতীক হিসেবে উদ্ভাসিত হতে চায়।