শ্যামনগরে শীতকালীন সুস্বাদু কুমড়ার বড়ির হাঁক

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৩:৪১ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৭, ২০২৫

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে শীতকালীন জনপ্রিয় একটি বিশেষ খাবার হলো কুমড়ার বড়ি। এই বড়ি সাধারণত তরকারির সঙ্গে রান্না করে খাওয়া হয় এবং এটি বহু পুরোনো ঐতিহ্যের অংশ। শীতের মৌসুম এলেই যেন এই জেলায় ধীরে ধীরে কুমড়ার বড়ি তৈরির ধুম ধরে যায়। বিশেষ করে শ্যামনগরের গৃহিণীরা এই সময়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেন বড়ি তৈরি করি, কারণ এই কাজটি তাদের জীবিকার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। গ্রামের অনেক বাড়িতে দেখা যায়, শীতের শুরুতে মাষকলাই ডাল এবং চালের সঙ্গে কুমড়ার বড়ি তৈরির ধারা চলতে থাকে। এটি শুধুই পরিবারের মধ্যে নয়, বরং পাড়াপড়শির মধ্যে থাকেও এই সুস্বাদু বড়ির চাহিদা। শীতের ভোররাতে মহিলারা একসঙ্গে দলবেঁধে বড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন। মূল প্রস্তুতি অবশ্য আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়, যাতে প্রস্তুত থাকেন এই বিশেষ খাবার। শ্যামনগরে এই বড়ির প্রস্তুতি অগ্রহায়ণ মাস থেকেই শুরু হয় এবং ফাল্গুন পর্যন্ত চলে দীর্ঘ এই মহোৎসব। অনেক পরিবারই নিজস্ব চেষ্টায় বা পাড়ার সবাই মিলে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। গৃহবধূ মিনারা পারভীন বললেন, গ্রাম বাংলায় প্রাচীনকাল থেকে এই কুমড়ার বড়ি তৈরির প্রক্রিয়া চলে আসছে। এই বড়ি তরকারিতে যোগ করে দিতেও ভিন্ন স্বাদ দেয় এবং পরিবারের পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনের জন্যও সংরক্ষণ করে রাখা হয়। বিশেষ করে শীতকালীন সময়টাই হলো বড়ির মৌসুম। মিনারা আরও জানান, ছোট থেকে দেখেছেন মা-চাচিরা কিভাবে ধীরে ধীরে এই বড়ি তৈরির কাজ করেন, তাদের হাতে তৈরি এই খাবারটি প্রাচীন কাল থেকেই মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন ডাল ও কুমড়া কুটার মেশিনের ব্যবহার বাড়ছে, ফলে কাজের ঝামেলা কমে গেছে। এখন পরিবারনিজের চাহিদা অনুযায়ী বড়ি তৈরি করে পরিবারে বা আত্মীয়স্বজনের জন্য সংগ্রহ করেন। পাশাপাশি রোজগার বাড়াতে অনেক গৃহিণী এই বড়ির ব্যবসায় ঝুঁকছে। তারা বাজারে বড়ি বিক্রি করেন, যেখানে কেজি প্রতি দাম দুশ থেকে তিনশ টাকা পর্যন্ত। এর ফলে এই পেশাটিও হয়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠিত উপার্জনের এক মাধ্যম। সামগ্রিকভাবে, এই কুমড়ার বড়ি শুধু চাষিদের জন্য নয়, এলাকার অর্থনীতিও সমৃদ্ধ করছে। সরকার যদি এই ঐতিহ্যবাহী খাবারটির উন্নয়নে সহায়তা করে, তাহলে স্থানীয় মহিলাদের জন্য আরও বেশি কর্মসংস্থান ও আয়ের সুযোগ তৈরি হবে বলেই মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল।