কুমিল্লার কৃষকদের খুশি আমন ধানের বাম্পার ফলনে

Staff Staff

Reporter

প্রকাশিত: ৩:৪০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৫, ২০২৫

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় এই মৌসুমে বাইশ, কুডি চিকুন, চৌত্রিশ, পাইজম এবং আমন জাতের ধানের ধান কাটা শুরু হয়েছে। এ সকল ধান চাষের ফলন হয়েছে আশাজনকভাবে ভালো, যা গ্রামাঞ্চলে উৎসাহের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। মাঠ-ঘাটে ধানের সোনালি ধারার জন্য কৃষকের স্বপ্ন সংগঠিত হয়েছে। কৃষকরা এখন ধান কাটার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন, পাশাপাশি একই জমিতে শীতকালীন শাক-সবজি আবাদ শুরু করেছেন। কৃষি বিভাগ তাদের জন্য সফলতা ও পরামর্শ দিয়ে থাকছে, যেন এই ফলন বৃদ্ধি পায় আরও।

জেলা কৃষিবিভাগের সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা সদর জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন অংশে – পাচথুবী, আমড়াতলী, দুর্গাপুর উত্তর-দক্ষিণ, কালিরবাজার, জগন্নাতপুরসহ – ধানের শোভা বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার মাটি এই সব ধান চাষের জন্য খুবই উপযোগী এবং স্বল্পমেয়াদি জাতের ধান চাষ দিয়েই কৃষকরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। একই সাথে দেবিদ্বার, চান্দিনা, দাউদকান্দি, বরুড়া, মুরাদনগর, বুড়িচং, মনোহরগঞ্জ, লাকসাম, মেঘনা, হোমনা, তিতাস, লাঙ্গলকোট, চৌদ্দগ্রাম, সদর দক্ষিণ ও লালমাই উপজেলাতেও বিস্তীর্ণ ক্ষেতের মধ্যে মোটা ধানের সোনালী ফসলের দৃশ্য চোখে পড়ার মত। এতে কৃষকদের মুখে খুশির হাসি ফুটে উঠেছে।

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কৃষকরা কিছু উদ্বেগও ব্যক্ত করেছেন। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশিদলের কৃষক তাজু মেম্বার ও তার ছেলে মাসুদ রানা অপু জানান, ইঁদুরের আক্রমণে তাদের সোনার ফসলের অর্ধেকেরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় শ্রমিকরা বলছেন, ধানের বাম্পার ফলন হলেও কিছু জমির ধান ইঁদুরের দ্বারা নষ্ট হয়েছে, তবে তারা আশাবাদী যে, গড় হিসেব অনুযায়ী কৃষি আয় ভালো হবে।

প্রতি একরে কৃষকরা প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ করে ধান চাষ করে থাকেন, যা থেকে তারা গড়ে চান্দের মতো ফলন পাচ্ছেন। এবার রোপা আমন, বাইশ, চৌত্রিশ, কুডি চিকুন ও পাইজম জাতের ধানের চাষ খুবই ফলপ্রসূ হয়েছে বলে কৃষকরা মনে করছেন।

জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন, বন্যা বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় এই মৌসুমে ধানের ফলন কেনার জন্য পর্যাপ্ত সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ধান কাটা কার্যক্রম এগিয়ে চলছে, বিভিন্ন জাতের ধান যেমন গ্রিধান-১০৩, রঞ্জিত, কুডি চিকুন, পাইজম ও চৌত্রিশের ফলন আশানুরূপ। প্রতি ৫ শতাংশ জমিতে গড়ে ৩ মণের মতো ধান সংগ্রহ হচ্ছে।

শশিদল ইউনিয়নের কৃষক তাজু মেম্বার, তার ছেলে অপু, আশরাফ মিয়া, ঈসমাইল, আবুল কাশেম, খালেক ও মানরার রেজাউল জানিয়েছেন, এ বছর তারা রোপা আমন, পাইজম, কুডি চিকুন ও চৌত্রিশ জাতের ধান চাষ করেছেন। এগুলো অন্যান্য জাতের তুলনায় প্রায় ১৫-২০ দিন আগে কাটা যায় এবং ফলনও তেমনই হয়েছে। প্রতি ৫ শতাংশ জমিতে প্রায় ৩ মণ ধান উঠছে।

হরিমঙ্গল এলাকার কৃষকরাও জানিয়েছেন, আগাম ধান কাটা শেষ করে তারা সরিষার বীজ বপন করেছেন।

জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, দেশটির খাদ্য সক্ষমতা নিশ্চিতকরণের স্বীকৃতি হিসেবে কুমিল্লা জেলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চলতি মৌসুমে জেলার আমনের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১,১৪,৮৩০ হেক্টর, যা আবাদ হয়েছে ১,১৪,৯৭৫ হেক্টর।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ বছর মোট ৭,৬৬০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী, ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় ফলন অনেক বেশি হয়েছে।

আরও জানানো হয়েছে, স্বল্পমেয়াদি ধানের আবাদ বেশি হওয়ায় ধান কাটার পরে কৃষকরা একই জমিতে সরিষা, আলু বা শাকসবজি লাগাতে পারছেন, যা তাদের ekstra আয় নিশ্চিত করছে এবং কৃষিতে বৈচিত্র্য আনে। এখনো আনন্দে ভাসছেন ব্রাহ্মণপাড়া এলাকার কৃষকরা।

আবহাওয়া, সময়মতো বৃষ্টি ও আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহারে ফলন বৃদ্ধির মূল কারণ বলে তারা মনে করছেন। গত বছরের বর্ষা ঘুরপথে জমিতে ধান আপত্তি ছিল না বলেও তারা জানান। এবার উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ার কারণে তারা নতুন আশায় বুক বাঁধছেন।

কৃষি বিভাগ বলছে, সার, বীজ ও পরামর্শের জন্য কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে ফলন অনেক বেশি। তবে কৃষকদের মূল দাবি হলো, উৎপাদনের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা। বাজারে যথাযথ দাম না পাওয়ায় কৃষি চাষে আগ্রহ কমে যেতে পারে এবং ঋণের বোঝা বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন।

অবশেষে, বিজয়পুর বাজারে নতুন ধান উঠতে শুরু করায় ধান ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরাও ছুটিতে লিপ্ত, ক্রয়-বিক্রয় জমজমাট পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যা ওই এলাকার অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।