মোংলা বন্দরের ৭৫তম প্লাটিনাম জয়ন্তী উদযাপন Staff Staff Reporter প্রকাশিত: ৩:৩৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩, ২০২৫ মোংলা বন্দরের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও প্লাটিনাম জয়ন্তী উপলক্ষ্যে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। অনুষ্ঠানটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মোংলা বন্দরকে কেন্দ্র করে বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপিত হয়। সোমবার এই বিশেষ দিনটি পালনের জন্য বন্দরে নানা আয়োজনের আয়োজন করা হয়, যার মধ্যে ছিল বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও সঙ্গীতানুষ্ঠান। উল্লেখ্য, গত রোববার রাত ১২টা ১ মিনিটে বন্দরে অবস্থানরত সব দেশি-বিদেশি জাহাজে বিরতিহীন হুইসেল বাজিয়ে ১ মিনিটের জন্য সূচনা করা হয় বিজয়োৎসবের। এরপর সোমবার দুপুর ১২টায় বন্দরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতিতে মহান এই আয়োজনটি আরও উৎসাহের সঙ্গে উদযাপিত হয়। সদর দপ্তর থেকে শুরু করে জেটি পর্যন্ত র্যালি এবং চারদিকে বেলুন ও কবুতর উড়িয়ে এর উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে মোংলা বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি বেলুন ও কবুতর উড়িয়ে এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে বন্দরের সম্মানিত সদস্যরা, বিভাগীয় প্রধান ও বন্দরের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বন্দরের স্বীকৃতি হিসেবে ১৩ জন কর্মচারীকে পুরস্কৃত ও সম্মাননা প্রদান করা হয়। বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে সম্মাননা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে, দেশের নানা প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার ২৯টি ক্যাটাগরিতে বিশেষ অবদান রাখায় প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সম্মাননা জানানো হয়। এর পাশাপাশি, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এই বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্দরে কর্মরত ৫৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, ১৯৫০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর এর গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে চালনা পোর্ট নামে এই বন্দরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮৭ সালে পোর্ট অব চালনা অথরিটি আইনের মাধ্যমে এটি চালু হয় এবং পরবর্তীতে মোংলা পোর্ট অথরিটি নামে পরিচিতি লাভ করে। অর্থনৈতিক দিক থেকে দেখলে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোংলা বন্দরের কার্গো লোডিং লক্ষ্য ছিল ৮৮ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে বন্দরে বাস্তবায়ন হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন কার্গো, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন বেশি। এছাড়া, কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার TEU, যা পূরণ করে মোট ২১ হাজার ৪৫৬ TEU হ্যান্ডলিং করা হয়। বন্দরটির রাজস্ব আয়ও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিকল্পিত লক্ষ্য ছিল ৩৩৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, কিন্তু বাস্তবে আয় হয়েছে ৩৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা, যা লক্ষ্য থেকে ৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বেশি। নিট মুনাফা তালিকায়ও দেখা যায় ব্যাপক উন্নতি, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ কোটি ৪৬ লাখ টাকার পরিবর্তে অর্জিত হয়েছে ৬২ কোটি ১০ লাখ টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ২০৩ শতাংশেরও বেশি। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং নিয়মিত ড্রেজিংয়ের ফলে এখন প্রতিটি জেটিতে একসঙ্গে পাঁচটির বেশি জাহাজ হ্যান্ডলিং সম্ভব হচ্ছে। বর্তমানে তিন মাসে আসার জাহাজের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩৫০টি, কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ১৩ হাজার ৮৫৪ TEU এবং বিভিন্ন পণ্য আমদানির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে মোংলা। আরও উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু প্রকল্প চালু ও পরিকল্পনা রয়েছে, যার অন্যতম হলো পোর্ট রিসিপশন ফ্যাসিলিটি (পিআরএফ), যা সম্পন্ন হলে নদী ও সমুদ্রের পরিবেশ রক্ষা ও তেল নিঃসরণ ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এই বন্দরটি এখন থেকে খাদ্যশস্য, কেমিক্যাল, ইंधন, মেশিনারিজ, বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পোর্টে পরিণত হয়েছে। দেশের দক্ষিণ-west অংশের অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক বহির্মুখী ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় মোংলা বন্দর এক নতুন অধ্যায় শুরু করছে। SHARES অর্থনীতি বিষয়: